শেখ হাসিনার ‘পুতুল’ সরকার পরিচালনা করতো ভারত, হয়নি ফেলানী হত্যার বিচার
বাংলাদেশ

শেখ হাসিনার ‘পুতুল’ সরকার পরিচালনা করতো ভারত, হয়নি ফেলানী হত্যার বিচার

জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখ্য সংগঠক ও জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক সারজিস আলম বলেছেন, ‘শেখ হাসিনা তার ক্ষমতা খাটিয়েছে বাংলাদেশের নিরীহ মানুষের ওপরে। কিন্তু ওই শেখ হাসিনা কাঁটাতারের ওপারে মোদির পায়ের তলায় গিয়ে বসে থাকতো। এই কারণে ওই খুনি হাসিনা শুধু তার ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য হাজারের ওপরে আমার ভাইবোনকে নির্মমভাবে হত্যা করেছে।’

বৃহস্পতিবার (১৬ জানুয়ারি) কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলার সীমান্তবর্তী রামখানা ইউনিয়নের দীঘিরপাড় বাজার এলাকায় এক সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন।

সীমান্ত হত্যার বিচার এবং হত্যাকাণ্ড বন্ধের দাবিতে আয়োজিত ‘মার্চ ফর ফেলানী’ কর্মসূচিতে অংশ নিতে কুড়িগ্রামে যান সারজিসসহ জাতীয় নাগরিক কমিটি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ। সংগঠন দুটির কুড়িগ্রাম জেলা কমিটির আয়োজনে কর্মসূচি পালিত হয়।

ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) গুলিতে নিহত কুড়িগ্রামের কিশোরী ফেলানীর বসতভিটা রামখানা এলাকায় আয়োজিত সমাবেশে সারজিস আলম বিগত আওয়ামী লীগ সরকার ও শেখ হাসিনার ভারতের প্রতি নতজানু মনোভাবের তীব্র সমালোচনা করেন। ফেলানীর হত্যার বিচারিক প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে আওয়ামী লীগ সরকারের ব্যর্থতার সমালোচনা করে জাতীয় নাগরিক কমিটির এই মুখ্য সংগঠক বলেন, ‘একটা সরকার, নাম আওয়ামী লীগ সরকার। একটা দল, নাম আওয়ামী লীগ। তার মাথায় একজন ব্যক্তি, নাম শেখ হাসিনা। কতটা কুক্ষিগত এবং জিম্মি হয়েছিল! কতটা পুতুল হয়েছিল যেই পুতুলকে বাংলাদেশের বাইরে থেকে ভারত কিংবা ভারতের সরকার পরিচালিত করতো। এতটাই পুতুল যে একটা খুনের (ফেলানী হত্যা) পর্যন্ত বিচার করতে পারে না।’

সারজিস বলেন, ‘হাসিনা বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানগুলোকে ধ্বংস করেছে। পুলিশকে তার ক্ষমতা ব্যবহারের টুল বানিয়েছিল। এই খুনি হাসিনা বিডিআরের মতো একটা সমৃদ্ধশালী প্রতিষ্ঠানকে বিএসএফের অনুগত বিজিবি বানিয়ে রেখেছিল। সরকারি সকল অফিসকে জিম্মি করে রেখেছিল। প্রত্যেকটা জায়গায় টাকা দিয়ে কাজ করতে হয়েছে।’

উত্তরবঙ্গের প্রতি হাসিনা সরকারের বৈষম্যের সমালোচনা করে বলেন,‘খুনি হাসিনা তার ক্ষমতার বলে এই দেশের উত্তরবঙ্গের মানুষের ওপর বছরের পর বছর বৈষম্য করেছে। কয়েকটা বিল্ডিং আর অবকাঠামো করেছে। সেগুলো দিয়ে উন্নয়নের মুলা ঝোলাতে ঝোলাতে মুলার রস বের হয়ে গিয়েছে। শুধু বিল্ডিং আছে ভেতরে জিনিসপত্র নেই। দীর্ঘদিন ধরে একটা শেখতন্ত্র, গোপালতন্ত্র কায়েম করে রেখেছিল। এর সবচেয়ে বড় ভুক্তভোগী আমাদের উত্তরবঙ্গের মানুষ, এই কুড়িগ্রামের মানুষ। গোপালগঞ্জের মানুষ মানুষ, কুড়িগ্রামের মানুষ মানুষ না!’

তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে ভারতপ্রীতিকে দায়ী করে তরুণ এই সংগঠক বলেন, ‘তিস্তা মহাপরিকল্পনা চায়না (চীন) করতে চাইলো। কিন্তু যখনই তার (শেখ হাসিনা) প্রিয় ভারত তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিলো সে চায়নার কথা ভুলে গেলো। ভারতকে ছাড়া তিস্তা মহাপরিকল্পনা আর আগাচ্ছে না! যে পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে এক হাজার কোটি টাকা হলে হয় সেটার জন্য প্রতিবছর উত্তরবঙ্গের এক লক্ষ কোটি টাকা ক্ষতি করে খুনি হাসিনা। পদ্মা সেতু দক্ষিণবঙ্গের জন্য দরকার সেটা করলেন। করেন, সমস্যা নাই। পদ্মার ওপর দুইটা রাস্তার জন্য যদি ৭০-৭৫ হাজার কোটি টাকা লাগে, আমার উত্তরবঙ্গের মানুষের জন্য, তিস্তার মহাপরিকল্পনার জন্য এক হাজার কোটি টাকা হয় না?’

সমাবেশে উপস্থিত স্থানীয় জনগণের উদ্দেশে তরুণ ও ভালো মানুষদের নির্বাচিত করার পরামর্শ দিয়ে সারজিস বলেন, ‘জনপ্রতিনিধি হিসেবে আমরা তরুণদের দেখতে চাই। যতদিন তরুণ প্রজন্মের হাতে আগামীর বাংলাদেশ থাকবে, বাংলাদেশ ততদিন বিপথে যাবে না। আপনারা আমাদের ভুল ধরিয়ে দেবেন। সঠিক পথ দেখাবেন, পরামর্শ দেবেন। আপনাদের এই সন্তানদের হাতে দায়িত্ব বুঝিয়ে দিতে হবে।’

তরুণদের হাতে দেশ থাকলে ফেলানী নামে আর কোনও বোনকে কাঁটাতারে ঝুলে থাকতে হবে না। কেউ তেমন সাহস করলে তরুণ প্রজন্মের একতা তাদের বুকে কাঁপন ধরিয়ে দেবে বলেও মন্তব্য করেন সারজিস।

সমাবেশে ফেলানীর বাবা নুর ইসলাম এবং জাতীয় নাগরিক কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক ড. আতিক মুজাহিদসহ কেন্দ্রীয় ও জেলা নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। অন্যদিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় সদস্যসচিব আরিফ সোহেল, দফতর সম্পাদক জাহিদ আহসান ও সমন্বয়ক রিফাত রিদওয়ানসহ কেন্দ্রীয় ও জেলা নেতৃবৃন্দ। সমাবেশ শেষে ফেলানীর বাড়িতে গিয়ে তার কবর জেয়ারত করেন নেতৃবৃন্দ। এ সময় তারা ফেলানীর মা-বাবাকে সান্ত্বনা দেন।

Source link

Related posts

আজ থেকে কাউন্টারে ট্রেনের টিকিট বিক্রি শুরু

News Desk

দশ গ্রামের মানুষের যাতায়াতের একমাত্র ভরসা বাঁশের সাঁকোটি

News Desk

রাজনগরে সকালে ছেলে রাতে মায়ের মৃত্যু

News Desk

Leave a Comment