বিদ্যুৎ নেই, নেই নলকূপও। দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় তাই পানির সংকট দূর করতে উদ্ভাবনী প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে সরকার। প্রাকৃতিক ঝিরি-ঝরনায় বাঁধ দিয়ে পাইপের মাধ্যমে পানি পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে পাড়ার ঘরে ঘরে।
যন্ত্রচালিত প্রযুক্তি ছাড়াই মাধ্যাকর্ষণ শক্তিকে কাজে লাগিয়ে দূর করা হচ্ছে দুর্গম ১০টি গ্রামের পানির সংকট।
সরেজমিনে দেখা গেছে, সরকার এলজি এসপি প্রকল্পের আওতায় জেলার দিঘীনালা উপজেলার বাবুছড়া ইউনিয়নের বিদ্যুৎ ও যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন দুর্গম ১০ পাহাড়ি গ্রামে এমন প্রকল্পের মাধ্যমে পানি সরবরাহ করছে। প্রায় ১০ হাজার লোক পাচ্ছে এই সুবিধা।
দিঘীনালা উপজেলার চেয়ারম্যান মোহাম্মদ কাশেম বলেন খাগড়াছড়ির অনেক এলাকা পাথুরে। পানি স্তর পাওয়া যায় না। দুর্গম অনেক গ্রামে নেই বিদ্যুৎ। এসব গ্রামগুলোতে সারা বছরই পানির সংকট থাকে। বেশি সমস্যা হয় শীত মৌসুমে। এ কারণেই এমন উদ্ভাবনী প্রকল্প নিয়েছে সরকার। এতে পানির সমস্যা বেশখানিকটা লাঘব হয়েছে। পাহাড়ি পাড়াগুলোতে এখন ঘরের দোড়গোড়ায় পানি এসেছে পাইপে চড়ে।
শালুয়া কারবারি পাড়া, নারাইছড়ি, বাবুপাড়া, নতুনপাড়া এলাকার বাসিন্দা দয়া মোহন চাকমা, সুমন চাকমা, কিশোর চাকমা ও রূপনা চাকমারা বললেন, বর্ষায় বৃষ্টির পানি ধরে রাখার পাশাপাশি খাল-বিল, নদীর মাধ্যমে পানির সমস্যার কিছুটা সমাধান করা গেলেও শীতে বিপদে পড়তে হতো। শীতে পানির অনেক উৎসই শুকিয়ে যায়। তারা ইউনিয়ন পরিষদের মাধ্যমে জেলা প্রশাসককে জানালে, তিনি প্রকল্প হাতে নেন। এতে অল্প খরচে ঝিরিতে বাঁধ দিয়ে পাইপের মাধ্যমে বাড়ি বাড়ি পানি পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। এলাকাবাসীর পানির কষ্ট দূর হয়েছে।
বাবুছড়া ইউনিয়ন পরিষদের সচিব বেগিন চাকমা বলেন, বাবুছড়া ইউনিয়নের বেশিরভাগ এলাকা দুর্গম। বিদ্যুৎ ও নলকূপ নেই। নলকূপ বসানোর সুযোগও নেই। এসব বিষয় বিবেচনায় করে পাহাড়ি এসব এলাকায় অগ্রধিকার ভিত্তিতে এসব প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে। প্রতিটি প্রকল্পে বাঁধ, পাইপ ও ট্যাংকি বাবদ আড়াই লাখ থেকে পাঁচ লাখ টাকা পর্যন্ত খরচ হচ্ছে।
খাগড়াছড়ির এলজিএসপি প্রকল্পের জেলা ফ্যাসিলিটেটর অরুণদর্শী চাকমা বলেন, দুর্গম পাহাড়ে জরিপ চালিয়ে ও এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে ঝিরিতে বাঁধ দিয়ে পাইপের মাধ্যমে পানি সমস্যা সমাধানে কাজ করছেন তারা।
জেলা প্রশাসক প্রতাপ চন্দ্র বিশ্বাস বলেন, যেসব এলাকায় নলকূপ বা বিদ্যুৎ নেই সেসব এলাকায় প্রাকৃতিক ঝিরি-ঝরনা কাজে লাগিয়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে। এতে এসব এলাকার প্রায় ১০ হাজার মানুষের পানির কষ্ট দূর হয়েছে। তবে পানির উৎস টিকিয়ে রাখতে প্রাকৃতিক বন সংরক্ষণের জন্য এলাকাবাসীর ভূমিকা রাখার ওপরও জোর দেন তিনি।