রাখাইনে যুদ্ধ: সীমান্তে আতঙ্ক কাটবে কবে
বাংলাদেশ

রাখাইনে যুদ্ধ: সীমান্তে আতঙ্ক কাটবে কবে

কক্সবাজারের টেকনাফ সীমান্তবর্তী বাসিন্দাদের আতঙ্ক কাটছেই না। রোহিঙ্গা-অধ্যুষিত মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে জান্তা বাহিনীর সঙ্গে বিদ্রোহী আরাকান আর্মির চলমান তুমুল যুদ্ধে একের পর এক মর্টার শেল ও গোলার বিকট শব্দে ভীতিকর পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। সর্বশেষ ঈদের দিন বৃহস্পতিবার (১১ এপ্রিল) দিবাগত রাত থেকে শুরু হয়ে শুক্রবার বিকাল ৩টা পর্যন্ত টেকনাফ-সেন্ট মার্টিন দ্বীপে সীমান্তে থেমে থেমে ভারী মর্টার শেলের শব্দ পেয়েছে সীমান্তের লোকজন।

সীমান্তের বাসিন্দারা বলছেন, মিয়ানমার সরকারি বাহিনীর সঙ্গে আরাকান আর্মির মধ্য এখনও যুদ্ধ চলছে। ওপারের বেশ কিছু সীমান্তচৌকি দখলে নিয়েছে আরাকান আর্মি। আবার সংঘর্ষে টিকতে না পেরে সরকারি বাহিনীর অনেক সদস্য বাংলাদেশে ঢুকে পড়েছিলেন। এখনও তেমন পরিস্থিতির আশঙ্কা করছেন তারা।

ওপারের যুদ্ধের কারণে টেকনাফের উত্তরপাড়া, লম্বাবিল, উনচিপ্রাং, কাঞ্জরপাড়া, হ্নীলা, মোলভীপাড়া, ওয়াব্রাং, ফুলের ডেইল, চৌধুরীপাড়া, জালিয়াপাড়া এলাকায় ওপার থেকে থেমে থেমে গুলি ও মর্টার শেলের শব্দ পাওয়া গেছে। অন্যদিকে রাখাইনের কুমিরহালি, নাইচদং, কোয়াংচিগং, শিলখালী, নাফপুরাসহ সেন্ট মার্টিন দ্বীপের ওপারের হাসসুরাসহ কয়েকটি গ্রামে গৃহযুদ্ধ চলছে। এতে ওপারের গোলার বিকট শব্দে কাঁপছে এপার।

সীমান্ত-ঘেঁষা শাহপরীর দ্বীপের বাসিন্দা আব্দুর রহমান বলেন, ‘ঈদের রাত (বৃহস্পতিবার) থেকে মিয়ানমারের চলমান যুদ্ধের তীব্রতা বেড়েছে। সেখানকার গোলার বিকট শব্দে আমাদের ঘরবাড়ি কাঁপছে। আজ শুক্রবার জুমার নামাজের পরও বিকট শব্দ পাওয়া গেছে। শব্দ এত তীব্র যে নারী-শিশুরা ঘুমাতে পারছে না। এভাবেই আতঙ্কে দিন পার করছি আমরা।’

নাফ নদীর পাশে বেড়িবাঁধ উত্তরপাড়ার বাসিন্দা মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন বলেন, ‘গতকাল রাত থেকে শুরু হওয়া যুদ্ধ এখনও বন্ধ হয়নি। এর আগেও গোলার বিকট শব্দ পেয়েছি তবে এত বিকট ছিল না। মনে হচ্ছে নাফ নদীও কেঁপে উঠছে। শুনেছি যুদ্ধ আরও কয়েক দিন চলবে।’

তবে রাখাইনে চলমান যুদ্ধের কারণে নতুন করে বাংলাদেশে যাতে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ না ঘটে, সে জন্য বাড়তি নিরাপত্তাব্যবস্থা নিয়েছে বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড ও বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)।

এ বিষয়ে টেকনাফ-২ বিজিবির অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘রাখাইনে গোলাগুলি চলছে। যে কারণে এপারে বিকট শব্দ পাওয়া যাচ্ছে। কিন্তু আমাদের সীমান্তবর্তী লোকজনের ভয়ের কোনও কারণ নেই। সীমান্তে বিজিবি কঠোর অবস্থানে রয়েছে। পাশাপাশি এ সমস্যাকে কেন্দ্র করে নতুন করে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ যাতে না ঘটে, সে জন্য সীমান্তে টহল জোরদার রয়েছে।’

এদিকে মিয়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশের সীমান্তের দৈর্ঘ্য প্রায় ২৮৩ কিলোমিটার। এর বড় একটা অংশই পড়েছে কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফ এবং বান্দরাবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলায়। এ সীমান্তে গত বছর থেকে কক্সবাজার ও বান্দরবান সীমান্তে বিদ্রোহী আরাকান আর্মির (এএ) সঙ্গে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ও দেশটির সীমান্তরক্ষী বর্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপি) গোলাগুলির ঘটনা ঘটে আসছে। সীমান্ত এলাকার বাসিন্দারা এর সঙ্গে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছে। যদিও গোলাগুলি হলে সবাই আতঙ্কিত হয়ে পড়ে।

জাদিমুড়া নাফ নদীর কাছাকাছি সীমান্তের বাসিন্দা মো. আলী বলেন, ‘সবর্শেষ আমি শুক্রবার বিকাল ৩টায় ওপারের গোলার বিকট শব্দ পেয়েছি। ঘরে থাকা পরিবারের সদস্যরা বজ্রপাত মনে করে ভয়ে কেঁপে উঠেছিল। যেভাবে মিয়ানমার থেকে গুলির শব্দ পাই, মনে হয় এ পারে এসে গায়ের ওপর পড়ছে। লালদিয়া এলাকায় মর্টার শেল ও গুলির শব্দ বেশি পাওয়া যায়। তবু আপাতত এখানে রয়েছি। পরিস্থিতি দেখে সিদ্ধান্ত নেবো।’

টেকনাফ সীমান্তের হ্নীলা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান রাশেদ মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘ঈদের দিন থেকে টানা দুদিন ধরে থেমে থেমে মর্টার শেল ও গুলির শব্দ ভেসে আসছে। এতে স্থানীয়দের মাঝে আতঙ্ক বিরাজ করছে। মর্টার শেল ও গুলির শব্দে কাঁপছে সীমান্ত এলাকা। বজ্রপাতের মতো শব্দ হচ্ছে। এ কারণে মানুষ নির্ঘুম রাত কাটছে।’

কোনও ধরনের আতঙ্কিত না হতে বলেলে প্রশাসন

অন্যদিকে সেন্ট মার্টিনের বাসিন্দারা ভোর থেকে দুপুর পর্যন্ত রাখাইন থেকে মর্টার শেল ও গুলির শব্দ শুনেছে বলে জানিয়েছেন দ্বীপের বাসিন্দারা।

এ বিষয়ে সেন্ট মার্টিন দ্বীপে এক আবাসিক হোটেলের পরিচালক মো. ইসহাক বলেন, ‘প্রবাল দ্বীপের পূর্ব পাশ থেকে (রাখাইনে) ব্যাপক গোলার বিকট শব্দ এপারে শোনা যাচ্ছে। শব্দে হোটেলের দরজা-জানলা কাঁপছে। এভাবে থেমে থেমে দুদিন ধরে গোলার বিকট শব্দ পাচ্ছি আমরা। ভয়ে আছি আমরা।’

গতকাল থেকে সীমান্তে গোলার বিকট শব্দ বেড়েছে জানিয়ে টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আদনান চৌধুরী বলেন, ‘আমরা সীমান্তে নজর রাখছি পরিস্থিতি কোন দিকে যায়। তবে সীমান্তে বসবাসকারী মানুষ যাতে কোনও ধরনের আতঙ্কিত না হয়, সে জন্য আমরা খোঁজখবর রাখছি। এ ছাড়া নাফ নদীর সীমান্তে আমাদের বিজিবি ও কোস্ট গার্ড সতর্ক অবস্থায় রয়েছে।’

প্রসঙ্গত, রাখাইনে চলমান যুদ্ধে টিকতে না পেরে গত মাসে সে দেশের ১৮০ জন মিয়ানমার বর্ডার পুলিশ  (বিজিপি) সদস্য। তারাও নাইক্ষ্যংছড়ি বিজিবি ব্যাটালিয়নে রয়েছেন। তাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে।

এর আগে গত ২ ফেব্রুয়ারি রাত থেকে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার সীমান্তের ওপারে আরাকান আর্মির সঙ্গে মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিপির সংঘর্ষ শুরু হয়। এর জের ধরে গত ৪ ফেব্রুয়ারি থেকে ৭ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বাংলাদেশে মিয়নমার থেকে পালিয়ে আসে বিজিপিসহ ৩৩০ জন। এর মধ্যে ৩০২ জন বিজিপি সদস্য, ৪ জন বিজিপি পরিবারের সদস্য, ২ জন সেনা সদস্য, ১৮ জন ইমিগ্রেশন সদস্য ও ৪ জন বেসামরিক নাগরিক ছিলেন। গত ১৫ ফেব্রুয়ারি তাদের আনুষ্ঠানিকভাবে মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো হয়।

Source link

Related posts

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে অনলাইন ক্লাস শেষ করে পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত

News Desk

ক্ষেতলালে ২১০০ ব্যালট পেপার উদ্ধার: থানায় জিডি, প্রিসাইডিং কর্মকর্তাকে শোকজ

News Desk

১৫ পদের ১১টিতে বিএনপিপন্থিরা জয়ী

News Desk

Leave a Comment