ভোলার বিচ্ছিন্ন দ্বীপ উপজেলা মনপুরায় ২৪ ঘন্টায় জাতীয় গ্রীডের বিদ্যুতের দাবীতে হাজারো মানুষের উপস্থিতিতে দীর্ঘ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে। ‘বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের মনপুরায় জাতীয় গ্রিড থেকে বিদ্যুৎ চাই’ন্যায্যমূল্যে জাতীয় গ্রীডের বিদ্যুৎ চাই’ ‘জাতীয় গ্রিডের বিদ্যুৎ চাই, শেখ হাসিনার বিদ্যুৎ চাই’ সম্বলিত ব্যানার ফেস্টুন নিয়ে নিরবিচ্ছিন্ন ও ন্যায্যমূল্যে বিদ্যুৎ সরবরাহের দাবিতে মানববন্ধন করেছে ভোলার মনপুরার জাতীয় গ্রিডের বিদ্যুৎ চাই নাগরিক কমিটি। মনপুরা প্রেসক্লাবের সামনে অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে হাজারো মানুষ তাদের একমাত্র দাবী জাতীয় গ্রীডের বিদ্যুৎ চাই। আর কোন দাবী নাই সরকারী রেটে বিদ্যুৎ চাই।
এই দাবী নিয়ে মানববন্ধনে সকল শ্রেনীর পেশার মানুষ একত্রিত হয়েছেন। “সৌরবিদ্যুতের আলো মিটিমিটি করে জ্বলে। এটা কোন শক্তিশালী বিদ্যুৎ নয়। সাধারন বিদ্যুৎ খরচের তুলনায় এই বিদ্যুতের খরচ চার থেকে পাঁচগুন বেশী। ফলে বিচ্ছিন্ন এই দ্বীপ উপজেলার গরীব ও অসহায় মানুষ গুলোর মরার উপর খরার ঘা হয়ে চেপে বসেছে সোলার বিদ্যুৎ। আমরা এই বিদ্যুৎ চাইনা। আমাদের দাবী একটাই, জাতীয় গ্রীডের বিদ্যুৎ চাই।” মানববন্ধনে ‘জাতীয় গ্রীডের বিদ্যুৎ চাই আন্দোলন নাগরিক কমিটি’র আহবায়ক রিয়াদ হোসেন এসব কথা বলেন।
মানববন্ধনে বক্তারা দাবি করেন, দেশের একমাত্র উপজেলা মনপুরা যেখানে উপজেলা সদরে নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ নেই। রাতে মাত্র ৬ ঘন্টা বিদ্যুৎ থাকে। এছাড়াও মনপুরায় ৩ টি ইউনিয়নে সোলার গ্রিডের মাধ্যমে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হচ্ছে। সোলার গ্রীড গ্রাহকের কাছ থেকে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দাম নিচ্ছে ৩০ টাকা। যা এখানকার মানুষের জন্য কষ্টসাধ্য। মুজিববর্ষে ন্যায্যমূল্যে ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়ার সরকারের যে অঙ্গীকার তা বাস্তবায়ন হয়নি। এই অবস্থায় মনপুরায় জাতীয় গ্রিড থেকে নিরবিচ্ছিন্ন ও ন্যায্যমূল্যে বিদ্যুৎ সরবরাহের দাবি করেন আন্দোলন কারীরা। মানববন্ধনে অংশগ্রহন করা মানুষগুলো জাতীয় গ্রীড থেকে বিদ্যুৎ দাবী করে বলেন, দেখুন আমরা মনপুরাবাসী কতবড় বৈষম্যের স্বীকার। পদ্মা নদীর তলদেশ দিয়ে ফরিদপুরের দূর্গম চরে সাবমেরিন কেবলের মাধ্যমে জাতীয় গ্রীডের বিদ্যুৎ গিয়েছে। সেখানে মাত্র ১০ হাজার পরিবার তবুও সেখানে বিদ্যুৎ গেল।
এছাড়া ভোলা সদরের ভবানীপুর, মেদুয়া ও কাচিয়া চর। তজুমদ্দিন উপজেলার মলংচরা, সোনাপুর, চর জহিরউদ্দিন, চর মোজাম্মেল ও চর আবদুল্লাহ। চরফ্যাশন উপজেলার চর কুকরি-মুকরি ও মুজিব নগর সহ দেশের ১৬টি চরে সাবমেরিন কেবলের মাধ্যমে বিদ্যুৎ পৌছে দেওয়ার কাজ দ্রুত গতিতে চলছে। অথচ দেড়লক্ষ লোকের আবাসভ‚মি বিচ্ছিন্ন দ্বীপ মনপুরা একটি উপজেলা হওয়া সত্বেও সাবমেরিন ক্যাবলের আওতায় আসেনি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মুজিব শতবর্ষে সব গুলো চরে সাবমেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে বিদ্যুৎ পৌছে দেওয়ার ঘোষনা দিয়েছেন। সেই প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন হচ্ছেনা এই উপজেলায়। তারা চাচ্ছেন, পুরো মনপুরায় সোলার মিনি গ্রীডের মাধ্যমে গ্রাহকদের বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে। এটা বাস্তবায়ন হলে এখানকার মানুষ ৩০ টাকা প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ বিল দিতে না পেরে বিদ্যুতের উপর আস্থা হারিয়ে ফেলবে। এবং একটা সময় তারা বিদ্যুৎ সুবিধা বঞ্চিত হয়ে পড়বেন বলে আশংকা করছেন সচেতন মহল।
মানববন্ধনে ব্যানার, ফেস্টুন ও লিফলেট নিয়ে হাজার হাজার মানুষ অংশগ্রহন করেন । এই সময় বক্তারা আরও বলেন, বর্তমান সরকারের বিদ্যুৎ খাতের সাফল্য তাৎপর্যময় ও প্রশংসনীয়। সরকার নিরলস ভাবে বিদ্যুৎ খাতের উন্নয়ন করে যাচ্ছে। ফলশ্রতিতে গ্রাম গুলিও বিদ্যুতের আওতায় আসছে। এই দ্বীপের মানুষ এখনো নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সুবিধা বঞ্চিত। আমরা সোলার বিদ্যুৎ চাইনা, চাই জাতীয় গ্রীডের নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ। মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন মনপুরা উপজেলা আ’লীগের সহসভাপতি একেএম শাহাজান, হাজীর হাট ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শাহরিয়ার চৌধুরী দ্বীপক, দক্ষিন সাকুচিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান অলি উল্লাহ কাজল, মনোয়ারা বেগম মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ মোঃ মহিউদ্দিন, বিআরডিবি’র সাবেক চেয়ারম্যান মোঃ নিজামউদ্দিন মিয়া, উপজেলা যুবলীগের সিনিয়র সহ সভাপতি নিজামউদ্দিন হাওলাদার, মনপুরা প্রেসক্লাব সভাপতি মোঃ আলমগীর হোসেন, ঢাকা মহানগর (দক্ষিন) ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক এএসএম ফারেজ সামী, উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি শামছুদ্দিন সাগর, মোঃ সামাদ ও মানববন্ধন বাস্তবায়ন কমিটির আহবায়ক এ.এফ.এম রিয়াদ।
পরে আন্দোলনকারীরা মানববন্ধন শেষে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ শামীম মিঞা ও উপজেলা চেয়ারম্যান শেলিনা আকতার চৌধুরীর মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করেন। এব্যাপারে মনপুরা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ শামীম মিঞা বলেন, একটি স্মারকলিপি পেয়েছি। বিষয়টি জেলা প্রশাসক মহোদয়কে অবহিত করা হয়েছে।