বগুড়ার গাবতলীতে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনার ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ঐতিহ্যবাহী পোড়াদহ সন্ন্যাসী ও জামাই মেলা অনুষ্ঠিত হয়েছে। বুধবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) সকাল থেকে হাজারো মানুষ মেলা উপভোগ ও কেনাকাটা করেছেন। মেলার প্রধান আকর্ষণ ছিল বড় বড় মাছ ও মিষ্টি।
স্থানীয় সন্ন্যাসী পূজা উপলক্ষে ঐতিহ্যবাহী পোড়াদহ মেলায় ছিল প্রশাসনের কঠোর নজরদারি। মেলায় প্রসিদ্ধ হলো বড় বড় মাছ, হরেক রকম মিষ্টি, কাঠ বা স্টিলের ফার্নিচার, বরই (কুল), কৃষিসামগ্রীসহ বিভিন্ন আসবাবপত্র ও খাদ্যদ্রব্য। এ ছাড়া বিনোদনমূলক আয়োজন ছিল সার্কাস, মোটরসাইকেল, নৌকা খেলা ও নাগরদোলা।
এবারের মেলায় মাছের দাম চড়া হলেও বিক্রি হয়েছে। বড় বড় রুই, কাতলা, চিতল, ভেউস, বোয়ালসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ। মেলায় ভেউস মাছ কেজিপ্রতি বিক্রি করা হয়েছে ১৪০০ থেকে ১৯০০ টাকায়। বোয়াল মাছ কেজিপ্রতি বিক্রি করা হয়েছে ৬০০ থেকে ১২০০ টাকায়। রুই মাছ কেজিপ্রতি বিক্রি করা হয়েছে ৪০০ থেকে ৮০০ টাকায়। কাতলা মাছ কেজিপ্রতি বিক্রি করা হয়েছে ৪০০ থেকে ১১০০ টাকায়।
মেলায় মাছ আকৃতির ১২ কেজি ওজনের মিষ্টি ৬৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে। এ ছাড়া বাহারি মিষ্টান্নসামগ্রী এ মেলার আরেক আকর্ষণ। মাছ আকৃতির মিষ্টি, রসগোল্লা, সন্দেশ, জিলাপি, নিমকি, তিলের নাড়ু, খই, শুকনা মিষ্টি পাওয়া যায় এখানে। এ ছাড়াও মেলার বাহারি ডিজাইনের কসমেটিকস, খেলনা, গিফটসামগ্রী, চুড়ি, কানের দুল, মালা, কাজলসহ নানা ধরনের প্রসাধনী ও খেলনাসামগ্রী পাওয়া যায়।
এ ছাড়াও মেলায় পাওয়া যায়, কাঠের, স্টিল ও লোহার বিভিন্ন আসবাবপত্র। এলাকার প্রবীণরা জানান, বগুড়ার গাবতলী উপজেলার মহিষাবান ইউনিয়নের গোলাবাড়ী বন্দরসংলগ্ন প্রায় চারশ বছর আগে থেকে স্থানীয় সন্ন্যাসী পূজা উপলক্ষে গাড়ীদহ নদীঘেঁষে সম্পূর্ণ ব্যক্তিমালিকানা জমিতে একদিনের জন্য মেলাটি বসে। দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে হাজার হাজার মানুষ মেলায় এসে ক্রয়-বিক্রয় করে। মেলা উপলক্ষে আশপাশের গ্রামের প্রতিটি বাড়িতে আত্মীয়স্বজন এসে ভরে যায়। ঈদ বা কোনও উৎসবে জামাই-মেয়েসহ অন্যান্য আত্মীয়স্বজনদের দাওয়াত না দিলেও তেমন কোনও সমস্যা নেই। তবে মেলা উপলক্ষে দাওয়াত দিতেই হবে, যা রেওয়াজে পরিণত হয়েছে।
মেলাটি একদিনের জন্য হলেও ওই এলাকায় মেলার আমেজ থাকে সপ্তাহব্যাপী। মেলাটি জন্মের পর থেকে মহিষাবান গ্রামের মণ্ডল পরিবার পরিচালনা করে আসছে। স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ থেকে মেলার লাইসেন্স দেওয়া হয়। এবারও মেলাটির নেতৃত্বে ছিলেন মণ্ডল পরিবারের সদস্য ও স্থানীয় মহিষাবান ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল মজিদ মণ্ডল।
বাংলা ক্যালেন্ডারের প্রতিবছরের মাঘ মাসের শেষ অথবা ফাল্গুন মাসের প্রথম বুধবার মেলাটি হয়ে থাকে।
মেলার পরিচালক ও মহিষাবান ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল মজিদ মণ্ডল জানান, প্রশাসনসহ এলাকাবাসীর সহযোগিতায় শান্তিপূর্ণভাবে মেলা সম্পন্ন হয়েছে।
গাবতলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আশিক ইকবাল জানান, প্রতিবছরের মতো এবারও পোড়াদহ মেলায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা কঠোর নিরাপত্তায় নিয়োজিত ছিলেন।
অপরদিকে, পোড়াদহ মেলা শেষে বৃহস্পতিবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) সকাল থেকে মহিষাবান গ্রামে বউ মেলা অনুষ্ঠিত হবে। এই মেলায় পুরুষদের প্রবেশ নিষেধ থাকায় তরুণী, গৃহবধূসহ সব বয়সের মেয়েরা স্বাচ্ছন্দ্যে কেনাকাটা করে থাকেন।