সিলেট নগরসহ সীমান্তবর্তী উপজেলা এক মাসে পরপর তিন দফা বন্যা প্লাবিত হয়েছে। তবে সিলেটে গত ৩ দিন বৃষ্টিপাত কিছুটা কম হওয়ায় জলাবদ্ধ এলাকাগুলো থেকে অল্প অল্প করে পানি নামতে শুরু করছে। সীমান্তবর্তী উপজেলাগুলোতে বন্যা পরিস্থিতির তেমন কোনও উন্নতি না হলেও সড়ক, নদী রক্ষা বাঁধ, বাজার, বাড়িসহ সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন স্থাপনা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
সিলেট বিভাগের চার জেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি বন্যাকবলিত হয় সিলেটের ১৩ উপজেলার ১০১টি ইউনিয়ন ও কয়েকটি পৌরসভা। একই সঙ্গে বন্যায় প্লাবিত হয় সিলেটের ১ হাজার ১১৬টি গ্রাম। বন্যাদুর্গত মানুষের পাশাপাশি সিলেট জেলার আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে ১ হাজার ৫৪৫টি গবাদিপশু আশ্রয় গ্রহণ করে।
সিলেট বিভাগীয় কমিশনার অফিস সূত্র জানায়, তৃতীয় দফার বন্যায় সিলেট বিভাগে ৩৭৫টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এর মধ্যে সিলেট জেলায় ২১৩টি, সুনামগঞ্জে ৪৫টি, হবিগঞ্জে ৮টি, মৌলভীবাজারে ১০৯টি আশ্রয়কেন্দ্র রয়েছে। বন্যায় সিলেট বিভাগে ১২ লাখ ৯২ হাজার ১০৮ জন আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে সিলেটে ৫ লাখ ৮৮ হাজার ২৮৭, সুনামগঞ্জে ৩ লাখ ৮৬ হাজার ৮৩১, হবিগঞ্জে ২ লাখ ৭১৩ এবং মৌলভীবাজারে ৩ লাখ ১৪ হাজার ২৭৭ জন রয়েছেন। সিলেট বিভাগের ৩৭৫টি আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছেন ২০ হাজার ৭৩৩ জন। এর মধ্যে সিলেটে ৯ হাজার ৮৩১, সুনামগঞ্জে ১ হাজার ৪৮১, হবিগঞ্জে ১ হাজার ১২০, মৌলভীবাজারে ৮ হাজার ৩০১ জন রয়েছেন। সিলেট বিভাগে ২ হাজার ৪৮৮ গবাদিপশু আশ্রয় গ্রহণ করেছে। এর মধ্যে সিলেটে ১ হাজার ৫৪৫টি, সুনামগঞ্জে ১০৫টি, হবিগঞ্জে ১২৬টি, মৌলভীবাজারে ৭১২টি।
সূত্র আরও জানায়, বানভাসিদের জন্য সিলেট বিভাগে জিআর চাল ৫ হাজার ১৫ মেট্রিক টন বরাদ্দ ছিল। একই সঙ্গে নগদ টাকা বরাদ্দ ছিল ১ কোটি ২৭ লাখ ৭০ হাজার টাকা। শুকনো খাবার ৪৭ হাজার ৬৮৬ প্যাকেট, শিশুখাদ্য ৪০ হাজার ও গোখাদ্য ৪০ হাজার বরাদ্দ ছিল।
ইতোমধ্যে বন্যাদুর্গতদের মধ্যে সিলেটে জিআর চাল ১ হাজার ৮৪৫ মেট্রিক টন, নগদ টাকা ৬০ লাখ ৩০ হাজার, শুকনো খাবার ১৪ হাজার ৫৫৬ প্যাকেট, শিশুখাদ্য ২০ লাখ ও গোখাদ্য ২০ লাখ টাকার বিতরণ করা হয়েছে।
সুনামগঞ্জ জেলায় জিআর চাল ১ হাজার ৭৩৪ মেট্রিক টন, নগদ টাকা ৩৬ লাখ ১০ হাজার, শুকনো খাবার ১৩ হাজার প্যাকেট, গোখাদ্য ১০ লাখ ও শিশু খাদ্য ১০ লাখ টাকার বিতরণ করা হয়।
এ ছাড়া হবিগঞ্জ জেলায় জিআর চাল ৩৮৬ মেট্রিক টন, নগদ টাকা ১১ লাখ ৩০ হাজার, শুকনো খাবার ৩ হাজার ৭৪০ প্যাকেট, গোখাদ্য ৫ লাখ ও শিশু খাদ্য ৫ লাখ টাকার বিতরণ করা হয়।
একই সঙ্গে মৌলভীবাজারে জিআর চাল ১০ হাজার ৫০ মেট্রিক টন, নগদ টাকা ২০ লাখ, শুকনো খাবার ১৬ হাজার ৩৯০ প্যাকেট, গোখাদ্য ৫ লাখ ও শিশুখাদ্য ৫ লাখ টাকার বিতরণ করা হয়।
সিলেট বিভাগীয় কমিশনার আবু ছিদ্দীকী এনডিসি জানান, সিলেটে বিভাগের বন্যাকবলিত এলাকার জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ ত্রাণ ও নগদ টাকা রয়েছে। এসবের কোন সংকট নেই। ইতোমধ্যে বানভাসিদের মধ্যে চাল, শিশুখাদ্য, গোখাদ্য ও নগদ টাকাও বিতরণ করা হয়েছে। একই সঙ্গে বানভাসিরা বরাদ্দকৃত চাল ও নগদ টাকা যথাযথভাবে পাচ্ছে কিনা বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখা হচ্ছে।
এদিকে, বন্যাকবলিত সিলেটের চার জেলার মধ্যে সিলেটে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের জন্য ২টি মোবাইল ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টের মাধ্যমে বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে এবং কমিউনিটিতে প্রতিদিন ৫ হাজার লিটার বিশুদ্ধ পানি জ্যারিকেনের মাধ্যমে সরবরাহ করা হচ্ছে। একই সঙ্গে ১০ লিটার পানি ধারণক্ষমতাসম্পন্ন পাঁচ হাজার জ্যারিকেন বিতরণ করা হয়। সেই সঙ্গে জ্যারিকেন মজুত আছে ১১ হাজার। হাইজিন কিট বিতরণ করা হয়েছে ১ হাজার ৫৩০টি ও মজুত ১ হাজার ১৫০টি।
এ ছাড়া সুনামগঞ্জের প্রতিটি কেন্দ্রে পর্যাপ্ত বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা রয়েছে এবং দুটি মোবাইল ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট প্রস্তুত রয়েছে। যার ক্যাপাসিটি প্রতি ঘণ্টায় ৬০০ লিটার।
হবিগঞ্জের প্রতিটি কেন্দ্রে বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা করা হয়েছে। এখনও বিশুদ্ধ পানির সংকট দেখা দেয়নি। জেরিক্যান (১০ লিটার) ৮০ পিস সরবরাহ করা হয়েছে এবং ৩৮০ পিস হাইজিন কিট বিতরণ করা হয়েছে।
এ ছাড়া মৌলভীবাজারের প্রতিটি কেন্দ্রে বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা করা হয়েছে। এখনও বিশুদ্ধ পানির সংকট দেখা দেয়নি। একই সঙ্গে বন্যাদুর্গত এলাকায় পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট সিলেটে ৫ লাখ ৬৫ হাজার, সুনামগঞ্জে ৩ লাখ, হবিগঞ্জে ১ লাখ ৭০ হাজার এবং মৌলভীবাজারে ৭৫ হাজার বিতরণ করা হয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী দীপক রঞ্জন দাশ বলেন, ‘বৃষ্টিপাত কমে আসায় পানি নামতে শুরু করেছে। তবে ধীরগতিতে পানি নামছে।’