নবান্ন উৎসবকে ঘিরে জয়পুরহাটে মাছের মেলায় ক্রেতাদের ভিড়
বাংলাদেশ

নবান্ন উৎসবকে ঘিরে জয়পুরহাটে মাছের মেলায় ক্রেতাদের ভিড়

অগ্রহায়ণ মাসের দ্বিতীয় দিনে জয়পুরহাটের কালাই উপজেলায় নতুন ধান ঘরে তোলার আনন্দে আত্মীয়দের নিয়ে নবান্ন উৎসবে মেতে ওঠেন কৃষকরা। পিঠা-পায়েসসহ নানা আয়োজনে স্বজনদের নিয়ে উদযাপন করেন কৃষকের কাঙ্ক্ষিত নবান্ন উৎসব। এ উপলক্ষে কালাই পৌরশহরের পাঁচশিরা বাজারে বসে একদিনের মাছের মেলা। এই দিনকে ঘিরে পৌরশহরের পাঁচশিরা বাজারে ভোর ৪টা থেকে চলে ছোট-বড় বিভিন্ন প্রজাতির মাছ কেনা-বেচা। এই দিনটির অপেক্ষায় থাকেন এ উপজেলার বাসিন্দারা। ক্যালেন্ডার নয়, পঞ্জিকা অনুসারে অগ্রহায়ণ মাসের দ্বিতীয় দিনে এ জেলায় একমাত্র পাঁচশিরা বাজারেই বসে বৃহৎ মাছের মেলা।

রবিবার (১৭ নভেম্বর) ভোর রাত থেকেই মেলাজুড়ে ছিল ক্রেতা-বিক্রেতা আর কৌতূহলী মানুষের ঢল। মেলায় নদী, দিঘি ও পুকুরের স্বাভাবিক বেড়ে ওঠা দেশি প্রজাতির টাটকা মাছে ছিল ভরপুর। মাঠ থেকে নতুন ফসল কৃষকদের ঘরে উঠলেই এই দিনে আয়োজন করেন নবান্ন উৎসবের। অনুষ্ঠানে জামাই-মেয়ে, বেয়াই-বেয়ানসহ নিকট আত্মীয়-স্বজনরা যোগ দেন। জামাইরা প্রতিযোগিতা করে মেলা থেকে মাছ কিনে শ্বশুরবাড়িতে নিয়ে যান। মেলায় রুই, মৃগেল, কাতলা, চিতল, সিলভার কার্প, পাঙাস, ব্রিগেটসহ নানা ধরনের মাছ বিক্রি হয়।

এবার মেলায় সর্বোচ্চ ২৯ কেজি ওজনের একটি কাতলা মাছ বিক্রি হয়েছে ৩২ হাজার টাকায় এবং ১৯ কেজি ওজনের একটি সিলভারকার্প মাছ বিক্রি হয়েছে ১৪ হাজার টাকায়। মেলার আয়োজন করেন স্থানীয় মাছ ব্যবসায়ীরা। এক সপ্তাহ আগে থেকে মেলার জন্য প্রস্তুতি নেন ব্যবসায়ীরা। এ উপলক্ষে দু’দিন ব্যাপী এলাকায় মাইকে প্রচারও করেন তারা।

মাছ ব্যবসায়ী ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, পঞ্জিকা অনুসারে অগ্রহায়ণ মাসের দ্বিতীয় দিনে এ মেলা বসে। নতুন ধান থেকে প্রস্তুত চালে প্রথম রান্না উপলক্ষে এ নবান্ন উৎসব পালিত হয়। আত্মীয়-স্বজনরা আসেন বাড়িতে। পাড়া-মহল্লা জেগে ওঠে উৎসবের আমেজে। পিঠা-পুলি, পায়েস, গুড় ও চিনির ক্ষীরের সঙ্গে খই ও মুড়ি খাওয়ার ধুম পড়ে যায়। এ উপলক্ষে মাছের মেলা থেকে এলাকার বিভিন্ন শ্রেণির মানুষরা উচ্চমূল্যে মাছ কেনেন। রুই, মৃগেল, কাতলা, সিলভার কার্প, পাঙাস, ব্রিগেটসহ বিভিন্ন ধরনের ৩ কেজি থেকে ২৯ কেজি ওজনের মাছের সমাগম হয়েছে মেলায়। সাধ্যমতো সবাই মাছ ক্রয় করেছেন।

মাছ ব্যবসায়ী এনামুল হোসেন বলেন, ‘মেলায় পুকুর, দীঘি ও নদী থেকে নানান জাতের বড় বড় মাছ সংগ্রহ করা হয়েছে। কাতলা, রুই, মৃগেল ৪শ থেকে ১২শ টাকা কেজি এবং চিতল মাছ ১৩শ থেকে ২ হাজার টাকা কেজিতে বিক্রি করা হচ্ছে। মাঝারি ৪০০ টাকা থেকে ৫০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। ক্রেতার চাপে এবার মাছ বিক্রি হয়েছে বেশি। দাম ছিল স্বাভাবিক। লাভ হয়েছে মোটামুটি।’

অন্য বছরের চেয়ে এবার মাছের দাম একটু বেশি বলে জানান ক্রেতারা মেলায় মাছ কিনতে বগুড়ার মোকামতলা থেকে আসা পৌরশহরের আঁওড়া মহল্লার জামাই বেলাল হোসেন বলেন, ‘নবান্ন উৎসবে শ্বশুর প্রতি বছরই দাওয়াত করেন। পরিবারের সবাইকে নিয়ে শ্বশুরবাড়িতে এসেছি। এবার ১২ কেজি ওজনের একটি কাতলা মাছ কিনেছি। অন্য বছরের চেয়ে এবার মাছের দাম একটু বেশি। তারপরও ভালো লাগছে।’

চেঁচুরিয়া গ্রামের কৃষক ওয়াহেদ বলেন, ‘এই দিনের অপেক্ষায় থাকে মেয়ে-জামাই, নাতি-নাতনি ও আত্মীয়-স্বজনরা। কষ্ট হলেও তাদের জন্য আয়োজন করতে হয়। মেলাতে এসেছি মাছ কিনতে। ১৩ হাজার টাকায় ১২ কেজি ওজনের একটি কাতলা মাছ কিনেছি। বাড়ির সবাই খুশি হবে।’

মেলার ইজারাদার আব্দুল মান্নান বলেন, ‘প্রতি বছর এই দিনে নবান্ন উৎসব উপলক্ষে এখানে মাছের মেলা বসে। মাছ ব্যবসায়ীরা মেলার আগে এলাকায় মাইকে প্রচার করে। প্রচুর মাছ আমদানি যেমন হয়, তেমনি বিক্রিও হয়।’

উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা তৌহিদা মোহতামিম বলেন, ‘মেলায় ছোট-বড় বিভিন্ন প্রজাতির মাছ উঠেছে। বড় বড় মাছ দেখে চাষিদের আগ্রহ বাড়ছে। মেলায় এক থেকে সোয়া কোটি টাকার মাছ কেনাবেচা হবে। মৎস্য বিভাগ চাষিদের সব সময় মাছ চাষে পরামর্শ দিয়ে আসছে। আগামীতে এই মেলার পরিধি আরও বাড়বে বলে আমি আশাবাদী।’

Source link

Related posts

গাজীপুরে শিক্ষার্থীদের গণমিছিল, পুলিশের গাড়ি ও বক্সে অগ্নিসংযোগ

News Desk

চমেক শিক্ষার্থীদের ১৯ জুন ভ্যাকসিন দেয়া শুরু

News Desk

সোমবার বিকাল ৫টার মধ্যে বিএনপিকে নাম জমা দেওয়ার আহ্বান

News Desk

Leave a Comment