গাজীপুরের তুলা উন্নয়ন বোর্ডের বীজ বর্ধন খামারের ভেতরের অর্ধশতাধিক শতবর্ষী গাছ কেটে ফেলা হচ্ছে। এ নিয়ে জেলার পরিবেশবাদীদের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। বৃহস্পতিবার (৩১ অক্টোবর) সারাদিনে ১৩-১৪টি গাছ কেটে ফেলা হয়েছে।
বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, গাজীপুর সদর উপজেলার উত্তর পাশে ভবানীপুর মৌজার তুলা উন্নয়ন বোর্ডের বীজ বর্ধন খামারের ভেতরের কিছু জমি বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটকে (বিনা) বরাদ্দ দিয়েছে কৃষি মন্ত্রণালয়। প্রতিষ্ঠানটি সেখানে গামা রেডিয়েশন, এক্সপেরিমেন্টাল সেন্টার স্থাপন করবে। এজন্য তাদের বরাদ্দ জমির ভেতরে থাকা ৫৪টি শতবর্ষী গাছ কেটে ফেলছে।
বিনার কর্মকর্তা ফরিদ মিয়া বলেন, ‘তুলা উন্নয়ন বোর্ডের জমিটি আমরা কৃষি মন্ত্রণালয়ের কাছ থেকে বরাদ্দ নিয়েছি। বিনার আঞ্চলিক গবেষণা কেন্দ্র স্থাপন করা হবে। বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নে এটি বাস্তবায়িত হবে। বিদেশে যেসব কৃষিজাত পচনশীল পণ্য রফতানি করা হয়, সেসব পণ্য এখানে গামা রেডিয়েশন দিয়ে বিদেশে রফতানি করা হবে। এ কেন্দ্র স্থাপনের জন্য সীমানার ভেতরের ৫৪টি বিভিন্ন প্রজাতির গাছ কেটে ফেলার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ জন্য বন বিভাগের বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ থেকে অনুমতি নেওয়া হয়েছে।’
বিনা সূত্রে জানা গেছে, গাজীপুরের ভবানীপুরে বিনা আঞ্চলিক গামা গবেষণা কেন্দ্রের মাঠের চতুর্দিকে থাকা ৪১টি কাঁঠালগাছ, ৯টি আমগাছ, একটি শিমুলগাছ, ৩টি তালগাছ সহ ৫৪টি শতবর্ষী গাছ কেটে ফেলার জন্য তারা গত ১৬ অক্টোবর গাছ বিক্রয় নিলাম বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। পরে ভান্ডার কর্মকর্তা ও নিলাম কমিটির সদস্যসচিব সাইফুল ইসলাম গাছ কাটার জন্য কার্যাদেশ দেন। কার্যাদেশ পাওয়ার পর বৃহস্পতিবার সকাল থেকে গাছ কাটা শুরু হয়। পরিবেশবাদীদের আপত্তি উপেক্ষা করে সারাদিনে ১৩-১৪টি গাছ কেটে ফেলা হয়।
শ্রীপুর উপজেলা নদী পরিব্রাজক দলের যুগ্ম সম্পাদক খোরশেদ আলম বলেন, ‘আমরা অনেক চেষ্টা করেছি, যেন গাছগুলো না কাটা হয়। কিন্তু কেউ আমাদের কথা শুনতে চায় না। গাজীপুরের বনভূমি উজাড় হচ্ছে বিভিন্ন ব্যক্তির দ্বারা, আর এখানে গাছ কাটা হচ্ছে, সরকারি প্রতিষ্ঠান দ্বারা।’
গাছ কাটার বিষয়ে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন গাজীপুরের সাধারণ সম্পাদক হাসান খান বলেন, ‘পুরনো গাছগুলো কেটে ফেলা হচ্ছে, যা খুবই পীড়াদায়ক। গাছগুলো না কেটে কীভাবে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা যায়, সেদিকে কর্তৃপক্ষের নজর দেওয়া প্রয়োজন।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি যতটুকু জানি, গাছ কাটার একটি পদ্ধতি রয়েছে। বিভাগীয় কমিশনার সভাপতি এবং বিভাগীয় বন কর্মকর্তা সদস্যসচিব হিসেবে একটি কমিটি আছে। সেই কমিটির অনুমোদন সাপেক্ষে গাছকাটার অনুমতি দেওয়া হয়। এ কমিটি কীভাবে অনুমতি দিলো তা বোধগম্য নয়।’
বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ, গাজীপুরের সহকারী বন সংরক্ষক মোজাম্মেল হোসেন বলেন, ‘এটি কৃষি মন্ত্রণালয়ের অগ্রাধিকার প্রকল্প। তাই আমরা ৫৪টি গাছ কাটার অনুমতি দিয়েছি।’
বিনার গামা রেডিয়েশন, এক্সপেরিমেন্টাল অফিসার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, ‘সরকারের অতি গুরুত্বপূর্ণ এ প্রকল্প স্থাপনের জন্য আমরা ২২ দশমিক ৫ একর জমি বরাদ্দ নিয়েছি। তার মধ্যে ৩ একর জমির মধ্যে গামা রেডিয়েশন সেন্টার এবং বাকি জমিতে গবেষণা কেন্দ্র স্থাপন করা হবে। এখানে রেডিয়েশন নিয়ে কাজ করা হবে। এজন্য এটি সংরক্ষিত এলাকা হবে। এখান থেকে কৃষিজাত পণ্য যেমন আলুতে একবার রেডিয়েশন দিলে ৫-৬ মাস নষ্ট হবে না। গাছগুলো না কেটে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন সম্ভব হচ্ছিল না। এ জন্য সব নিয়মে মেনে গাছগুলো কাটা হচ্ছে।’