বগুড়ার বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্প করপোরেশনের (বিসিক) শিল্প এলাকায় নিখোঁজের পর একটি কারখানার বর্জ্য নিষ্কাশনের ম্যানহোল থেকে দুই নৈশপ্রহরীর লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। শুক্রবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) বিকালে তাদের লাশ উদ্ধার করা হয়।
নিহতরা হলেন—সদর উপজেলার সরলপুর গ্রামের আবদুল হান্নান (৪৫) ও শিবগঞ্জ উপজেলার নামা মহাস্থানগড় এলাকার শামসুল ইসলাম (৬০)। গত বুধবার দিবাগত রাতে ডিউটি করতে এসে ভোরে নিখোঁজ হন। বগুড়া শহরের ফুলবাড়ি এলাকায় বিসিক শিল্পনগরীর মেসার্স মাছু অ্যান্ড সন্স ইন্ড্রাস্টির নৈশপ্রহরী তারা।
বগুড়া সদর থানার ইন্সপেক্টর (তদন্ত) জাহিদ হোসেন জানান, তাদের মাথার পিছনে ভারী কোনও বস্তু দিয়ে আঘাতের পর গলায় ফাঁস দিয়ে হত্যা করা হয়েছে। তদন্ত ছাড়াই এখন এ বিষয়ে মন্তব্য করা সম্ভব নয়।
হান্নানের ভায়রা মানিক ইসলাম জানান, মাছুদুর রহমানের মালিকানাধীন মেসার্স মাছু অ্যান্ড সন্স ইন্ড্রাস্টির নৈশ প্রহরী ছিলেন তিন জন। তাদের মধ্যে একজন অসুস্থ থাকায় আবদুল হান্নান ও শামসুল হক দায়িত্বে ছিলেন। প্রতিদিন রাতে আসেন এবং সকালে বাড়ি ফিরে যান। গত বুধবার সকাল ৬টার দিকে অজ্ঞাত একজন হান্নানের মোবাইল ফোন থেকে কল করে জানায়, মহাজনের (কারখানা মালিক) সঙ্গে বিরোধ থাকায় দুই জনকে অপহরণ করা হয়েছে। বিকালের মধ্যে পাঁচ লাখ টাকা নিয়ে লালমনিরহাট রেল স্টেশনে না এলে তাদের হত্যা করা হবে।
মাছুদার রহমান কারখানার মালিক হলেও তার তিন ছেলে সাজ্জাদুর রহমান, তাজমিলুর রহমান ও মোস্তফা আলী নুররাজী দেখাশোনা করেন।
তাজমিলুর রহমান জানান, হান্নান ও শামসুল তাদের কারখানায় প্রায় ১০ বছর ধরে কাজ করেন। বুধবার সকাল ৭টার দিকে হান্নানের মোবাইল ফোন দিয়ে তাকে ক্ষুদে বার্তা পাঠানো হয়। এতে জানানো হয়, তাদের দুই নৈশপ্রহরীকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। বিকালের মধ্যে ৫ লাখ টাকা নিয়ে লালমনিরহাট রেল স্টেশনে আসতে হবে। এ কথা প্রকাশ করলে দুই প্রহরীকে হত্যা করা হবে। সারাদিন ৫-৬ বার ম্যাসেজ পাঠায়। এ ব্যাপারে সদর থানায় সাধারণ ডায়েরি করা হয়।
কারখানান ম্যানহোলে মরদেহ কীভাবে পাওয়া গেলো—জানতে চাইলে তিনি বলেন, কারখানা অনেক বড়। বুধবার পুলিশ পুরো কারখানা তল্লাশি করেছে। শুক্রবার সকাল থেকে তারা খোঁজাখুঁজির এক পর্যায়ে বাথরুমের ম্যানহলের স্লাব সরালে হান্নান ও শামসুলের মরদেহ দেখতে পাওয়া যায়। খবর পেয়ে সদর থানা ও ডিবি পুলিশের দল সেখানে এসে মরদেহ দুটি উদ্ধার করে।
ফুলবাড়ি পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ ইন্সপেক্টর সুজন মিয়া ও সদর থানার ইন্সপেক্টর (তদন্ত) জাহিদ হোসেন জানান, তাৎক্ষণিকভাবে এ হত্যাকাণ্ডের কারণ বলা সম্ভব নয়। দুর্বৃত্তরা মুক্তিপণের জন্য অপহরণ করলে ধনী মালিক পক্ষের কাউকে করতে পারে। কিন্তু দরিদ্র নৈশপ্রহরীদের কেন অপহরণ করেছেন, বোঝা যাচ্ছে না। মোবাইল ফোনের ক্ষুদে বার্তায় ইংরেজিতে ম্যাসেজ পাঠানোর ঘটনায় পুলিশকে ভাবিয়ে তুলেছে। মরদেহ উদ্ধার করে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে।