Image default
বাংলাদেশ

পাবজি ও ফ্রি ফায়ার নিয়ে দুই মন্ত্রণালয়ের দুই মত

ইন্টারনেটভিত্তিক অনলাইন গেম ‘ফ্রি ফায়ার ও পাবজি গেম’ বন্ধ ইস্যুতে সরকারের দুই মন্ত্রণালয় দুই মত প্রকাশ করেছে। শিশু-কিশোরদের শিক্ষাজীবন সুন্দর রাখতে মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষায় ফ্রি ফায়ার ও পাবজি গেম সরকারিভাবে নিয়ন্ত্রণের পক্ষে মত দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। অপরদিকে এর বিপরীত বক্তব্য জানিয়েছে সরকারের ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়।

করোনাকালে যখন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঠিক তখনই কিশোর-কিশোরীরা ইন্টারনেটে মেতে উঠেছে ফ্রি ফায়ার ও পাবজি খেলায়। এতে কিশোর বয়সেই শিক্ষার্থীদের মানসিক. বিভিন্ন সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে। শিশু-কিশোররা কথা শুনছে না- এমনটাই দাবি করছেন অভিভাবকরা। এ বিষয়ে জানতে চাইলে সম্প্রতি শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেন, ‘ইন্টারনেটে নানা ধরনের গেম রয়েছে। এটি শুধু এককভাবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিষয় নয়। আমরা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কাজ করছি। শিক্ষা মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং সংশ্লিষ্ট অন্যান্য মন্ত্রণালয় রয়েছে; সবাই একযোগে কাজ করবে। কিশোর-কিশোরীদের শারীরিক, মানসিক স্বাস্থ্যসহ সব বিষয়ে নিরাপদ রাখা, আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।’ কত সংখ্যক শিশু-কিশোর গেমসগুলোর সঙ্গে জড়িত জানতে চাইলে দীপু মনি বলেন, ‘এ সংক্রান্ত পর্যালোচনা বা পরিসংখ্যান আমাদের হাতে নেই। এ বিষয়গুলো নিয়ে ব্যাপকভাবে কাজ করার সুযোগ রয়েছে।’

তবে এ বিষয়ে গতকাল ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন, ‘ইন্টারনেটের জগতে কিছুই বন্ধ করা যায় না। ফ্রি ফায়ার ও পাবজি গেম বন্ধের শত শত দাবি যদি ওঠে, আবার তা চালু রাখারও দাবি ওঠে। আমি কোন দাবিটা শুনব? আমি আজকে বন্ধ করে দেব, কিন্তু ভিপিএন (ভার্চুয়াল প্রাইভেট নেটওয়ার্ক) বন্ধ করবে কে? আমরা ফেসবুক বন্ধ করেছিলাম, কিন্তু ভিপিএন দিয়ে ফেসবুক চলেছে।’

অনেক ছেলেমেয়ে পাবজি ও ফ্রি ফায়ারে আসক্ত হয়ে পড়েছে। তাদের কাছ থেকে মোবাইল ফোন কেড়ে নিলে খাওয়া-দাওয়া বন্ধ করে দেয়। এ গেম কীভাবে বন্ধ করা যায়, এমন প্রশ্নের জবাবে মোস্তাফা জব্বার বলেন, ‘নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন না কেন? অদক্ষতা আপনাদের (অভিভাবক)। প্যারেন্টাল কন্ট্রোল আছে সেটি ইউজ করেন।’ তিনি আরও বলেন, ‘মাথাব্যথার জন্য মাথা কেটে ফেলা, এটি কোনো সমাধান না। কতটুকু গেম খেলা উচিত, কতটুকু আড্ডা দেওয়া উচিত, কতটুকু বাইরে যাওয়া উচিত, কতটুকু ঘরে থাকা উচিত; আপনি যদি আপনার সন্তানকে এটুকু কনভিন্স (বোঝানো) করতে না পারেন, ইটস ইউর ফেইলার (এটি অভিভাবকদের ব্যর্থতা)।’

টেলিযোগাযোগমন্ত্রী বলেন, ‘আমার কাছে মনে হয় না বন্ধ করাটা সমাধান। আমি এই জায়গাটায় এখন পর্যন্ত একমত হতে পারি না। আমাদের এখানকার গার্জিয়ানরা (অভিভাবকরা) সেই পরিমাণ যোগ্যতাসম্পন্ন নয়, এ কারণে ছেলেমেয়ে নষ্ট হয়।’ অভিভাবকদের কাছে প্রশ্ন রেখে মন্ত্রী বলেন, ‘ছেলেমেয়েরা আর কোনো কারণে নষ্ট হয় না? তারা যখন সিগারেট খায় তখন নষ্ট হয় না? যখন মাদক নেয় তখন নষ্ট হয় না? ওগুলো নিয়ন্ত্রণ করেন না কেন? এটির পেছনে কেন লেগে গেছেন এবং গেমের কারণে কী জন্য ইন্টারনেটের সুবিধা থেকে ছেলেমেয়েদের বঞ্চিত করবেন? আপনাদের সব জেনারেশন খোঁজেন। কোন জেনারেশন গেম খেলেনি? আমাদের তো ভিডিও গেমসের দোকান ছিল। আইডিবি ভবনের কম্পিউটার দোকান থেকে সিডি পাইকারি বিক্রি হয়েছে। এখন প্রশ্ন তুলবেন, গেমে নেশা হয়ে যাচ্ছে। যে কোনো কিছুতেই নেশাগ্রস্ত হয়ে যেতে পারে। সন্তান ফেসবুকের কোন সাইটে যেতে পারবে না পারবে সব কিছু নিয়ন্ত্রণ করা যায়। কতক্ষণ থাকতে পারবে সেটি নিয়ন্ত্রণ করা যায়। সেগুলো না করে মাথা কাটার পথ ধরেছেন কেন?’ তিনি বলেন, ‘উল্টাপাল্টা চিন্তা করার চাইতে লেট দেম গ্রো (ছেলেমেয়েদের বড় হতে দিন)। আমাদের তথ্যপ্রযুক্তি উপদেষ্টা (সজীব ওয়াজেদ জয়) বন্ধ করাকে কখনই সমাধান মনে করেন না। এর আগে একবার ফেসবুক বন্ধ করা হয়েছিল, তিনি নির্দেশ দিয়েছিলেন এটি না করার জন্য।’

মোস্তাফা জব্বার বলেন, ‘কিছু খারাপ থাকলে আমরা চেষ্টা করব যাতে সেটিকে কন্ট্রোল করা যায়। কিন্তু বন্ধ করে দিয়ে কিছু করা যায়, এটি আমি মনে করি না। এখানে আমি মনে করি, সবচেয়ে বড় ভূমিকা অভিভাবকদের। তারা যদি তাদের দায়িত্বপালন করেন তা হলে এগুলো কোনো সমস্যা না।’ তিনি বলেন, ‘ছেলেমেয়ে নষ্ট হয়ে যাচ্ছেÑ এ রকম একটি কথা বলা হচ্ছে। কিন্তু ছেলেমেয়ে এত সহজে নষ্ট হয় না। নিজের সন্তানের ওপর আস্থা রাখেন। আপনার সন্তান যখন গেম ছেড়ে দেওয়ার তখন ছেড়ে দেবে।’

গণমাধ্যমে খবর প্রকাশ হয়েছে, সংসদীয় কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে পাবজি ও ফ্রি ফায়ার গেম বন্ধ করতে যাচ্ছে মন্ত্রণালয় ও বিটিআরসি। এ বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘করোনার কারণে দীর্ঘদিন ধরে সংসদীয় কমিটির কোনো মিটিং হয় না। আর সংসদীয় কমিটি কোনো সুপারিশ করলে আমাকে ডেকে নিয়ে তো সুপারিশ করবে। আমাদের বলবে। আমাদের আলোচ্যসূচির মধ্যে এগুলো ছিল না। সুতরাং এসব বলে কোনো লাভ নেই।’

গণমাধ্যমে গত ২৬ মে পাঠানো এক বিবৃতিতে বাংলাদেশ মুঠোফোন গ্রাহক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ ফ্রি ফায়ার ও পাবজি গেম দুটি নিয়ন্ত্রণের দাবি জানিয়েছিলেন। বিবৃতিতে তিনি বলেন, সরকার যখন সহজলভ্য দ্রুতগতির ইন্টারনেটপ্রাপ্তির জন্য নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে, ঠিক তখন আগামী তরুণ প্রজন্ম প্রযুক্তির অপব্যবহার করে বিপথগামী হয়েছে, যা সবাইকে ভাবিয়ে তুলেছে। এ জন্য গেম দুটি নিয়ন্ত্রণ চায় সংগঠনটি।

Related posts

যে কারণে সিদ্ধান্ত পাল্টাল জাতীয় পার্টি

News Desk

বঙ্গোপসাগরে ট্রলারডুবি: দুই লাশ উদ্ধার এখনও নিখোঁজ ১৩ জেলে 

News Desk

আগের কোটা পুনর্বহাল না করলে রাজপথে নামার হুঁশিয়ারি পাহাড়ের শিক্ষার্থীদের

News Desk

Leave a Comment