পৌষ মাস শুরু হতে আর মাত্র কিছুদিন বাকি। পৌষের আগমনে সূর্যের তাপ ধীরে ধীরে কমতে শুরু করেছে। সন্ধ্যা নামতেই গায়ে জড়াতে হচ্ছে গরম কাপড়। রাত যতই গভীর হচ্ছে ততই কুয়াশার চাদরে ঢাকা পড়ছে উত্তরের সীমান্তবর্তী জেলা নীলফামারী।
হিমালয়ের পাদদেশে অবস্থিত নীলফামারীসহ রংপুর বিভাগের অন্যান্য জেলায় স্থানীয় হাসপাতালগুলোতে শীতজনিত রোগের প্রকোপ দেখা দিয়েছে। ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া, অ্যাজমা, সর্দি, কাশিসহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে শিশুরা। বিশেষ করে গ্রামে-গঞ্জে বসবাসরত শিশু ও বৃদ্ধরা বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন এসব রোগে। ক্রমেই রোগীর ভিড় বাড়ছে নীলফামারী ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে।
বৃহস্পতিবার (৫ ডিসেম্বর) বিকালে ওই হাসপাতালের তথ্যমতে জানা যায়, ইনডোরের ৯টি ওয়ার্ডে ৩০৯ জন রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন। আবার আউটডোরে শীতজনিত নানা রোগে ৮০০ জন চিকিৎসাসেবা নিয়ে চলে গেছেন। হাসপাতালটিতে এ পর্যন্ত মোট এক হাজার ১০৯ জন সেবা নিয়েছেন। এর মধ্যে ইনডোরে পুরুষ ওয়ার্ডে ৬৬ জন, মহিলা ওয়ার্ডে ৭৩ জন, নবজাতক ওয়ার্ডে ২২ জন, ডায়রিয়া ওয়ার্ডে ৫৬ জন (শিশু ৩৪ বয়স্ক ২২), গাইনিতে ২৩ জন, সার্জারিতে (নারী ও পুরুষ) ৫৫ জন, নাক কান গলা (ইএনটি) ও চক্ষু ওয়ার্ডে ১৪ জন। বিশেষ করে ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া ও সর্দি, জ্বরে শিশু রোগীদের প্রচুর ভিড় দেখা গেছে।
নীলফামারী সদরের টুপামারী ইউনিয়নের রামগঞ্জ গ্রামের বাসিন্দা ৯ মাস বয়সী আয়নের মা লাভলি বেগম জানান, গত দুই দিন ধরে পাতলা পায়খানায় শিশুটি অসুস্থ হয়ে পড়ে। গ্রামের ডাক্তার দিয়ে চিকিৎসা করে কিছুই হয় নাই। বৃহস্পতিবার বাধ্য হয়ে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। এসে তার সন্তানের মতো অনেককেই ডায়রিয়া ওয়ার্ডে পেয়েছেন।
একই কথা বলেন ওই ওয়ার্ডের দেড় মাস বয়সী মুনতাহা আকতার হিমির মা জান্নাতুন মাওয়া ও ২৩ দিন বয়সী নবজাতক মুনতাছিরের মা মুসতাকিনা। জায়গা সংকটে অনেকে বারান্দায় শুয়ে চিকিৎসা নিচ্ছে।
ডায়রিয়া ওয়ার্ডের ইনচার্জ রিংকু আকতার জানান, দুই দিন আগে এই ওয়ার্ডে শিশুসহ অর্ধশতাধিক ডায়রিয়া রোগী ভর্তি ছিল। এখন কিছুটা কমেছে। তিনি বলেন, ‘শীতজনিত রোগের কারণে এসব শিশু আক্রান্ত (ডায়রিয়া) হচ্ছে। ২০ শয্যার ওয়ার্ডে ৩৪ জন রোগীর চিকিৎসায় সমস্যায় পড়তে হচ্ছে।’
হাসপাতালের শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, ‘নিউমোনিয়া, ডায়রিয়া ও আগুনে পুড়ে শিশুরা বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। আক্রান্ত শিশুদের গরম কাপড়, গরম পানি ও গরম খাবার খাওয়াতে হবে। সমস্যা বেড়ে গেলে স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসা নিতে হবে। শীত নিবারণে মায়েদের সচেতন থাকতে হবে।’
নীলফামারী সৈয়দপুর বিমানবন্দর আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা লোকমান হাকিম জানান, শুক্রবার (৬ ডিসেম্বর) সকাল ৬টায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ২৭ দশমিক শূন্য ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর সর্বনিম্ন ১৪ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। সেই সঙ্গে বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ৯৫ শতাংশ ও গতিবেগ ছিল ২-৩ কিলোমিটার।
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা জানান, আবহাওয়া পরিবর্তনের ফলে শীতজনিত রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। বিশেষ করে শিশুরোগীদের প্রচুর ভিড় দেখা গেছে। জেলার ছয় উপজেলা থেকে আগত রোগীর ভিড়ে সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে কর্তৃপক্ষ।
হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) ডা. আব্দুর রহিম বলেন, ‘আবহাওয়া পরিবর্তনের কারণে হঠাৎ অনেকে সর্দি-কাশি-জ্বরে আক্রান্ত হচ্ছেন। মাথাব্যথা, গলাব্যথা, হাঁচির মতো লক্ষণ রয়েছে। ডায়রিয়াসহ অ্যাজমা রোগীর প্রচুর ভিড় হচ্ছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘এসব রোগে সতর্ক থাকার কোনও বিকল্প নেই। বিশেষ করে শিশু, বৃদ্ধ এবং যাদের অ্যাজমা, হাঁপানি ও শ্বাসকষ্টের সমস্যা আছে, তাদের বেশি সতর্ক থাকতে হবে। গরম কাপড় পরতে হবে। শরীরে শক্তি জোগায় এমন খাবার খেতে হবে। আর জটিলতা দেখা দিলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।’
নীলফামারী ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. আবু আল হাজ্জাজ জানিয়েছেন, শীতের কারণে শিশুরা ডায়রিয়া, শ্বাসকষ্ট, নিউমোনিয়া রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য আসছে। তুলনামুলকভাবে বয়স্ক নারী-পুরুষরা শীতজনিত নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। তিনি শিশুদের পর্যাপ্ত শীতবস্ত্র পরানো ও সকাল-সন্ধ্যায় ঘরের বাইরে বের না করার পরামর্শ দিয়েছেন।