কুমিল্লা জেনারেল (সদর) হাসপাতাল থেকে এক নবজাতক চুরির তিন দিন পার হলেও তাকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। রবিবার (১৩ আগস্ট) সকাল ১০টায় সদর হাসপাতালের টিকিট কাউন্টারের সামনে এই ঘটনা ঘটে। এদিকে, সন্তান হারানোর শোকে ভেঙে পড়েছেন মা-বাবাসহ স্বজনরা। এই ঘটনায় আতঙ্ক বিরাজ করছে ওই হাসপাতালের অন্য শিশু ও নবজাতকদের স্বজনদের মাঝে।
অনেকেই হাসপাতালে নবজাতক চুরির ঘটনা জানার পর বাড়ি থেকে অতিরিক্ত আত্মীয়স্বজন এনেছেন। তারা নবজাতকের নিরাপত্তার জন্য হাসপাতালে অবস্থান করছেন বলে জানান। এ ছাড়াও অনেকে শিফট করে হাসপাতালে নবজাতকের সঙ্গে থাকছেন। কেউ কেউ নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন।
কুমিল্লার লালমাই থেকে আসা প্রবাসী ওমর ফারুক সন্তানের সঙ্গে হাসপাতালে বসে আছেন। গাইনি ওয়ার্ডের নিচতলার দুই নম্বর রুমে আছেন তার স্ত্রী-সন্তান। তিনি জানিয়েছেন, হাসপাতালে আসার পর চুরির ঘটনা জানতে পারেন। এরপর থেকে বাড়তি সতর্কতা তাদের মধ্যে। কাজ বাদ দিয়ে তিনি রাত ১০টা পর্যন্ত নবজাতকের সঙ্গে থাকছেন। এরপর তিনি হাসপাতালের পাশে এক বন্ধুর বাসায় অবস্থান করছেন। ভোরে আবার হাসপাতালে চলে আসেন।
চুরি হওয়া নবজাতক ওমর ফারুকদের পাশের বেডেই ছিলেন। এ ঘটনায় তাদের মাঝে ভয়ের সঞ্চার হয়েছে বলে তিনি জানান। রাত ১০টার পর সেখানে তার স্ত্রীর সঙ্গে থাকেন তার অন্য আত্মীয়রা।
সাত জন আত্মীয় নিয়ে এসেছেন কুমিল্লা সদরের কালিরবাজার ইউনিয়নের মোহাম্মদ রাব্বি। পালাক্রমে তারা তিন দিন ধরে নবজাতকের পাহারায় ব্যস্ত। তিনি জানান, হাসপাতালের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ব্যবস্থা ভালো। তবে ভয় ছাড়ছে না। তাই তিনি ও তার স্বজনরা ব্যক্তিগতভাবেও পাহারা দিচ্ছেন। হাসপাতাল থেকেও বাড়তি সতর্কতার কথা বলা হয়েছে। তাই রাতে দরজা বন্ধ করেই ঘুমান তারা।
১৩ আগস্ট চুরি হওয়া নবজাতক কুমিল্লা সদর উপজেলার বারোপাড়া এলাকার জসিম উদ্দিন ও আয়েশা বেগম দম্পতির সন্তান। ওই নবজাতকের বয়স আজ সাত দিন। ওই নবজাতক হাসপাতালেই জন্ম নেয় এবং হাসপাতালের গাইনি ওয়ার্ডে ভর্তি ছিল।
চুরি হওয়া নবজাতকের বাবা জসিম বুধবার বলেন, ‘সোমবার আমরা হাসপাতাল থেকে চলে এসেছি। এরপর থেকে আমার স্ত্রী আরও বেশি ভেঙে পড়েছেন। সে এখনও আমার বাবুর কাঁথা জড়িয়ে ধরে কাঁদছে। তার কান্না আটকাতে পারছি না। ঠিকমতো খাবারও খাচ্ছে না।’
তিনি হাসপাতালের নিরাপত্তার বিষয়ে বলেন, ‘হাসপাতালের অনেক সিসি ক্যামেরা নষ্ট। হাজার হাজার মানুষের ভিড়ে কত অপরাধ হয়। সিসি ক্যামেরা সচল না থাকায় অনেক ঘটনাই আড়ালে থাকে। আমার হারিয়েছে, আমি বুঝি এটার কষ্ট। অন্য কোনও বাবা-মা যেন এমন কষ্ট না পান।’
কুমিল্লা জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার আব্দুল করিম খন্দকার বলেন, ‘স্বজনদের হাত থেকে শিশু চুরি হয়েছে। এটি স্বজনদের বিষয়। এখানে আমাদের কী করার! এ ঘটনার পর থেকে আমরা হাসপাতালে বাড়তি সতর্কতা জারি করেছি।’
সিসিটিভি সচল না থাকার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের অনেক বড় ক্যাম্পাস। এটি চলমান প্রক্রিয়া। আর যেন এমন ঘটনা না ঘটে সেজন্য রোগীদের সতর্ক থাকতে বলা হচ্ছে।’
কুমিল্লার পুলিশ সুপার আব্দুল মান্নান বলেন, ‘চুরির পর থেকে এ ঘটনায় কাজ করছে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ ও জেলা পুলিশের একাধিক টিম। আমরা সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করেছি। যা যা করা দরকার জেলা পুলিশ করছে। আশা করছি শিগগিরই সুফল পাওয়া যাবে।’
উল্লেখ্য, কুমিল্লা জেনারেল হাসপাতাল থেকে ১৩ আগস্ট চুরি হয় কুমিল্লা সদর উপজেলার বারোপাড়া এলাকার জসিম উদ্দিন ও আয়েশা বেগম দম্পতির নবজাতক সন্তান। চিকিৎসক দেখানোর জন্য জসিমের শাশুড়ি টিকিট কাউন্টারে আসেন। সেখানে একজন নারী তাকে টিকিট কেটে দেওয়ার কথা বলে নবজাতককে কোলে নিয়ে পালিয়ে যায়।