নিম্নচাপের প্রভাবে টেকনাফে বাতাস শুরু, বেড়েছে সাগর-নদের পানি
বাংলাদেশ

নিম্নচাপের প্রভাবে টেকনাফে বাতাস শুরু, বেড়েছে সাগর-নদের পানি

সাগরে সৃষ্ট গভীর নিম্নচাপ আরও ঘনীভূত হচ্ছে। ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিলে এর নাম হবে ‘রেমাল’, আরবি এই শব্দের অর্থ বালু। এর গতিপথ এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের উপকূলের দিকে। এটি আরও ঘনীভূত হয়ে উপকূলের দিকে এগোতে থাকায় শনিবার (২৫ মে) সকাল থেকে কক্সবাজারের টেকনাফের সেন্টমার্টিন-শাহপরীর দ্বীপে বাতাস শুরু হয়েছে। এর প্রভাবে সাগর ও নাফ নদে পানির উচ্চতা স্বাভাবিকের চেয়ে পাঁচ ফুট বেড়েছে। এটি নিয়ে ঝুঁকিতে আছেন সীমান্তঘেঁষা নাফ নদের শাহপরীর দ্বীপ ও সাগরের প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিনের বাসিন্দারা।

আবহাওয়া অধিদফতর জানিয়েছে, নিম্নচাপটি আরও শক্তি অর্জন করে শুক্রবার মধ্যরাতে গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে। শনিবার বিকালের মধ্যে সেটি ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে। রবিবার ঘূর্ণিঝড়টি বাংলাদেশের উপকূলে আঘাত হানতে পারে। আর এ সময় উপকূলসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টি হতে পারে।

এদিকে টেকনাফ শহর থেকে ১৩ কিলোমিটার দূরে সীমান্ত সড়কের পূর্বে বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তঘেঁষা নাফ নদের পাড়ে অবস্থিত শাহপরীর দ্বীপের জালিয়াপাড়ায় এখনও শতাধিক পরিবারের মানুষের বসবাস। এখনও ভাঙছে দ্বীপটি। এমনকি বিলীনের পথে দুটি বিদ্যালয় ভবন। এ ছাড়া গত বছর মে মাসে ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’র আঘাতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল সেন্টমার্টিন-শাহপরীর দ্বীপ।

শাহপরীর দ্বীপের বাসিন্দা আবুল কালাম বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড়ের কথা শুনলে বুক ব্যথা শুরু হয়। আমরা নাফ নদের তীরে এখনও প্রায় শতাধিক পরিবার বসবাস করি। মাথা গোঁজার ঠাঁই নেই বলে নদের ধারে আশ্রয় নিয়ে বাঁচার চেষ্টা করছি। কিন্তু ঘূর্ণিঝড় আসার খবরে আমরা সবাই খুব চিন্তিত। কেননা গত বছরের মে মাসে ঘূর্ণিঝড় ‘মোখায়’ আমাদের এখানকার লোকজনকে তছনছ করে দিয়েছিল।’

শাহপরীর দ্বীপের ইউপি সদস্য আবদুস সালাম বলেন, ‘বলতে গেলে পুরো এলাকাটি উপকূল। এলাকায় প্রায় ৫০০ মানুষ নাফ নদের পাড়ে জীবনযাপন করছেন। ঘূর্ণিঝড়ে প্রতি বছর এই এলাকার মানুষ ঘরহারা হচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘ইতিমধ্যে সকাল থেকে বাতাস শুরু হয়েছে। ফলে নৌকা-ট্রলারগুলো কূলে নিরাপদ স্থানে রাখা হয়েছে। এ ছাড়া নাফ নদের পাড়ে বসবাসকারীদের সতর্ক থাকাতে বলা হয়েছে। তবে পরিস্থিতি দেখে তাদের সরিয়ে নেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হবে।’

অন্যদিকে প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিনে সকাল থেকে সাগরের পানির উচ্চতা বৃদ্ধির পাশাপাশি প্রচণ্ড বাতাস শুরু হয়েছে।

সেন্টমার্টিন দ্বীপের বাসিন্দা কবির আহমেদ বলেন, ‘ইতিমধ্যে বাতাস শুরু হয়েছে। এ ছাড়া অন্যদিনের তুলনায় সাগর উত্তালের পাশাপাশি পানিও বেড়েছে। দ্বীপবাসীর বসবাস সাগরের পাড়ে, যার কারণে আমরা ঘূর্ণিঝড় এলে খুব বেশি ভয়ে থাকি।’

সতর্ক আছি উল্লেখ করে সেন্টমার্টিন ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান বলেন, ‘প্রচণ্ড গরমে হাঁসফাঁস জনজীবন, মনে হচ্ছে বড় কিছু হতে যাচ্ছে। দ্বীপে সাগর উত্তাল রয়েছে। সকাল থেকে আকাশ মেঘ থাকলেও বাতাস শুরু হয়েছে। এ ছাড়া স্বাভাবিকের চেয়ে সাগরের পানির উচ্চতা বেড়েছে।’

দ্বীপের বাসিন্দা খতিজা বেগম বলেন, ‘ভাঙা ঘরে কোনোরকম জীবন পার করছি। এখন খুবই চিন্তিত আছি, কখন ঘূর্ণিঝড়ে শেষ সম্বলটুকুও হারিয়ে না যায়। গত বছরও ঘূর্ণিঝড়ের আঘাতে ঘরবাড়ি হারিয়েছি।’

টেকনাফ উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) সৈয়দ সাফকাত আলী বলেন, ‘মেডিক্যাল টিমসহ সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছি। পরিস্থিতি বুঝে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তাছাড়া সাগর-নাফ নদের কারণে আমরা সেন্টমার্টিন ও শাহপরীর দ্বীপকে গুরুত্ব দিচ্ছি বেশি।’

আবহাওয়া অধিদফতরের আবহাওয়াবিদ ড. মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিক বলেন, আজ সন্ধ্যা থেকেই সম্ভাব্য ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাব সমুদ্র তীরবর্তী এবং আশপাশের অঞ্চলে পড়তে শুরু করবে। আর মধ্যরাত থেকেই পুরোপুরি প্রভাব শুরু হতে পারে। সেজন্য বন্দরগুলোকে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। নিম্নচাপটি এখন গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয়ে আরও ঘনীভূত হয়ে শক্তিশালী হচ্ছে।

এদিকে শনিবার আবহাওয়ার বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে (ক্রমিক নম্বর-৭) বলা হয়েছে, পূর্বমধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন পশ্চিম মধ্য বঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থানরত গভীর নিম্নচাপটি উত্তরদিকে অগ্রসর হয়ে একই এলাকায় (১৮.২০ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৯.৮০ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ) অবস্থান করছে। এটি দুপুর ১২টায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৫০০ কিমি দক্ষিণপশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৪৩৫ কিমি দক্ষিণপশ্চিমে, মোংলা সমুদ্র বন্দর থেকে ৪৭৫ কিমি দক্ষিণে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ৪২৫ কিমি দক্ষিণে অবস্থান করছিল। এটি আরও উত্তর দিকে অগ্রসর ও ঘনীভূত হতে পারে।

Source link

Related posts

গাজীপুরে কলসভর্তি গ্রেনেডের সঙ্গে ২১ আগস্টের গ্রেনেডের মিল

News Desk

ইটভাটার মাটি বহনে নষ্ট হচ্ছে সড়ক

News Desk

শক্তিশালী পাসপোর্টের তালিকায় বাংলাদেশর এক ধাপ অগ্রগতি

News Desk

Leave a Comment