নদী পারে ‘সিস্টেম করতে’ দৌলতদিয়া ঘাটে কর্মচারী নিয়োগ
বাংলাদেশ

নদী পারে ‘সিস্টেম করতে’ দৌলতদিয়া ঘাটে কর্মচারী নিয়োগ

মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া ও রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া ফেরিঘাট দিয়ে নির্বিঘ্নে পদ্মা পাড়ি দেওয়ার কথা চিন্তাও করতে পারেন না চালক ও যাত্রীরা। নদী পারে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয়। যাত্রীবাহী বাস, কাভার্ডভ্যান, পণ্যবাহী ট্রাক, লরি, অ্যাম্বুলেন্স, প্রাইভেটকার ও মাইক্রোবাসের চালকরা ট্রাফিক আইনের তোয়াক্কাও করে না। যে যেভাবে পারে ফেরি পারের চেষ্টা চালায়। এমনকি আগে নদী পারে ‘সিস্টেম করতে’ দৌলতদিয়া ঘাটে রয়েছে বেশ কয়েকটি পরিবহন ও কুরিয়ার সার্ভিসের বেতনভুক্ত কর্মচারী।

রাজবাড়ী ট্রাফিক পুলিশ পরিদর্শক ইন্সেপেক্টর (টিআই) তারক পাল জানান, দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌপথ দিয়ে যেসব যানবাহন ফেরিতে নদী পার হয়, সেগুলো তিন ক্যাটাগরিতে ফেরিতে ওঠানামা করে। এর মধ্যে অ্যাম্বুলেন্স, লাশবাহী গাড়ি, প্রাইভেটকার-মাইক্রোবাসের কোনও সিরিয়াল নেই। দৌলতদিয়া ঘাটে আসলে ফেরিতে উঠার জন্য ডান পাশ ব্যবহার করে চলে যায় এই যানবাহনগুলো। তবে অ্যাম্বুলেন্স, লাশবাহী গাড়ি, প্রাইভেটকার-মাইক্রোবাস বেশি হলে বিশেষ সিরিয়াল দেওয়া হয়। যাত্রীবাহী বাস, পচনশীল পণ্যের ট্রাক, লরি ও কাভার্ডভ্যানের জন্য নির্ধারিত একটি সিরিয়াল রয়েছে এবং অপচনশীল পণ্যের ট্রাক, কাভার্ডভ্যান ও কুরিয়ার সার্ভিসের গাড়ির জন্য একটি সিরিয়াল দেওয়া হয়।

আরও পড়ুন: ৪ কারণে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া ঘাটে নিয়মিত দীর্ঘ যানজট

তিনি আরও জানান, ট্রাফিকের এমন আইন বাস্তবায়ন করার জন্য দৌলতদিয়া ট্রাফিক পুলিশ কন্ট্রোল রুমের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে একাধিক সিসিটিভি ক্যামেরা। একজন ট্রাফিক ইন্সপেক্টর (টিআই), দুই জন সার্জেন্ট ও দুই জন কনস্টেবল প্রতি ২৪ ঘণ্টা দায়িত্ব পালন করেন। ক্ষেত্রবিশেষে দায়িত্বরত পুলিশের সংখ্যা কমানো ও বাড়ানো হয়। বেশিরভাগ সময় দৌলতদিয়া ঘাটের সিসি ক্যামেরাগুলো ধুলাবালির কারণে মাঝে মাঝে বন্ধ হয়ে যায়। ক্যামেরাগুলো সব সময় সচল রাখতে পারলে এবং হাই রেজুলেশন করতে পারলে অনেক কাজে আসবে।  

 

দৌলতদিয়া ফেরিঘাট এলাকা ঘুরে দেখা যায়, দৌলতদিয়া ট্রাফিক কট্রোল রুম থেকে মহাসড়কে চার কিলোমিটার সড়কে রাস্তা ৪ লেন রয়েছে। দৌলতদিয়া ট্রাফিক পুলিশ কট্রোল রুম থেকে ফেরিঘাটের সংযোগ সড়ক পর্যন্ত এক কিলোমিটার মহাসড়কে রয়েছে বাইপাস সড়ক। সুতরাং ট্রাফিক আইন বাস্তবায়ন হলে ফেরিঘাটের সংযোগ সড়ক থেকে পাঁচ কিলোমিটার রাস্তায় যানজট হওয়ার আশঙ্কা নেই। কিন্তু প্রতিনিয়ত দেখা যায়, এই পাঁচ কিলোমিটার পর্যন্ত ফেরিঘাটের প্রধান ফটকে যানজট লেগে থাকে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দৌলতদিয়া ঘাটে নিয়ম ভেঙে যানবাহনগুলো পেছন থেকে সামনে নেওয়ার প্রতিযোগিতা শুরু হয়। দৌলতদিয়া ট্রাফিক পুলিশ কন্ট্রোল রুম থেকে ফেরিঘাটের সংযোগ সড়ক পর্যন্ত ১ কিলোমিটার রাস্তায় শুধু ট্রাকের ৩৪টি সারি। কোনও কোনও জায়গায় বেশি সারিও রয়েছে। পন্টুনে ফেরি ভেড়ানোর আগে ফেরিতে ওঠার জন্য অসংখ্য যানবাহন অপেক্ষা করে থাকে। এসব যানবাহন সংযোগ সড়ক ও পন্টুনে ওঠার আগে আনলোডের কারণে অতিরিক্ত সময় ব্যয় হয়। এমন ঝুঁকি নিয়েই যানবাহন ফেরিতে লোড-আনলোড চলে।

এভাবে ট্রাফিক আইন ভঙ্গ করে অনৈতিক সুবিধা নেওয়ার জন্য দৌলতদিয়া ঘাটে প্রায় তিন শতাধিক চিহ্নিত দালাল রয়েছে। দৌলতদিয়া ঘাটে অবস্থানরত দালালদের বৈধতা দিচ্ছে অনৈতিক সুবিধা নেওয়া যানবাহনের মালিকরা। এসব মালিক অনৈতিক সুবিধা নেওয়ার জন্য দৌলতদিয়া ফেরিঘাটে বেতনভুক্ত কর্মচারীও রেখেছেন তারা।

আরও পড়ুন: ঈদ যাত্রায় ফেরি ও লঞ্চঘাটে দুর্ভোগের শঙ্কা

দৌলতদিয়া ফেরিঘাট এলাকায় অবস্থানরত মুন্সি শাহাদত হোসেন নামের একজনের সঙ্গে কথা হয়। তিনি একটি কুরিয়ার সার্ভিসের নিয়োগপত্র বের করে দেখান। এতে দেখা যায়, তার বাড়ি গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলায়। ওই পার্সেল সার্ভিসের কাভার্ডভ্যানগুলো ফেরি পার করার জন্য দৌলতদিয়া ঘাটে কর্মরত তিনি।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশনের (বিআইডব্লিউটিসি) আরিচা বন্দরের উপ-সহকারী পরিচালক খালেদ নেওয়াজ বলেন, ‌‘দালাল ছাড়া ফেরির টিকিট মেলে না—কথাটি ঠিক নয়। যে কেউ কাউন্টারে এসে টিকিট সংগ্রহ করতে পারেন। সে দালাল নাকি যানবাহন চালক আমাদের নিশ্চিত করার দায়িত্ব নয়।’

Source link

Related posts

কৃষ্ণচূড়ার রঙে সেজেছে গোয়ালন্দ রেলস্টেশন

News Desk

চুয়াডাঙ্গা ২৪ ঘণ্টায় করোনায় ৬ জনের মৃত্যু

News Desk

দণ্ডিতের বদলে বাদীর বিরুদ্ধে সাজা পরোয়ানা

News Desk

Leave a Comment