ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে বিশ্ব ঐতিহ্য এলাকা (ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট) সুন্দরবনের বন্যপ্রাণীসহ জীববৈচিত্র্য রক্ষায় সর্বোচ্চ সতর্কতা জারি করে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করেছে বনবিভাগ। একইসঙ্গে সুন্দরবনের সব কর্মকর্তা ও বনরক্ষীদের ছুটি বাতিল করে কর্মস্থল ত্যাগে নিষেধাজ্ঞা এবং সার্বক্ষণিক টহলের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সুন্দরবনের প্রাণপ্রকৃতি রক্ষা এবং ট্যুরিস্টদের ঢল সামাল দিতে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে বন বিভাগ।
বাগেরহাটের পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মোহাম্মাদ বেলায়েত হোসেন জানান, দেশের সমগ্র সংরক্ষিত বনাঞ্চলের অর্ধেকের বেশি সুন্দরবন। বিশ্ব ঐতিহ্য এলাকা সুন্দরবন জীববৈচিত্র্যের আধার। সুন্দরবনে জীববৈচিত্র্য রক্ষায় পূর্ব অনুমতি ছাড়া সংরক্ষিত এই বনে জনসাধারণ প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা থাকার পরেও কাঠ পাচারকারী ও চোরা শিকারিরা অবৈধপথে বেশ করে বিভিন্ন ধরনের অপরাধমূলক কাজ করার চেষ্টা করে। ঈদ উপলক্ষে মৌসুমি হরিণ শিকারিরা বেপরোয়া হয়ে ওঠে। এসব অপরাধী ও মৌসুমি শিকারিদের দমনে ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে সুন্দরবনে সর্বোচ্চ সতর্কতা জারি করে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। এছাড়া সুন্দরবনের সব কর্মকর্তা ও বনরক্ষীদের ছুটি বাতিল করে কর্মস্থল ত্যাগে নিষেধাজ্ঞা ও পর্যটন এলাকাগুলোতে ট্যুরিস্টদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে সার্বক্ষণিক টহল জোরদার করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
ছয় হাজার সতের বর্গ কিলোমিটার আয়তনের সুন্দরবনে রয়েছে বাংলাদেশের জাতীয় পশু রয়েল বেঙ্গল টাইগার, চিত্রল ও মায়াবী হরিণ, কিং-কোবরা, বানর, গুইসাপসহ প্রায় ১০০ প্রজাতির স্তন্যপায়ী ও সরীসৃপ, ৮ প্রজাতির উভচরসহ ৩২০ প্রজাতির বন্যপ্রাণীর বসবাস। সুন্দরি, পশুর, গেওয়া, গরান, কেওড়া, গোলপাতাসহ ৩৩৪ প্রজাতির উদ্ভিদ রয়েছে ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট এ বনে। সুন্দরবনের অভ্যন্তরে নদী ও খালে রয়েছে বিশ্বের বিলুপ্তপ্রায় ইরাবতীসহ ছয় প্রজাতির ডলফিন, লবণ পানির কুমির, রূপালি ইলিশ, চিংড়ি, রূপচাঁদা, কোরালসহ ৪০০ প্রজাতির মাছ এবং বিশ্বখ্যাত শিলা কাঁকড়া।
এসব সম্পদ সুরক্ষায় বনঅধিদফতর থেকে সর্বোচ্চ সতর্কতা জারি করে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদারসহ কর্মকর্তা ও বনরক্ষীদের ছুটি বাতিল করে কর্মস্থল ত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের কর্মকর্তা মোহাম্মাদ বেলায়েত।