বরগুনায় একরাতে দুজনকে কুপিয়ে হত্যা করলো কারা?
বাংলাদেশ

বরগুনায় একরাতে দুজনকে কুপিয়ে হত্যা করলো কারা?

বরগুনায় একরাতে দুজনকে নৃশংসভাবে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় স্থানীয় বাসিন্দা ও স্বজনদের মাঝে আতঙ্ক বিরাজ করছে। ঘটনায় জড়িতদের সর্বোচ্চ সাজা এবং এলাকার নিরাপত্তা বাড়ানোর দাবি জানিয়েছে স্থানীয়রা। তবে তাদের কেন কারা হত্যা করা হয়েছে, সে বিষয়ে এখনও নিশ্চিত হতে পারেনি স্বজন ও থানা পুলিশ।

নিহতরা হলেন- সদর উপজেলার ১ নম্বর বদরখালী ইউনিয়নের বাওয়ালকর গ্রামের মৃত নবী হোসেনের ছেলে মিরাজ মুন্সি (৪৫)। তিনি নিজ এলাকায় ইলেকট্রনিক পণ্যের ব্যবসা করতেন। অপরজন বরগুনা পৌরসভার করইতলা এলাকার মৃত জয়েশ্বর দাসের ছেলে মন্টু চন্দ্র দাস (৩৫)। তিনি বরগুনা পৌরসভার মুরগি বাজারের ব্যবসায়ী জাকির হোসেনের দোকানের কর্মচারী ছিলেন। তাদের দুজনকে মঙ্গলবার রাতের আঁধারে দুর্বৃত্তরা হত্যা করেছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। 

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, মঙ্গলবার রাতে বদরখালী ইউনিয়নের কুমারখালি গ্রামের ডালক্ষেতের পরিত্যক্ত জায়গায় মিরাজকে কুপিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। বুধবার সকালে গ্রামের লোকজন ডালক্ষেতে কাজ করতে গলে লাশ দেখতে পান। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশ উদ্ধার করে মর্গে পাঠায় পুলিশ।

মিরাজের মা হেলেনা বেগম বলেন, ‘মঙ্গলবার রাত ৯টার দিকে প্রতিবেশী জাহাঙ্গীরের দোকানে ছেলেকে বসা দেখেছিলাম। তখন আমাকে বলেছিল, মা তুমি বাড়ি যাও। আমি পরে আসবো। আমি বাড়ি চলে এসে ঘুমিয়ে পড়ি। রাতে বাড়ি না ফেরায় মনে করেছিলাম, দোকানে ঘুমিয়েছে ছেলে। সকালে ঘুম থেকে উঠে প্রতিবেশীদের কাছে শুনি, মিরাজকে কুপিয়ে হত্যা করে ফেলে গেছে দুর্বৃত্তরা। কী অন্যায় করেছিল আমার ছেলে? যার কারণে এভাবে মেরে ফেলেছে। যারা ছেলেকে হত্যা করেছে, আমি তাদের বিচার চাই।’

স্বামীর মৃত্যুর পর থেকে কাঁদছেন মিরাজের স্ত্রী সুমী বেগম। তিনি বলেন, ‘আমাদের তিন শিশুসন্তান আছে। মঙ্গলবার দুপুরে ভাত খেয়ে ছোট ছেলের সঙ্গে খেলাধুলা করে বিকালে বাড়ি থেকে বেড়িয়ে যায়। প্রতিদিন রাত ১১-১২টার দিকে বাড়ি ফিরলেও মঙ্গলবার ফেরেনি। আমার কাছে মোবাইল নেই, যার জন্য খবর নিতে পারিনি। সকালে ঘুম থেকে উঠে শুনি স্বামীর লাশ ডালক্ষেতে পড়ে আছে। এখন তিন শিশুসন্তান নিয়ে আমি কোথায় যাবো? কারা কেন স্বামীকে হত্যা করেছে, তা জানি না। তার সঙ্গে কারও কোনও শত্রুতা ছিল না।’

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের বরগুনা জেলার সভাপতি মুফতি মিজানুর রহমান কাসেমী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এলাকায় এমন হত্যাকাণ্ড মেনে নেওয়া যায় না। যারা ঘটনায় জড়িত তাদের আইনের আওতায় আনতে হবে। সেইসঙ্গে অভিযুক্তদের সর্বোচ্চ সাজা এবং এলাকার নিরাপত্তা বাড়াতে হবে।’

বদরখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মতিউর রহমান রাজা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘মিরাজ সম্পর্কে আমার চাচা হয়। আমরা একই পরিবারের লোক। মঙ্গলবার রাত ৯টার দিকে মিরাজকে দোকানে বসা দেখলাম। সকালে শুনি হত্যা করা হয়েছে। রাতের আঁধারে কে বা কারা হত্যা করেছে, আমরা জানি না। তবে যারাই হত্যা করেছে, তাদের গ্রেফতার করতে হবে। এমন ঘটনা আমার ইউনিয়নে আর দেখতে চাই না।’

বরগুনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মো. আবদুল হালিম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে মিরাজের লাশের সুরতহাল তৈরি করেছি। প্রাথমিকভাবে ধারণা করছি, ধারালো অস্ত্র দিয়ে তাকে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। তবে কেন হত্যাকাণ্ড ঘটেছে, তা এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি। লাশ ময়নাতদন্তের জন্য সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। হত্যার রহস্য উদঘাটনে কাজ করছে পুলিশ। হত্যাকাণ্ডে যারাই জড়িত অবশ্যই তাদের খুঁজে বের করে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে।’

অপরদিকে, বুধবার সকালে পৌরসভার কালীবাড়ি এলাকার ঝোপ থেকে মন্টু দাসের লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। মঙ্গলবার রাতের কোনও একসময় তাকে দুর্বৃত্তরা হত্যা করেছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

স্বজনদের দাবি, মামলা-সংক্রান্ত বিরোধের জেরে হত্যা করা হয়েছে। লাশের সুরতহাল তদন্ত শেষে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) আবদুল হালিম।

মন্টুর স্বজন ও পুলিশের ধারণা, মঙ্গলবার রাতের কোনও একসময় হত্যা করা হয়েছে। এদিন রাত ১টার দিকে স্বজনরা মন্টুর লাশ দেখতে পেয়ে জাতীয় জরুরি সেবার ৯৯৯ নম্বরে ফোন দিয়ে পুলিশকে খবর দেন।

আতঙ্কে আছেন মন্টু চন্দ্র দাসের স্বজনরা

স্বজনরা জানিয়েছেন, রাতে বাড়িতে না আসায় মন্টুর মোবাইল ফোনে কল দিলে বাড়ির পেছনে পুকুর পাড়ে মোবাইলের আওয়াজ শুনতে পান তারা। পরে সেখানে গিয়ে লাশ দেখতে পান। তখন মন্টুর পরনের কাপড় ছিল ভেজা, হাতে কামড়ের দাগ ও সারা শরীরে কাদা মাখা ছিল। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে লাশ উদ্ধার করে ১০০ শয্যা বিশিষ্ট জেলা সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠায়।

স্বজনরা আরও জানান, সপ্তাহখানেক আগে সপ্তম শ্রেণিতে পড়ুয়া মেয়েকে ধর্ষণের অভিযোগে আদালতে মামলা করেন মন্টু। সেই মামলার ১ নম্বর আসামি জেলহাজতে থাকায় ওই আসামির বন্ধু ও স্বজনরা তাকে হত্যা করতে পারে।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবদুল হালিম বলেন, ‘খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে মন্টুর লাশের সুরতহাল তৈরি করেছি। প্রাথমিকভাবে হত্যাকাণ্ড হিসেবে ধারণা করা হচ্ছে। তবে পরিবার যাদের সন্দেহ করছেন, সে বিষয়ে তদন্ত চলছে। লাশ ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হয়েছে। মৃত্যুর রহস্য উদঘাটনে কাজ করছে পুলিশ।’

আরও পড়ুন: সপ্তাহখানেক আগে করেন ধর্ষণ মামলা, ঝোপে মিললো যুবকের মরদেহ

Source link

Related posts

শরীয়তপুরে বাড়ছে ডায়রিয়ার প্রকোপ

News Desk

সড়কে ৪ ঘণ্টা বিক্ষোভ করে দাবি আদায় করলেন এক গার্মেন্টের শ্রমিকরা

News Desk

নৌকার লড়াইয়ে ঢাকায় ব্যস্ত সিলেটের নেতারা

News Desk

Leave a Comment