সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জ উপজেলায় কবরস্থানের ভেতর টিনের ঘর তুলে দেড় বছর ধরে বসবাস করছে তিনটি পরিবার। জায়গা-জমি না থাকায় আতঙ্কে সন্তান নিয়ে সেখানে বাস করছেন তারা।
স্থানীয়রা জানায়, পৌর এলাকার লক্ষ্মীখোলার ফুলকুচি কবরস্থানে দীর্ঘদিন ধরে কোনও সংস্কার নেই। গাছ আর জঙ্গলে ভরে গেছে। আশপাশে বেশ কয়েকটি নতুন কবরস্থান হওয়ায় ফুলকুচি কবরস্থানে এখন কোনও মরদেহ দাফন করা হচ্ছে না। হাসিনুর ইসলাম, ফরিদুল ইসলাম ও হযরত আলী প্রায় দেড় বছর ধরে কবরস্থানের ভেতর বাড়ি বানিয়ে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে বসবাস করছেন। কবরস্থানের আশপাশেও ৬-৭টি পরিবার বসবাস করছে।
হযরত আলীর স্ত্রী বেলী খাতুন বলেন, ‘কবরস্থানের পাশে সরকারি খাস জায়গায় আমরাসহ প্রায় ৪০টি পরিবার ১২ বছর ধরে বসবাস করেছি। খাস জায়গা সরকারের প্রয়োজন হওয়ায় প্রায় দেড় বছর আগে আমাদের উচ্ছেদ করা হয়। অন্যান্য পরিবারগুলোর জায়গা জমি থাকায় তারা অনেকে এখান থেকে চলে যায়। কিন্তু আমাদের কয়েকটি পরিবারের কোনও জমিজমা কিংবা ভিটেমাটি না থাকায় টিনের ঘর তুলে কোনোরকমে জীবনযাপন করছি।’
ফরিদুল ইসলামের স্ত্রী মুর্শিদা খাতুন বলেন, ‘মানুষ মরে গেলে তাকে রাখা হয় কবর স্থানে। আর আমরা বেঁচে থেকেও কবরস্থানে পোকামাকড়, শেয়াল-কুকুরের আতঙ্ক নিয়ে বসবাস করছি। আমাদের ঘরে নেই বিদ্যুৎ, নেই পান করার মতো নিরাপদ পানির ব্যবস্থা। স্বামী দিনমজুরির কাজ করে সংসার চালায়। ঘরবাড়ি ভেঙে দেওয়ার পর কবরের পাশে ঘুমাতে হচ্ছে। ছেলেমেয়েরা ভয় পায়। সরকারি অনেক খাস জমি থাকলেও আমাদের ভাগ্যে কিছুই জোটেনি। সরকারের কাছে অনুরোধ করছি যেন আমাদের একটু মাথা গোজার ঠাঁই করে দেয়।’
রায়গঞ্জ উপজেলার লক্ষ্মীখোলার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিল রায়হান হোসেন বলেন, ‘যে জায়গা থেকে তাদের উচ্ছেদ করা হয়েছে, সেটা সরকারি খাস জমি। স্থানীয় মজিদ নামের এক ব্যক্তি ওই জায়গাটি লিজ নিয়েছেন। দীর্ঘদিন ধরে এই জায়গা নিয়ে মামলাও চলেছে। আদালত থেকে মজিদের পক্ষে রায় আসায় তিনি প্রশাসনের সহযোগিতায় তাদের উচ্ছেদ করে দেন। তবে করবস্থানে যে তিনটি পরিবার রয়েছে তাদের কথা আমরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে অবগত করেছি। খুব দ্রুত তাদের জন্য ঘরের ব্যবস্থা করা হবে।’
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তৃপ্তি কণা মন্ডল বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সরকারি খাস জায়গা অবৈধভাবে দখল দিয়ে বসবাস করায় তাদের উচ্ছেদ করা হয়েছে। বর্তমানে তারা কবরস্থানের পাশে খাস জায়গায় বসবাস করছেন। তবে কবরস্থানে কেউ বসবাস করছে না। এর পাশে খাস জায়গায় তারা টিন দিয়ে ঘর তুলে বসবাস করছেন। দ্রুত তাদের জন্য সরকারি ঘরের ব্যবস্থা করা হবে।’
জেলা প্রশাসক ডা. ফারুক আহম্মেদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বিষয়টি আমার জানা নেই। রায়গঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার মাধ্যমে বিষয়টি তদন্ত করে দেখবো।’