ভারতের ত্রিপুরা থেকে নেমে আসা ঢলে মৌলভীবাজার জেলায় পানি বাড়তে থাকায় বন্যাকবলিত এলাকার মানুষের মধ্যে চরম উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বিরাজ করছে। গত তিন দিনে জেলার সাত উপজেলার ৩৭ ইউনিয়ন ও পৌরসভা এলাকার বাসাবাড়ি, আঞ্চলিক মহাসড়ক, গ্রামীণ সড়ক, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান তলিয়ে গেছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন তিন লক্ষাধিক মানুষজন। জেলা সদরের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে এসব উপজেলার।
স্থানীয় সূত্র জানায়, শহরের ভেতর দিয়ে বয়ে চলা মনু নদের পানি শহরের সেন্ট্রাল রোডের বিভিন্ন দোকানের নিচ দিয়ে শহরে ঢুকে পড়েছে। যেকোনো সময় শহররক্ষা বাঁধ ভেঙে শহর তলিয়ে যাওয়ার আতঙ্কে আছেন বাসিন্দারা। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাইকিং করে বলা হয়েছে বাসাবাড়ি ও দোকানের মালামাল নিরাপদে সরিয়ে নেওয়ার জন্য। ইতোমধ্যে যেসব দোকানে পানি ঢুকেছে, সেখানের মালামাল সরানো হচ্ছে।
শহরের সেন্ট্রাল রোডের ব্যবসায়ী সুমন আহমদ বলেন, ‘আমাদের অনেকের দোকানে পানি ঢুকেছে। আমরা সব মালামাল সরিয়ে নিয়েছি। যেকোনো সময় শহররক্ষা বাঁধ ভেঙে পুরো শহর তলিয়ে যাওয়ার শঙ্কায় আছি।’
বৃহস্পতিবার (২২ আগস্ট) সন্ধ্যা ৬টায় জেলা প্রশাসন থেকে জানানো হয়, জেলার সাত উপজেলায় বন্যা আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা এক লাখ ৯৫ হাজার জন। ৪৭টি আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছেন ছয় হাজার ৬৫ জন। পৌরসভা ও ইউনিয়ন মিলে ৪৭ এলাকায় প্লাবিত হয়ে ডুবেছে ২১২ গ্রাম। প্রশাসনের পক্ষ থেকে ২৮৫ মেট্রিক টন চাল ও সাত উপজেলায় ২০ লাখ ৫০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। মেডিক্যাল টিম রয়েছে ২৫টি।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্যমতে, জুড়ী নদীর পানি বিপদসীমার প্রায় ১৯৫ সেন্টিমিটার ওপর, ধলাই নদীর পানি বিপদসীমার ২২ সেন্টিমিটার, মনু নদীর পানি চাঁদনীঘাটে ১১৯ সেন্টিমিটার ও রেলওয়ে ব্রিজে ৭০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। শেরপুর পয়েন্টে কুশিয়ারার পানি বিপদসীমার ১১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে বইছে।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. শাহনেওয়াজ সিরাজী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত পুকুর ও খামারের সংখ্যা এক হাজার ১৬৮টি। ক্ষতিগ্রস্ত মাছের পরিমাণ ৩২৪ মেট্রিক টন। এসব মাছের মূল্য পাঁচ কোটি ৩৬ লাখ টাকা। সব মাছ ভেসে গেছে। সব মিলিয়ে মৎস্য খাতে ক্ষতির পরিমাণ ছয় কোটি ১১ লাখ টাকা।’
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক মো. সামসুদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘জেলায় ৩৯ হাজার ৮২ হেক্টর জমিতে আমান ধান বন্যার পানিতে ডুবে গেছে। এবার লক্ষ্যমাত্রা ছিল এক লাখ এক হাজার হেক্টর।’
জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. জাবেদ ইকবাল বলেন, ‘অব্যাহত বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে জেলার সবকটি নদ-নদীর পানি বেড়েছে। সব নদ-নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বিভিন্ন নদীর ঝুঁকিপূর্ণ স্থানগুলো মেরামতের কাজ চলছে। এ ছাড়া শহররক্ষা বাঁধের ঝুঁকিপূর্ণ স্থান মেরামতের কাজ অব্যাহত রয়েছে।’
জেলা প্রশাসক ড. উর্মি বিনতে সালাম বলেন, ‘শহররক্ষা বাঁধের ঝুঁকিপূর্ণ স্থান পরিদর্শন করেছি। আমাদের পক্ষ থেকে শহরের ব্যবসায়ীদের উদ্দেশ্যে মাইকিং করা হয়েছে। ব্যবসায়ীরা দোকানের মালামাল নিরাপদে সরিয়ে নিয়েছেন। সাত উপজেলায় নগদ অর্থ ও ত্রাণসামগ্রী পাঠানো হয়েছে। আমরা সব সহায়তা দিচ্ছি।’