দুই কোটি টাকা ব্যয়ে বান্দরবানে থানচির বড়মদকে সাঙ্গু নদীর ওপর নির্মিত হয়েছিল দৃষ্টিনন্দন ঝুলন্ত সেতু। নির্মাণের পর নদীর দুই পাড়ের প্রায় পাঁচ হাজার মানুষের মধ্যে তৈরি হয় মেলবন্ধন। শুধু স্থানীয় বাসিন্দাই নন, পর্যটকদের কাছেও ছিল আকর্ষণীয়। তবে মাত্র দুই বছর পার হতেই চলতি বছরের আগস্টের শুরুতেই হওয়া বন্যার পানিতে তোড়ে ভেঙে গেছে এটি।
নির্মাণকাজে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার ও কৌশলগত ত্রুটির কারণেই এটি ভেঙেছে বলে দাবি স্থানীয়দের। আর এ নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়েছে পুরো এলাকায়।
পার্বত্য জেলা পরিষদের তথ্যমতে, ২০১৯ থেকে ২১ এই দুই অর্থবছরে বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদের প্রকৌশল বিভাগের অধীনে এক কোটি ৯৯ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত হয় ৮০ মিটার দৈর্ঘ্য ও ১.৮ মিটার প্রস্থের দৃষ্টিনন্দন সেতুটি। এটি বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম ঝুলন্ত সেতু হিসেবেও খ্যাতি অর্জন করে। কাজটি বাস্তবায়ন করে ইউট মংয়ের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্সের নামে ঠিকাদার মংউয়েনু মারমা ও থানচির রেমাক্রি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মুইশৈথুই মারমা রনি।
স্থানীয়রা জানান, সেতুটি নির্মাণের ফলে দুই পাঁড়ের প্রায় পাঁচ হাজার মানুষের নির্বিঘ্নে চলাচল শুরু হয়। কিন্তু স্থানীয় নদীর বালু, কম সিমেন্ট ব্যবহার, নদী থেকে সংগ্রহ করা কাঁচা (অপরিপক্ব) পাথর ও নিম্নমানের রড ব্যবহারের কারণে পানির চাপেই সেতুটির পিলারের সিমেন্টের আস্তর সরে ভেঙে গেছে। এতে সেতুটিও বেঁকে গেছে কয়েক জায়গায়।
তারা জানান, ঝুলন্ত সেতুটি ছাড়াও সাঙ্গু নদীতে থানচি সদরে একটি, বলিপাড়ায় একটি, রুমা সদরে একটি, রোয়াংছড়ির বেতছড়ায় একটি ও বান্দরবান সদরে তিনটিসহ সাতটি সেতু রয়েছে। এ বন্যায় কোনও সেতুর ক্ষতি হয়নি। তবে এটা কেন ভেঙে গেলো তা খতিয়ে দেখারও দাবি জানান তারা।
স্থানীয় সাংবাদিক অনুপম মারমা জানান, বছর দুয়েক আগে বড়মদকে সেতুটি করার পর স্থানীয়রা অনেক খুশি হয়ে প্রধানমন্ত্রী, পার্বত্যমন্ত্রী, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যানসহ আওয়ামী লীগের সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছিলেন। কিন্তু দুই বছর না পেরোতেই ভেঙে যাওয়ায় হতাশ। মানুষ দাবি করছেন, নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে তৈরি করায় পানির চাপ সহ্য করতে না পেরে সিমেন্টের আস্তর সরে গিয়ে ভেঙে গেছে পিলার ও বেঁকে গেছে সেতুর উপরের অংশ। বিষয়টি তদন্তের দাবি জানান এই সাংবাদিক।
থানচির রেমাক্রি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও ঠিকাদার মুইশৈথুই মারমা রনি দাবি করেন, ‘এবারের বন্যায় পানির সঙ্গে বড় বড় গাছ আর বাঁশ ভেসে এসে সেতুতে আটকে যায়। এগুলোর ভার সইতে না পেরেই বেঁকে গেছে।’ তবে পিলার ভাঙার বিষয়টি অস্বীকার করেন।
সেতুটি ভাঙ্গার মূল কারণ হিসেবে বন্যাকে দায়ী করে আরেক ঠিকাদার মংউয়েনু মারমা দাবি করেন, ‘কাজটি করার সময় কোনও অনিয়ম করা হয়নি। এবার বেশি বন্যা হয়েছে। তাই পানির চাপ সইতে না পেরে সেতুটি ভেঙে গেছে।’
সেতু নির্মাণে কোনও অনিয়ম হয়নি জানিয়ে বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদের প্রকৌশল বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী জিয়াউর রহমান বলেন, ‘থানচি সড়ক যোগাযোগ বন্ধ থাকার কারণে এখনও সেতুটি দেখতে যেতে পারিনি। তবে এবার যে বন্যা হয়েছে তা অতীতে দেখা যায়নি। মূলত বন্যার পানি চাপ ও ভাসমান নানা ধরনের গাছের ভার বহন করতে না পেরেই সেতুটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আমরা ইতোমধ্যে সংস্কারের জন্য প্রস্তাবনা পাঠিয়েছি। আশা করছি, বরাদ্দ পেলে সেতুটির সংস্কার কাজ শুরু করতে পারবো।’
এদিকে, সাঙ্গু নদীতে এতগুলো সেতু থাকার পরও শুধুমাত্র এটি কেন ভাঙলো এর কারণ তদন্ত করে বের করার জোর দাবি উঠেছে সচেতন মহলে।