খুলনার রূপসার জাবুসা ও বটিয়াঘাটার তেঁতুলতলায় অর্থনৈতিক জোন করা সম্ভব নয় বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা)। ২০২১ সালের ১৪ আগস্ট বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান ও সিনিয়র সচিব শেখ ইউসুফ হারুন সরেজমিন এলাকা দুটি পরিদর্শন করেন। এ নিয়ে দীর্ঘ পরীক্ষায় পর বলা হয়েছে, সেখানে আপাতত অর্থনৈতিক জোন করা সম্ভব হচ্ছে না।
এর কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে—জাবুসায় নেই খাস জমি। জমি অধিগ্রহণেও ব্যয় হবে প্রায় এক হাজার ৭০০ কোটি টাকা। যা বহন করা বেজার পক্ষে সম্ভব নয়। আবার তেঁতুলতলায় ২১২ একর খাস জমি থাকলেও তা বেদখলে রয়েছে। ওই জমি দখলমুক্ত করা ব্যয়বহুল ও সময়সাপেক্ষ। এসব কারণেই খোঁজা হচ্ছে বিকল্প।
বিকল্প হিসেবে বটিয়াঘাটায় প্রস্তাবিত বঙ্গবন্ধু বোটানিক্যাল পার্কের স্থানটি বঙ্গবন্ধু শিল্পপার্ক হতে পারে বলে মনে করছে বেজা। এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন ও এলাকার সংসদ সদস্যদের সহযোগিতাও প্রয়োজন হবে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি।
বেজা সূত্রে জানা গেছে, ২০১৫ সালে বটিয়াঘাটা ও তেরখাদায় দুটি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ওই বছরের ১৯ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় এতে সম্মতি দেয়। ২০১৭ সালে খুলনা জেলা প্রশাসন তেঁতুলতলা মৌজায় ৫৯৪ একর জমি অধিগ্রহণের অনুমতি চেয়ে মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেয়। কিন্তু দীর্ঘ সময়েও জমি অধিগ্রহণের সিদ্ধান্ত দেয়নি মন্ত্রণালয়।
এদিকে, যোগাযোগ ব্যবস্থার সুবিধার কথা উল্লেখ করে রূপসার জাবুসা মৌজায় ৬৩৯ একরের আরেকটি জমিকে অর্থনৈতিক অঞ্চলের জন্য বিবেচনায় নেওয়া হয়। সেখানেও অধিগ্রহণে দরকার বড় অর্থ।
ভূমি অফিস থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, রূপসার জাবুসা মৌজায় প্রতি শতাংশ শিল্প জমি সরকার নির্ধারিত মৌজা মূল্য দুই লাখ, বাস্তুভিটা এক লাখ ৪৪ হাজার ৪৪৯ টাকা, বিলান জমি ৮৫ হাজার ৮৮০ টাকা, ডাঙ্গা এক লাখ ৯ হাজার ৭০৪ টাকা, বাগান ৩৭ হাজার ৭৭৭ টাকা ও পুকুর ৪৬ হাজার ৪২৮ টাকা।
কিন্তু উল্লিখিত ৬৩৯ একরের মধ্যে অধিকাংশই বিলান হিসেবে চিহ্নিত। অধিগ্রহণের জন্য জমির মৌজা মূল্যের তিনগুণ ও স্থাপনার মূল্য জমির মালিককে দেওয়ার নিয়ম রয়েছে। মূলত জাবুসা মৌজায় সরকার নির্ধারিত উচ্চমূল্যের জমির কারণেই এখানে প্রকল্প স্থাপনে অনীহা রয়েছে বেজার।
স্থানীয়দের মতে, প্রতি শতাংশ বিলান জমির বাজার মূল্য ৩০-৪৫ হাজার টাকা। যেখানে সরকার নির্ধারিত মূল্য হলো ৮৫ হাজার ৮৮০ টাকা। বাজার মূল্য সরকার নির্ধারিত মূল্যের প্রায় অর্ধেক। বাইপাস রোড সংলগ্ন জমির দামও মৌজা মূল্যের সমান। কোনও কোনও ক্ষেত্রে তা আরও বেশি।
প্রতি বিঘা বিলান জমি ১০-১৫ লাখ টাকায়ও কেনাবেচা হচ্ছে। কিন্তু রেজিস্ট্রেশনের সময় দলিলে সরকার নির্ধারিত মৌজা মূল্য ২৮ থেকে ৩০ লাখ টাকা দেখাতে হয়। এতে প্রকৃত মূল্যের প্রায় দ্বিগুণ হারে সরকারি রেজিস্ট্রেশন ফি ও ট্যাক্স দিতে হয়। যে কারণে ক্রেতারা জমি কিনতে চান না।
তাছাড়া রূপসা সেতুর দক্ষিণে নদীভাঙনের কারণেও জমির বাজার মূল্য ও চাহিদা কম। এসব কারণে জাবুসা এলাকার জমির মালিকরা সচরাচর জরুরি প্রয়োজনেও জমি বিক্রি করতে পারেন না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন বাসিন্দা দাবি করেন, অধিগ্রহণের মাধ্যমে বেশি ক্ষতিপূরণ পাওয়া যাবে, এ আশায় স্থানীয় প্রভাবশালী মহল জমির মৌজা মূল্য বাড়িয়ে রেখেছে। দামের এই অসঙ্গতির কারণে উচ্চহারে সরকারি ফি ও ট্যাক্স দিতে হয়। যার কারণে বেসরকারি কোনও কোম্পানি এখানে প্রকল্প স্থাপন করছেন না।
জেলা প্রশাসনের এলএ শাখার তথ্য অনুযায়ী, বটিয়াঘাটার ৫৯৪ একর জমির মধ্যে খাস জমি প্রায় ২১২ একর। বাকি ৩৮২ একরের কিছু অংশ বন্দোবস্ত ও কিছু জমির মালিকানা নিয়ে দ্বন্দ্ব রয়েছে।
এখন প্রস্তাবিত প্রকল্প হিসেবে বেজার ওয়েবসাইটে বটিয়াঘাটা ও তেরখাদার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এ ছাড়া ফুলতলায়ও সম্ভাব্যতা যাচাই করা হচ্ছে বলে বেজা ও খুলনা জেলা প্রশাসন থেকে জানানো হয়েছে।