কোটাবিরোধী আন্দোলনে সংঘর্ষে নিহত ছাত্রলীগ কর্মী সবুজের বাড়িতে চলছে মাতম। সবুজ ঢাকা কলেজের পরিসংখ্যান বিভাগের ২০১৮-২০১৯ শিক্ষাবর্ষের আবাসিক শিক্ষার্থী ছিলেন। তিনি ওই কলেজের স্নাতকোত্তর (মাস্টার্স) শিক্ষার্থী এবং কলেজ শাখার ছাত্রলীগ কর্মী।
সবুজ নীলফামারী সদর উপজেলার চওড়া বড়গাছা ইউনিয়নের আরাজি দলুয়া বাংলাবাজার গ্রামের ভ্যানচালক রহিম বাদশার ছেলে। তার তিন ছেলে এবং এক মেয়ের মধ্য সবুজ দ্বিতীয়। ছোট ছেলে মানসিক রোগে ভুগছে। রহিম বাদশার আদি নিবাস কুড়িগ্রাম জেলায়।
স্বজনদের আহাজারিতে পুরো গ্রামের পরিবেশ ভারী হয়ে উঠেছে। সবুজের মা সূর্য বানু বিলাপ করে কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘ও সবুজ বাবা তুই কোনঠে, মা কয়া একটা ডাক দিবে না বাবা। বাবা কোন দিন বাড়িত আসিবে দরজা খুলি থাকো। ওর জন্য তরকারি রান্না করি সারা রাত্রো বইয়া থাকো। ও আমার বাবা কই গেলিরে, আয় একটু বুকে জড়ি ধরো।’
তিনি আরও বলেন, ‘ছোট ছেলেকে দিয়া মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) বিকাল ৪টায় সবুজকে ফোন দিলে ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। আবার সন্ধ্যা ৭টায় ফোন দিয়াও পাই নাই। ওর বন্ধুরা আসি কয়, সবুজকে ফোনে পাওয়া যাচ্ছে না।’ এরপর থেকেই স্বজনরা কান্নায় ভেঙে পড়েন।
নিহত সবুজের মা বলেন, ‘মনে কত আশা ছিল, লেখাপড়া শিখি বড় হবে চাকরি করবে। সব আশা শেষ হয়া গেলো। আমার স্বামী গত বুধবার (৩ জুলাই) মানিকগঞ্জে কাম (কাজ) করতে গেছে। সেও খবর পেয়ে ছেলের লাশের সাথে বাড়ি ফিরছে।’ কথাগুলো বলতে বলতেই মূর্ছা যাচ্ছেন সূর্য বানু।
সবুজের এক চাচি জাহানারা বেগম জানান, ছেলের শোকে পাথর হয়ে গেছেন ওর মা। সবুজের লেখাপড়ার খরচ, ছোট ছেলের চিকিৎসার টাকা জোগাড় করতে ওর বাবা কাজে গেছে। অভাবের সংসার তাদের।
শোকে কাতর সবুজের মা বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন আর বলছেন, ‘এক সপ্তাহ ধরে ছেলে ও স্বামীর সঙ্গে কথা হয়নি। বাড়িতে একমুঠো চাউল নাই, ফোনে টেকা নাই, কথা বলতে পারিনি। বাড়িতে কিছু নাই বাবা, খালি হাত নিয়া পড়ি আছি। আমাদের আল্লাহ ছাড়া দেখার কেউ নাই।’
সবুজের বড় বোন বছিরন বেগম বলেন, ‘সবুজকে নিয়ে আমাদের পরিবারের অনেক আশা ছিল। ভাই লেখাপড়া শেষ করে চাকরি করে বুড়ো বাবা, মা ও ছোট ভাইকে দেখাশোনা করবে। সব আশা আল্লাহ কেড়ে নিয়া গেছে। আমাদের অভাবের সংসার অভাবই রইল। এক ভাইয়ের তো অসুখ দেখার কেউ রইল না।’
জয়পুরহাটের সদর উপজেলা থেকে আসা সবুজের মামা আব্দুল হাকিম বলেন, ‘আমার দুলাভাইয়ের জীবনটা কষ্টের মাঝেই চলছে। ছেলেকে নিয়ে অনেক স্বপ্ন ছিল, কিন্ত সেই স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে গেলো। অভাব তাদের নিত্যসঙ্গী ছিল। অর্থের অভাবে সবুজের লেখাপড়া ও সংসারের খরচ চালাতে অনেকসময় বিভিন্ন জেলায় কৃষিশ্রমিকের কাজের জন্য যেতে হয়। ছেলের এত বড় ঘটনা সে রইলো মানিকগঞ্জে। ছেলের জন্য ভ্যান চালিয়েও টাকার জোগাড় করে লেখাপড়া খরচ জোগাতেন তিনি। সেই ছেলে আজ লাশ হয়ে বাড়ি ফিরছে।’
চওড়া বড়গাছা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আবুল খায়ের বিটু জানান, বুধবার (১৭ জুলাই) বিকাল সাড়ে ৩টায় ঢাবি চত্বরে জানাজা শেষে তারা নীলফামারীর উদ্দেশে রওনা দিয়েছেন। বৃহস্পতিবার (১৮ জুলাই) সকাল ১০টার দিকে তার গ্রামের বাড়িতে জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হবে। স্থানীয় সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা আসাদুজ্জামান নূর জানাজায় অংশগ্রহণের কথা রয়েছে।