নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে মঙ্গলবার (১৬ জানুয়ারি) থেকে শুরু হচ্ছে মাসব্যাপী লোক কারুশিল্প মেলা ও লোকজ উৎসব। এই উপলক্ষে পুরো ফাউন্ডেশন চত্বরকে বর্ণিল সাজে সাজানো হয়েছে।
সোমবার লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশন প্রাঙ্গণ ঘুরে দেখা যায়, মেলা চত্বর সাজানোর কাজ প্রায় সম্পন্ন। শেষ সময়ে ধোয়ামোছাসহ সাজসজ্জার কাজ চলছে। গ্রাম-বাংলার সংস্কৃতিকে ফুটিয়ে তুলতে বাঁশ-বেত ও মাটির ব্যবহারের ভিন্ন ধর্মী সাজসজ্জার আয়োজন করা হয়েছে। তাতে কারুশিল্পের চিত্র ফুটে উঠেছে।
বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশন সূত্রে জানা গেছে, মঙ্গলবার বিকাল ৩টায় ফাউন্ডেশনের লোকমঞ্চে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। সেখানে সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব খলিল আহমদের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনের সংসদ সদস্য আব্দুল্লাহ আল কায়সারের উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে। এছাড়া অতিথি হিসেবে আরও উপস্থিত থাকবেন সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. ইমরুল চৌধুরী, মন্ত্রণালয়ের উপসচিব ও বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশনের পরিচালক কাজী নূরুল ইসলাম।
আয়োজকরা জানিয়েছেন, দেশীয় সংস্কৃতি সবার মাঝে ছড়িয়ে দিতে প্রতি বছরের মতো এবারও মাসব্যাপী লোক কারুশিল্প মেলা ও লোকজ উৎসবের আয়োজন করা হয়েছে। মেলা ও লোকজ উৎসব চলবে আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত উন্মুক্ত থাকবে। উৎসবে কারুশিল্প প্রদর্শনী, লোকজীবন প্রদর্শনী, পুতুল নাচ, বায়োস্কোপ, নাগরদোলা ও গ্রামীণ খেলাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের কারুশিল্পীদের তৈরি বাহারি পণ্যসামগ্রী এবং উদ্যোক্তাদের কারুপণ্য প্রদর্শনের ব্যবস্থা রয়েছে। উৎসবে প্রতিদিন বাউল গান, পালাগান, যাত্রাপালা, লালনগীতি, ভাওয়াইয়া, ভাটিয়ালি, জারি সারি, হাছন রাজার গানসহ গ্রামীণ খেলা, সাপের খেলা, লাঠি খেলা, ঘুড়ি ওড়ানো ও পিঠা প্রদর্শনীর আয়োজন করা হবে।
এবারের মেলায় কারুশিল্পী প্রদর্শনীর ৩২টিসহ সর্বমোট ১০০টি স্টল থাকবে। এতে প্রত্যন্ত অঞ্চলের ৬৪ জন কারুশিল্পী অংশ নেবেন। এবার মেলায় থাকবে মৌলভীবাজার ও ঝালকাঠির শীতল পাটি, মাগুরা ও ঝিনাইদহের শোলাশিল্প, রাজশাহীর শখের হাঁড়ি, মুখোশ ও মাটির পুতুল, রংপুরের শতরঞ্জি, ঠাকুরগাঁওয়ের বাঁশের কারুশিল্প, সোনারগাঁ ও টাঙ্গাইলের জামদানি, কাঠের চিত্রিত হাতি ঘোড়া পুতুল, ঠাকুরগাঁওয়ের বাঁশ-বেতের কারুশিল্প, ঐতিহ্যবাহী জামদানি, বন্দরের রিকশা পেইন্টিং, কুমিল্লার তামা-কাঁসার তৈজসপত্র, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবানের ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর কারুশিল্প, কিশোরগঞ্জের টেরাকোটা পুতুল, বগুড়ার লোকজ খেলনা ও বাদ্যযন্ত্র, কুমিল্লার লোকজ বাদ্যযন্ত্রের শিল্পীসহ ১৭ জেলার কারুশিল্পীরা মেলায় অংশ নেবেন। এবারও মেলায় বিশেষ কর্মসূচি হিসেবে কারুশিল্প উদ্যোক্তাদের ১৫টি স্টল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশনের উপপরিচালক একেএম আজাদ সরকার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘মাসব্যাপী মেলা এবং লোকজ উৎসব উপলক্ষে ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। মঙ্গলবার বিকালে আয়োজনের উদ্বোধন করা হবে। এবারের মেলায় কারুশিল্পসহ ১০০টি স্টল স্থান পেয়েছে। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের কারুশিল্পীদের তৈরি বাহারি পণ্যসামগ্রী এবং উদ্যোক্তাদের কারুপণ্য প্রদর্শনের ব্যবস্থা রয়েছে।’