বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হওয়া ঘূর্ণিঝড় ‘হামুন’-এর প্রভাবে টেকনাফ উপজেলায় গতকাল সোমবার দিবাগত রাত থেকে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি ও হালকা বাতাস বইছে। এমন অবস্থায় মঙ্গলবার (২৪ অক্টোবর) সকালে যেকোনও পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রস্তুতি সভায় বসেছে উপজেলা প্রশাসন।
এরই মধ্যে অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় হামুনের আগে সেন্টমার্টিন দ্বীপের মানুষদের নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যেতে মাইকিং করা হচ্ছে।
প্রস্তুতি সভার কথা উল্লেখ করে টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আদনান চৌধুরী বলেন, ‘প্রবল ঘূর্ণিঝড় “হামুন”-এর আগাম প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছি। আমরা ইতোমধ্যে সেন্টমার্টিন-শাহপরীর দ্বীপসহ সীমান্তের উপকূলীয় এলাকাগুলোতে মাইকিং করে মানুষদের নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যেতে বলেছি। পাশাপাশি পর্যাপ্ত শুকনো খাবারসহ ৬৪টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে।’
উত্তরপশ্চিম বঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থানরত প্রবল ঘূর্ণিঝড় হামুন উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে বর্তমানে একই এলাকায় অবস্থান করছে। এর প্রভাবে পায়রা ও চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরকে ৪ নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকেত নামিয়ে তার পরিবর্তে ৭ নম্বর বিপদসংকেত দেখানো হয়েছে।
আবহাওয়া অধিদফতরের সতর্কবার্তায় বলা হয়, হামুন এখন চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৪৪৫ কিলোমিটার পশ্চিম-দক্ষিণপশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৪১০ কিলোমিটার পশ্চিম-দক্ষিণপশ্চিমে, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ৩২৫ কিলোমিটার দক্ষিণপশ্চিমে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ৩১০ কিলোমিটার দক্ষিণপশ্চিমে অবস্থান করছে। এটি আরও উত্তর-উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে আগামীকাল (২৫ অক্টোবর) সকাল থেকে দুপুর নাগাদ ভোলার পাশ দিয়ে বরিশাল-চট্টগ্রাম উপকূল ঘূর্ণিঝড় হিসেবে অতিক্রম করতে পারে।
এদিকে, কক্সবাজার টেকনাফের সেন্টমার্টিন দ্বীপ ভ্রমণে যাওয়া পর্যটকদের বৈরী আবহাওয়ার কারণে গতকাল সোমবার বেলা ৩টার মধ্যে দ্বীপ ত্যাগ করতে উপজেলা প্রশাসন নির্দেশনা দিলেও তবু প্রায় তিনশ পর্যটক সেখানে অবস্থান করছেন।
জানতে চাইলে সেন্টমার্টিন বিচকর্মী মো. জয়নাল বলেন ‘দ্বীপে থেকে যাওয়া পর্যটকরা সকাল থেকে সৈকতে গোসলে নামে। আবার অনেকে জেটি ঘাটসহ সৈকতে ঘুরাঘুরি করে। তাদের আমরা মাইকিং করে নিরাপদে থাকতে বলেছি। এ ছাড়া স্থানীয়দেরও নিরাপদ জায়গায় থাকতে বলা হয়েছে।’
দ্বীপের বাসিন্দা আব্দুর রহিম বলেন, ‘সকাল থেকে থেমে ঝোড়ো হাওয়া শুরু হয়েছে। বৃষ্টি কমে গেলেও প্রচণ্ড বাতাসে গাছপালা ভেঙে পড়ছে। এখন ভাটা রয়েছে, জোয়ার আসলে ভয়ও বাড়বে আমাদের। দ্বীপে অনেক পর্যটক রয়েছে তাদের কী অবস্থা হবে।’
এ প্রসঙ্গে সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান বলেন, ‘দ্বীপে থেকে যাওয়া পর্যটকসহ স্থানীয় মানুষদের নিরাপদ জায়গায় থাকতে সকাল থেকে দ্বীপে মাইকিং করা হচ্ছে। তা ছাড়া আমরা এর আগেও বিভিন্ন ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলা করেছি। এবারও আমরা সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছি। শুকনো খাবার প্রস্তুত রাখা হয়েছে। আমাদের এখানে ১০ হাজারের মতো লোক আছেন। তাদের সবাইকে নিরাপদে রাখার মতো অবস্থা আছে।’