টমটম চালক‌দের ড্রাইভিং লাইসেন্স দেন পৌর কর আদায়কারী
বাংলাদেশ

টমটম চালক‌দের ড্রাইভিং লাইসেন্স দেন পৌর কর আদায়কারী

বান্দরবা‌নে একযু‌গেরও বে‌শি সময় ধ‌রে চলাচল কর‌ছে ৩ শ’র বে‌শি টমটম বা ব্যাটারিচা‌লিত ইজিবাইক। অথচ বাংলাদেশ রোড ট্রান্স‌পোর্ট অথ‌রি‌টির (বিআর‌টিএ) কোনও কর্মকর্তা বা কর্মচারী না হওয়া সত্ত্বেও এসব ব্যাটারিচা‌লিত ইজিবাইকের চালকদের বৈধতা দি‌তে প্রতি চালককে ড্রাইভিং লাইসেন্স দি‌য়ে‌ছেন বান্দরবান পৌরসভার সহকারী কর আদায়কারী দোদুল চক্রবর্তী। এ বিষ‌য়ে অবগতও নয় ‌বাংলা‌দেশ রোড ট্রান্স‌পোর্ট অথ‌রি‌টি (বিআর‌টিএ) কর্তৃপক্ষ।  মোটা অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে অবৈধভাবে ইজিবাইকের (টমটম) দক্ষ-অদক্ষ সকল চালককে কোনও পরীক্ষা ছাড়াই ড্রাইভিং লাইসেন্স দিচ্ছেন দোদুল। লাইসেন্সের কাগজে ব্যবহার করা হচ্ছে সাবেক মেয়‌রের ক‌ম্পিউটা‌রে বানা‌নো স্বাক্ষরের জাল সিল। লাইসে‌ন্সের এক পা‌শে নিজ হা‌তে স্বাক্ষরও দি‌চ্ছেন দোদুল। অর্থের বিনিময়ে মাত্র এক‌দি‌নের মধ্যে যে কেউই নি‌তে পার‌ছেন দোদুল চক্রবর্তীর দেওয়া ড্রাইভিং লাইসেন্স। অদক্ষ চালক ও নিয়ন্ত্রণহীন চলাচলের কারণে বান্দরবা‌নের সড়‌কে বাড়ছে ব্যাটারিচা‌লিত ইজিবাইক দুর্ঘটনা।

খোঁজ নি‌য়ে জানা গে‌ছে, ৩ থে‌কে সা‌ড়ে ৩ হাজার টাকা দি‌লে সহ‌জেই ১ ‌থে‌কে ২‌ দি‌নের ম‌ধ্যে যে কেউ ১ বছ‌র মেয়া‌দে নি‌তে পা‌রেন ব্যাটারিচা‌লিত ইজিবাইকের (টমটম) ড্রাইভিং লাইসেন্স। আর প্রতিবছর নবায়ন কর‌তে লা‌গে আরও ২ থে‌কে আড়াই হাজার টাকা। নবায়ন কর‌তে নির্ধারিত তারিখের চে‌য়ে এক‌দিন দে‌রি হ‌লেই ড্রাইভিং লাইসেন্স বা‌তিল হয়ে যায়। তখন আবার নতুন ক‌রে ড্রাইভিং লাইসেন্স সংগ্রহ কর‌তে হয় চালক‌কে। এসব অনিয়ম ক‌রে বান্দরবান পৌরসভার সহকারী কর আদায়কারী  দোদুল চক্রবর্তী বনে গে‌ছেন কো‌টি টাকার মা‌লিক। শহ‌রের বনরুপাপাড়ায় রয়েছে মল্লিক ভবন নামে বহুতল ভবন। এছাড়া নোয়াপাড়াসহ বিভিন্ন স্থা‌নে র‌য়ে‌ছে কো‌টি টাকার সম্পদ ও নগদ টাকা।

বান্দরবান পৌরসভার ক‌য়েকজন কর্মচারী ব‌লেন, পৌরসভার সহকারী কর আদায়কারী  দোদুল চক্রবর্তী তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী। নি‌জের আসল দায়িত্ব পালন না ক‌রে কৌশ‌লে ব্যাটারিচা‌লিত ইজিবাইকের দায়িত্ব নি‌য়ে আজ সে কো‌টিপ‌তি। তার কারণে আজ ব্যাটারিচা‌লিত ইজিবাইক নিয়ন্ত্রণহীন। এগুলোর বেপরোয়া গতি ও চলাচলের কারণে প্রতিদিনই সড়কে দুর্ঘটনা বাড়ছে। এসব ড্রাইভিং লাইসেন্স বা‌তিল ক‌রে তার ক‌ঠিন শা‌স্তির দা‌বি জানান কর্মচারীরা।

ব্যাটারিচা‌লিত ইজিবাইক চালক‌দের ম‌তে, ইতোম‌ধ্যে পৌরসভার ড্রাইভিং লাইসেন্স নি‌য়ে ব্যাটারিচা‌লিত ইজিবাইকের ড্রাইভার হ‌য়ে‌ছে ১ হাজা‌রেরও বে‌শি চালক। এসব ড্রাইভিং লাইসে‌ন্সে র‌য়ে‌ছে বান্দরবান পৌরসভার সহকারী কর আদায়কারী দোদুল চক্রবর্তীর স্বাক্ষর। বিষয়‌টি সম্পর্কে জা‌নেন না সা‌বেক মেয়র মো. শামসুল ইসলাম ও বর্তমান পৌর প্রশাসক মো. জা‌হিদ ইকবাল।

ড্রা‌ইভিং লাইসে‌ন্সে দেখা গে‌ছে, সা‌বেক মেয়‌রের স্বাক্ষরের সিল ও অপর পা‌শে দোদু‌লের স্বাক্ষর। ১০০ টাকা মূল্য লেখা থাক‌লেও এ ড্রাইভিং লাইসে‌ন্স পেতে ১ বছ‌রের জন‌্য প্রতিজন থে‌কে নেওয়া হয় ৩ ‌থে‌কে সা‌ড়ে ৩ হাজার টাকা।

পৌরসভার এক কর্মচারী জানান, ব্যাটারিচা‌লিত অটোরিকশার লাইসেন্স শাখায় দা‌য়িত্ব নেওয়ার পর থে‌কে আলাদি‌নের চেরাগ চ‌লে এসে‌ছে তার হা‌তে। ছ‌লেব‌লে তি‌নি এ দা‌য়িত্ব পালন কর‌ছেন প্রায় ১২ বছ‌রের উপ‌রে।

একজন টমটম চালকের লাইসেন্স বই বান্দরবা‌ন পৌর এলাকার ৬ নম্বর ওয়া‌র্ডের জাহাঙ্গীর আলম জানান, সহকারী কর আদায়কারীর বান্দরবা‌নে র‌য়ে‌ছে বহুতল ভবন। একবছর আগে জাঁকজমকভা‌বে শহ‌রের না‌মি হো‌টেল হিল‌ভিউতে প্রায় অর্ধকো‌টি টাকা খরচ করে মে‌য়ের বি‌য়ে দি‌য়ে‌ছেন। এমন ঝাঁকজমকভা‌বে বি‌য়ে অনেক বড় কর্মকর্তা বা প্রভাবশালীরাও দি‌তে পা‌রেন না।

দিদার খান না‌মে এক ব্যাটারিচা‌লিত ইজিবাইক চালক ব‌লেন, ড্রাইভিং লাইসেন্স করার জন‌্য আমার কাছ থে‌কে সাড়ে ৩ হাজার টাকা নিয়েছে। সে এমনভা‌বে প্রশাসন‌কে ম্যা‌নেজ ক‌রে‌ছে, তার স্বাক্ষর করা লাইসেন্স না থাক‌লে রাস্তায় ইজিবাইকও চালা‌নো যায় না। এ লাইসেন্স দেখা মাত্র ট্রা‌ফিক পু‌লিশও স‌রে দাঁড়ায়।

এ বিষ‌য়ে দোদুল চক্রবর্তী জানান, আমি আমার কা‌জে খুবই সচেতন। কখ‌নও কোনও ধর‌নের দুর্নীতি করি‌নি। দুর্নীতি না কর‌লেও ভগবা‌নের কৃপায় অনেক ভালো আছি। অফিস টাইমের প‌রে আমি ধর্মকর্ম ক‌রে দিন কাটাই। আমার ব্যাটারিচা‌লিত অ‌টো‌রিকশার চালকের টাকা দি‌য়ে কিংবা অন‌্য কোনও অবৈধ পথে চলার প্রয়োজন নেই।

পৌরসভায় ড্রাইভিং লাইসেন্স দেওয়ার ব্যাপারে কিছুই জা‌নেন না ব‌লে জানা‌লেন সা‌বেক পৌর মেয়র মো. শামসুল ইসলাম। তি‌নি ব‌লেন, আমার সম‌য়ে আমি কাউকে ড্রাইভিং লাইসেন্স দেইনি। এ ব্যাপারে আমি কিছুই জা‌নি না।

বান্দরবান বিআর‌টিএর সহকারী মোটরযান প‌রিদর্শক আরিফুল ইসলাম জানান, যে‌কোনও যানবাহনের ড্রাইভিং লাইসেন্স দেওয়ার এখ‌তিয়ার একমাত্র বিআর‌টিএর। ইচ্ছে কর‌লে ব্যাটারিচা‌লিত ইজিবাইক চালকরা ৩ চাকার মোটরযা‌নের ড্রাইভিং লাইসেন্স নি‌তে পা‌রে। এতে সরকার রাজস্বও পা‌বে। বর্তমা‌নে পৌরসভার দেওয়া ড্রাইভিং লাইসে‌ন্সের ১ টাকা‌ও সরকার পা‌চ্ছে ব‌লে আমার ম‌নে হয় না।

বান্দরবান বিআর‌টিএর মোটরযান প‌রিদর্শক মো. মামুনুর র‌শিদ ব‌লেন, ব্যাটারিচা‌লিত ইজিবাইক মূলত অবৈধ। তাই অবৈধযা‌নের ড্রাইভিং লাইসেন্স আমা‌দের থে‌কে নি‌তে চায় না। তারপরও সবার উচিত নিয়ম মে‌নে বিআর‌টিএর লাইসেন্স সংগ্রহ করা। পৌর কর্তৃপ‌ক্ষেরও উচিত সকল চালক‌দের আমা‌দের কা‌ছে পা‌ঠি‌য়ে দেওয়া।

এ বিষ‌য়ে বান্দরবান পৌরসভার প্রশাসক মো. জা‌হিদ ইকবাল ব‌লেন, আমি বিষয়‌টি জানলাম। এ বিষ‌য়ে আমি খোঁজ নেবো।

Source link

Related posts

নদীতে ভেসে আসা লাশের পরিচয় মিলেছে

News Desk

ক্যাম্পে ক্যাম্পে রোহিঙ্গাদের ‘গো হোম’ সমাবেশ

News Desk

মুহুরি নদীর বাঁধে তিন স্থানে ভাঙন, ১১ গ্রাম প্লাবিত

News Desk

Leave a Comment