খুলনায় শেষ মুহূর্তে কোরবানির পশুর হাট জমজমাট হয়ে উঠেছে। মহানগরীর জোড়াগেট হাটে ছোট-বড় সব ধরনের গরু আসতে শুরু করেছে। আসছেন ক্রেতারাও। খুলনার ২২টি নিয়মিত পশুর হাটে কেনা-বেচা শেষ হওয়ার পর মহানগরীর এ হাটে চাপ বাড়তে শুরু করেছে।
জোড়াগেট হাটে ২৫ মণের গরু উঠেছে। যার দাম হাঁকা হয়েছে সাড়ে ৮ লাখ টাকা। ক্রেতারা বড় গরু দেখে চোখের তৃপ্তি মেটাচ্ছেন কিন্তু তাদের চাহিদা মাঝারি গরুতে।
হাটে এবার ভারতীয় গরু আসেনি। এজন্য দেশি গরুতেই ভরসা। এ হাটে বড় গরুর সংখ্যা বেশি, মাঝারি ও ছোট গরু কম কিন্তু ক্রেতা বেশি। এ কারণে দর হাঁকছেন ব্যবসায়ীরা। ক্রেতারাও সর্বোচ্চ চেষ্টা করছেন দাম কমাতে।
বাগেরহাটের চাপাতলার মিলন শেখ জানান, তিনি একটি বাছুর কিনে ১৮ মাস যত্ন নিয়েছেন। সয়াবিন, ভুট্টা, খৈল-ভূষি খাইয়েছেন। এখন দিনে ২১ কেজি খাবার লাগে। শুরুতে লাগতো ৮ কেজি।
একই জেলার সুগন্ধির রহমত মীর জানান, তিনি নিজ খামারে দেশি গরু লালন-পালন করেন। তার গরুটিতে সাড়ে ১৯ মণ মাংস হবে। দাম চাইছেন ৪ লাখ ২০ হাজার টাকা। কাঁচা ঘাস, গরম ধান-ডাল গরুর নিয়মিত খাবার।
রবিবার (১৬ জুন) সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত এ হাটে ৩ হাজার ১১৭টি গরু বিক্রি হয়। এ পর্যন্ত খুলনা সিটি করপোরেশনের (কেসিসি) রাজস্ব আদায় হয়েছে ১ কোটি ৭৯ লাখ টাকা। ২০২৩ সালে এ হাটে আয় হয়েছিল ২ কোটি ২১ লাখ ৪ হাজার ৯৬২ টাকা।
জোড়াগেট পশুর হাট ঘুরে দেখা গেছে, শনিবার (১৫ জুন) বিকালের পর থেকে খুলনার পার্শ্ববর্তী জেলা ও উপজেলা থেকে ট্রাক ও ট্রলারভর্তি গরু আসছে। ছুটির দিন হওয়ায় ক্রেতাসমাগমও প্রচুর। ক্রেতা ও দর্শনার্থীদের ভিড়ে পা ফেলার জায়গা নেই।
নড়াইলের কালিয়া উপজেলার গরু ব্যবসায়ী সিরাজুল ইসলাম জানান, বৃহস্পতিবার রাতে ১৩টি গরু এনেছেন। মাঝারি সাইজের ৪টি বিক্রি হয়ে গেছে। বড় ৯টি গরুর দাম শুনতে অনেকেই আসছেন কিন্তু দাম শুনে চলে যাচ্ছেন। তিনি জানান, মাঝারি সাইজের গরু ৯০ হাজার টাকা থেকে ১ লাখ ১০ হাজার টাকার মধ্যে বিক্রি করেছেন। বড় গরু ২ লাখের কাছাকাছি হলে বিক্রি করবেন।
মহানগরীর বসুপাড়া মোড় থেকে গরু কিনতে আসা সেজান রহমান জানান, বৃহস্পতিবার বিকাল থেকে গরু খুঁজছেন। দুই থেকে আড়াই মণ ওজনের গরুর দাম চাইছে ৯০ হাজার থেকে এক লাখের ওপরে। স্বাভাবিক সময়ে এই গরু ৬৫ থেকে ৭০ হাজার টাকায় কেনা যেতো।
এদিকে খানজাহান আলী থানার আফিল গেটসংলগ্ন বিকেএসপির উত্তর পাশে পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে প্রথমবারের মতো সপ্তাহব্যাপী কোরবানির পশুর হাট বসেছে। হাটে ক্রেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ এবং জমজমাট করতে কর্তৃপক্ষ বেশ কিছু আকর্ষণীয় পুরস্কার এবং সুবিধা ঘোষণা দিয়েছেন। এর মধ্যে রয়েছে এ হাট থেকে পশু ক্রয় করলে ক্রেতাকে পশুর মোট দামের মাত্র ৩ শতাংশ হাসিল প্রদান করতে হবে। পশু ক্রয়কারীদের জন্য পুরস্কার হিসেবে রয়েছে একটি ফ্রিজ ও ১০টি প্রেশার কুকার। ঈদের পরের দিন র্যাফেল ড্রয়ের মাধ্যমে ভাগ্য যাচাই করে ক্রেতাকে এ পুরস্কার নিতে হবে।
এছাড়া হাটটি ২৪ ঘণ্টা সিসিটিভি ক্যামেরা দ্বারা নিয়ন্ত্রিত থাকবে। ক্রেতা-বিক্রেতাদের সার্বক্ষণিক নিরাপত্তার জন্য স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবক, র্যাব-পুলিশের সমন্বয়ে ২৪ ঘণ্টা নিরাপত্তার নিশ্চয়তা, জাল টাকা শনাক্তের মেশিন, নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎব্যবস্থা, ব্যাপারীদের থাকা-খাওয়া এবং তাদের পশুখাদ্যের বিশেষ সুব্যবস্থা, হাটে আগত ক্রেতা-বিক্রেতা এবং পশুর চিকিৎসার ব্যবস্থা, আধুনিক পাবলিক টয়লেটের সুব্যবস্থা। গত ১১ জুন সন্ধ্যায় কোরবানির পশুর হাটের উদ্বোধন হয়। প্রধান অতিথি ছিলেন ফুলতলা উপজেলার নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) তাসনীম জাহান।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ফুলতলা উপজেলা নির্বাহী অফিসার বলেন, ‘ফুলতলা উপজেলায় ইতঃপূর্বে একটি কোরবানির পশুর হাট ছিল। এ অঞ্চলের মানুষের চাহিদা পূরণে আফিলগেট বাইপাসে নতুন এ কোরবানির পশুর হাটটি বসছে। পবিত্র কোরবানির পশু ক্রয়ের জন্য এ বছর থেকে শুরু হওয়া হাটটি সুযোগ হলে প্রতিবছর করা হবে।
হাটের সার্বিক ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকা ইউপি সদস্য মো. নবীরুল ইসলাম রাজা বলেন, ‘কোরবানির পশুর হাট থেকে যারা পশু ক্রয় করবেন তাদের হাসিলের কপির যে অংশটি আমাদের কাছে থাকবে সেই অংশটি দিয়ে ঈদুল আজহার পরের দিন বিকালে হাটের ঘোষণা মঞ্চে র্যাফেল ড্র অনুষ্ঠিত হবে। র্যাফেল ড্রতে ভাগ্যবান প্রথম দশ জনকে প্রেশার কুকার এবং ১১তম ভাগ্যবান ব্যক্তিকে একটি ১৮ সেফটির ফ্রিজ উপহার দেওয়া হবে।’