স্ত্রী ও চার সন্তানকে হারিয়ে একা হয়ে গেলেন প্রবাসী নারায়ণ
বাংলাদেশ

স্ত্রী ও চার সন্তানকে হারিয়ে একা হয়ে গেলেন প্রবাসী নারায়ণ

স্ত্রী ও চার ছেলেমেয়েকে হারিয়ে একা হয়ে গেলেন নারায়ণ দাশ (৫৫)। মঙ্গলবার (৭ নভেম্বর) দুপুরে চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে সড়ক দুর্ঘটনায় তারা নিহত হন। নারায়ণ মধ্যপ্রাচ্যের দেশ ওমান প্রবাসী। স্ত্রী-সন্তানদের কথা শুনে বুধবার বেলা ১১টায় দেশে ছুটে এসে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। 

নারায়ণ দাশ চন্দনাইশ উপজেলার জোয়ারা ইউনিয়নের মোহাম্মদপুর ধোপাপাড়া এলাকার মৃত ভোলা দাশের ছেলে। ঘটনার পর থেকে চন্দনাইশের ধোপাপাড়ায় চলছে স্বজনদের আহাজারি। পুরো এলাকা শোকে স্তব্ধ।

মঙ্গলবার (৭ নভেম্বর) দুপুর ১২টায় হাটহাজারী উপজেলার চারিয়া এলাকায় বাসের ধাক্কায় এই দুর্ঘটনা ঘটে।

এ দুর্ঘটনায় নারায়ণ দাশের স্ত্রী রীতা রানী দাশ (৩৮), বাক্ প্রতিবন্ধী মেয়ে দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী শ্রাবন্তী দাশ (১৭), অপর মেয়ে বর্ষা দাশ (৯), যমজ দুই ছেলে দ্বীপ দাশ (৪) ও দিগন্ত দাশ (৪) নিহত হয়েছেন। এ ছাড়াও নিহত হয়েছেন– নারায়ণের বড় ভাই প্রতিবন্ধী শম্ভুর ছেলে বিপ্লব দাশ (৩০) এবং নারায়ণের বোন মৃত সতীন্দ্র দাশের স্ত্রী চিনু দাশ (৫৫)। নিহত চিনুর ছেলে পাপ্পু দাশ (৩২) চট্টগ্রাম মেডিক্যাল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন।

জোয়ারা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আমিন আহমদ চৌধুরী রোকন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘মঙ্গলবার রাতে নিহতদের লাশ চন্দনাইশের গ্রামের বাড়িতে আনা হয়। বুধবার দুপুরে ইউনিয়নের ধোপাপাড়া এলাকার পারিবারিক শ্মশানে তাদের দাহ করা হয়।’

চেয়ারম্যান বলেন, ‘দুর্ঘটনায় নিহত সাত জনই প্রবাসী নারায়ণ দাশের পরিবারের সদস্য। নিহতদের মধ্যে তার স্ত্রী এবং চার ছেলেমেয়ে রয়েছে। দুর্ঘটনায় তার আর কেউ রইলো না। পরিবারের সবাইকে হারিয়ে নারায়ণ এখন একা হয়ে গেছেন। দেড় বছর আগে নারায়ণ ওমানে যান। আজ বুধবার তিনি দেশে আসেন।’

নিহত রীতা রানীর বড় জা মল্লিকা দাশ বলেন, ‘গত একমাস আগে আমার ছোট জা রীতা দাশের নানি মারা যান। তার নানার বাড়ি ফটিকছড়ি উপজেলার শাহনগর গ্রামে মনোমোহন কবিরাজ বাড়িতে। মঙ্গলবার ছিল তার নানির শ্রাদ্ধ অনুষ্ঠান। ওই অনুষ্ঠানে যোগ দিতে রীতার সঙ্গে পরিবারের অন্যরা সকাল ৯টায় চন্দনাইশের গ্রামের বাড়ি থেকে বের হন।’

পুলিশ  জানায়, নিহত ও আহতরা সিএনজি অটোরিকশায় ফটিকছড়িতে আত্মীয়ের শ্রাদ্ধ অনুষ্ঠানে যাচ্ছিলেন। চট্টগ্রাম-খাগড়াছড়ি সড়কের মির্জাপুর ইউনিয়নের চারিয়া ইজতেমা মাঠ সংলগ্ন এলাকায় পৌঁছলে বিপরীত দিক থেকে আসা চট্টগ্রাম শহরগামী যাত্রীবাহী বাসের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে ঘটনাইস্থলেই সাত জনের মৃত্যু হয়। সিএনজি অটোরিকশায় চালকসহ মোট নয় জন ছিলেন। তাদের মধ্যে সাত জনই ঘটনাস্থলে মারা গেছেন। আহত অবস্থায় ভাগ্যক্রমে বেঁচে গেছেন পাপ্পু দাশ নামে একজন যাত্রী। এ ছাড়াও বেঁচে আছেন ওই অটোরিকশার চালক বিপ্লব মজুমদার।

বিপ্লব ফটিকছড়ি উপজেলার বারোমাসিয়া ইউনিয়নের বৈদ্যেরহাট এলাকার নেপাল মজুমদারের ছেলে। স্ত্রী-সন্তানকে নিয়ে থাকেন হাটহাজারী উপজেলার চৌধুরী হাট এলাকায়।

নাজিরহাট হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আদিল মাহমুদ বলেন, ‘দুর্ঘটনায় সাত জন নিহতের ঘটনায় অজ্ঞাত বাসচালক ও হেলপারকে আসামি করে মামলা দায়ের করা হয়েছে। পলাশ দাশ নামে নিহতের এক স্বজন বাদী হয়ে এ মামলা করেন। দুর্ঘটনাকবলিত বাস ও সিএনজি অটোরিকশাটি জব্দ করা হয়েছে। ঘটনার পরপরই বাস চালক ও হেলপার পালিয়েছে। তাদের গ্রেফতারে অভিযান চলছে।’

Source link

Related posts

মুন্সীগঞ্জ-মাওয়া সড়কে প্রাণ গেলো ২ নারীর 

News Desk

পাঠদান বন্ধ : কয়রায় বিস্কুট আনতে স্কুলে যাচ্ছে শিক্ষার্থীরা

News Desk

জমজমাট কিশোরগঞ্জের কালীবাড়ি হাট, ৪ হাজার প্রতিমা বিক্রির টার্গেট

News Desk

Leave a Comment