স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে মুক্তিযুদ্ধে বিশেষ অবদানের জন্য বীর মুক্তিযোদ্ধা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) খুরশিদ উদ্দিন আহমেদ ‘স্বাধীনতা পুরস্কার ২০২১’ (মরণোত্তর) পেয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত থেকে গত ২০ মে দেশের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা ‘স্বাধীনতা পুরস্কার ২০২১’ গ্রহণ করেন তার পরিবারের সদস্যরা।
ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) খুরশিদ উদ্দিন আহমেদ ১৯৩৩ সালে গফরগাঁও উপজেলার বাঁসিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা গফরগাঁওয়ের কৃতি সন্তান টাংগাব ইউপির বাঁশিয়া গ্রামের সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা আব্দুর রহমান।
ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) খুরশিদ উদ্দিন আহমেদ ছিলেন একাধারে একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা, ভাষা সৈনিক, চিকিৎসক, সেনা কর্মকর্তা ও জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে ঐতিহাসিক আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার অন্যতম আসামি এবং কৃতি ফুটবল খেলোয়াড়।
বর্ণাঢ্য সামরিক ক্যারিয়ারের অধিকারী এ অফিসার ১৯৫৮ সনে আর্মি মেডিকেল কোরে কমিশনপ্রাপ্ত হন। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর তিনি কুমিল্লা সিএমএইচ এর অধিনায়ক এবং ব্রিগেড কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এএমসি অফিসার হিসেবে তার বিশেষ পারদর্শিতা ইতিহাসে অনন্য দৃষ্টান্ত। ১৯৭২ সালের অক্টোবরে তিনি প্রথম ডিরেক্টর জেনারেল অব হেলথ সার্ভিসেস (ডিএমএস) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭৩ এ আরব-ইসরাইল যুদ্ধে তিনি সিরিয়ান ফ্রন্টে মেডিকেল টিমের অধিনায়ক হিসেবে দায়িত্বরত ছিলেন। তিনি তার সামরিক জীবনে দেশে ও বিদেশে মোট চারটি যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। এগুলো হলো- রান অব কচ্ছ এর যুদ্ধ; ১৯৬৪ সাল (পাকিস্তান), পাক-ভারত যুদ্ধ; ১৯৬৫ সাল, বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ; ১৯৭১ সাল। আরব-ইসরাইল যুদ্ধ; ১৯৭৩ সাল।
ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) খুরশিদ উদ্দিন আহমেদ ঐতিহাসিক আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার আসামি হিসেবে ১৯৬৮ সালের জানুয়ারিতে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে গ্রেফতার হন এবং পরবর্তীতে তীব্র গণ আন্দোলনের মুখে জেল থেকে মুক্তি পান। ১৯৭১ সনে মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন। তিনি ইস্টার্ন সেক্টরের অ্যাসিসিটেন্টে ডিরেক্টর জেনারেল অব হেলথ সার্ভিসেস হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। নভেম্বর’ ৭১ এ তিনি বেলুনিয়ার যুদ্ধে সরাসরি অংশগ্রহণ করেন।
একজন সামরিক কর্মকর্তা ও চিকিৎসা পেশার পাশাপাশি ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) খুরশিদ উদ্দিন আহমেদ ভালো ফুটবল খেলোয়াড়ও ছিলেন। তিনি মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবে ১৯৫৬-৫৭ সালে সেন্টার ফরওয়ার্ড পজিশনে খেলেছেন। তিনি ২০১৩ সালের ২২ এপ্রিল মারা যান। তাকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় ঢাকা সেনানিবাস কবরস্থানে দাফন করা হয়।