সাতক্ষীরা উপকূলে আঘাত হেনেছে ঘূর্ণিঝড় রিমালের অগ্রভাগ
বাংলাদেশ

সাতক্ষীরা উপকূলে আঘাত হেনেছে ঘূর্ণিঝড় রিমালের অগ্রভাগ

সাতক্ষীরা উপকূলে আঘাত হেনেছে ঘূর্ণিঝড় রিমালের অগ্রভাব। এর ফলে ঝোড়ো বাতাস ও বৃষ্টি শুরু হয়েছে। সন্ধ্যা ৬টার পরবর্তী তিন থেকে চার ঘণ্টা অর্থাৎ রাত ৯-১০টার দিকে এর কেন্দ্র উপকূল অতিক্রম করবে। বর্তমানে ঘূর্ণিঝড়টি সাতক্ষীরা থেকে ২০০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থান করছে।

রবিবার (২৬ মে) বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে বাংলা ট্রিবিউনকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন সাতক্ষীরা আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জুলফিকার আলী।

তিনি বলেন, ‌‘সাতক্ষীরা উপকূলে আঘাত হেনেছে ঘূর্ণিঝড়ের অগ্রভাগ। অর্থাৎ ছয় ভাগের অগ্রগামী অংশের আঘাতে উপকূল প্লাবিত হয়েছে। প্রবল ঢেউ আছড়ে পড়ছে বেড়িবাঁধের ওপর। বাঁধের কিছু অংশ ধসে পানি ঢুকেছে আশপাশের গ্রামগুলোতে। এটি সাতক্ষীরা থেকে ২০০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থান করছে। ৮ থেকে ১০ কিলোমিটার গতিতে উপকূলের দিকে আসছে। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৬২ কিলোমিটারের মধ্যে বাসাতের গতিবেগ ঘণ্টায় ৯০ থেকে ১২০ কিলোমিটার। এর ফলে উপকূলে ৮-১২ ফুট জলোচ্ছ্বাসের শঙ্কা রয়েছে। সন্ধ্যা নাগাদ উপকূল অতিক্রম করতে পারে। এজন্য সাতক্ষীরায় ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। জেলা শহরে হালকা বৃষ্টি হলেও শ্যামনগর ও আশাশুনি এলাকায় প্রবল বৃষ্টি হচ্ছে।’

এর আগে সকাল থেকে সুন্দরবন সংলগ্ন চুনা, খোলপেটুয়া, মাংলঞ্চ ও যমুনা নদী ও কপোতাক্ষ নদে স্বাভাবিক জোয়ার তুলনায় পানি বৃদ্ধি পেয়েছে কয়েকগুণ। শ্যামনগর উপজেলার বুড়িগোয়ালীনি, দ্বীপ ইউনিয়ন গাবুরা, পদ্মপুকুর, আটুলিয়া, কৈখালী, রমজাননগর, মুন্সিগঞ্জ উপকূলীয় এলাকায় মাঝারি বৃষ্টির পাশাপাশি ঝোড়ো বাতাস বইছে। লোকালয়ে পানি প্রবেশ করায় মানুষের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। 

এদিকে, দ্বীপ ইউনিয়ন গাবুরা ও ঝূকিপূর্ণ গ্রামগুলোর মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ে যাওয়ার জন্য আহ্বান জানানো হচ্ছে বলে জানিয়েছে জেলা প্রশাসন। স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন সিপিপি, সিডিওর সহায়তা নিয়ে মাইকে প্রচারণা চালানো হচ্ছে। এরই মধ্যে শ্যামনগর উপকূলে ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধে ফাটল দেখা দেওয়ায় তা সংস্কার শুরু করেছেন স্থানীয়রা।

গাবুরার ডুমুরিয়া এলাকার মিজানুর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ঝোড়ো বৃষ্টি ও দমকা হাওয়া বইছে। বিকাল ৫টার দিকে বাঁধ ধসে লোকালয়ে পানি ঢুকতে শুরু করেছে। চাঁদনিমুখা এলাকায় নদীর পানি বেড়ে বাঁধ ধসে আশপাশের গ্রামে ঢুকছে। গাবুরার ৯ নম্বর সোরা, হরিষখালি এবং গাবুরার ২ নম্বর ওয়ার্ড এলাকার বেড়িবাঁধে ফাটল দেখা দিয়েছে। জলোচ্ছ্বাস পুরো দমে শুরু হলে এই ইউনিয়ন পানিতে ডুবে যাবে।’

গাবুরা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাসুদুল আলম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘রিমালের আঘাতে আমার ইউনিয়নের দুই পাশের খোলপেটুয়া ও কপোতাক্ষ নদের পানি বেড়ে লোকালয়ে ঢুকতে শুরু করেছে। বেশ কয়েকটি পয়েন্টে বাঁধ ধসে গেছে। ধসে যাওয়া অংশে বালুর বস্তা ফেলা হচ্ছে। জলোচ্ছ্বাস হলে আমার ইউনিয়নের মানুষের অনেক বড় ক্ষতি হয়ে যাবে। পুরো ইউনিয়ন ডুবে যাবে।’

ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধের বিষয়ে জানতে চাইলে সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সালাউদ্দীন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘স্বাভাবিকের তুলনায় পানি বেড়েছে পাঁচ-ছয় ফুট। ঘূর্ণিঝড় আম্পান ও অশনির পর জেলার অধিকাংশ ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধ সংস্কার করা হয়েছে। অতিরিক্ত জোয়ারের পানি যাতে লোকালয়ে ঢুকতে না পারে সেজন্য আমাদের একাধিক টিম কাজ করছে। পাঁচ কিলোমিটার বাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ আছে। যেসব জায়গায় সংস্কারের কাজ চলছে। এছাড়া আমরা পর্যাপ্ত জিওব্যাগ মজুত করে রেখেছি।’

ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় সর্বোচ্চ প্রস্তুতি আছে উল্লেখ করে সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির বলেন, ‘আমাদের সর্বোচ্চ প্রস্তুতি আছে। উপকূলীয় শ্যামনগর, আশাশুনি, কালিগঞ্জ ও দেবহাটা এলাকার আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে মানুষকে আনার জন্য স্বেচ্ছাসেবক টিমের ছয় হাজার স্বেচ্ছাসেবক কাজ করছেন। এছাড়া পুলিশ, নৌবাহিনী, বিজিবি, গ্রাম পুলিশ মানুষকে আশ্রয়কেন্দে নিয়ে আসছেন। মেডিক্যাল টিম প্রস্তুত ও পর্যাপ্ত খাবার মজুত রাখা হয়েছে।’

Source link

Related posts

আইএমএফের ঋণ নেব না: কাদের

News Desk

টানা বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি ময়মনসিংহ নগরীতে

News Desk

বদলির আদেশ পেয়ে থানার এসি-সোফা-টেলিভিশন বাসায় নিয়ে গেলেন ওসি

News Desk

Leave a Comment