অবশেষে কমতে শুরু করেছে আলুর দাম। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে আলু উঠতে শুরু করায় এবং বাজারে সরবরাহ বাড়ায় এক সপ্তাহের ব্যবধানে দিনাজপুরের হিলিতে কেজিতে অর্ধেকে নেমেছে দাম। শনিবার (২০ জানুয়ারি) স্থলবন্দরের এই বাজারে পাইকারিতে ২৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে। খুচরা বাজারে ২৬ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এতে খুশি হয়েছেন বন্দরে আলু কিনতে আসা পাইকারি ব্যবসায়ী ও নিম্নআয়ের মানুষজন। সামনের দিনে দাম আরও কমতে পারে বলে জানিয়েছেন খুচরা ও পাইকারি ব্যবসায়ীরা। তবে রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে এদিন ৪৫-৫০ টাকায় আলু বিক্রি হয়েছে। এ নিয়ে আড়তদারদের দুষছেন ক্রেতারা।
শনিবার বিকালে হিলি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, সব দোকানে আলুর পর্যাপ্ত সরবরাহ। সাদা ও লাল; দুই বর্ণের আলু দোকানগুলোতে দেখা গেছে। সরবরাহ বাড়ায় দাম কমেছে বলে জানালেন ব্যবসায়ীরা। গত সপ্তাহে লাল ও সাদা আলু ৪০-৪৫ টাকায় বিক্রি হয়েছিল। বর্তমানে পাইকারিতে ২৪-২৫ ও খুচরা বাজারে ২৬ টাকা।
হিলি বাজারে কেনাকাটা করতে আসা গৃহবধূ আয়েশা সিদ্দিকা বলেন, ‘গত এক মাস আলুর দাম যে পরিমাণ বেড়েছিল, তাতে এক কেজির স্থলে আধাকেজি কিনতে বাধ্য হয়েছি। ৬০-৭০ টাকা দরে কিনতে হয়েছিল। গত সপ্তাহেও ৪৫-৫০ টাকায় কিনেছি। এতে হিমশিম খাচ্ছিলাম। চলতি সপ্তাহের প্রথমদিন দাম অর্ধেকে নেমে এসেছে। এখন চাহিদামতো কিনতে পারছি। শনিবার ২৫ টাকা দরে কিনেছি। এতে স্বস্তি ফিরেছে।’
একই বাজারে শাকসবজি কিনতে এসেছেন মহিদুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম অনেক বেশি। এর মধ্যে আলুর দাম কমায় কিছুটা হলেও স্বস্তি মিলেছে। কয়েকদিন আগেও যে আলুর কেজি ৬০ টাকা কিনেছি, আজ তা ২৫ টাকায় কিনেছি। এতে আমার মতো নিম্নআয়ের মানুষের সুবিধা হয়েছে।’
চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কমে যাওয়ায় দাম বেড়ে গিয়েছিল বলে জানালেন হিলি বাজারের আলু বিক্রেতা মনিরুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘দাম বাড়তে বাড়তে ৬০-৭০ টাকায় উঠে গিয়েছিল। এ অবস্থায় সরকার আমদানির অনুমতি দেয়। এতে দাম কিছুটা নিয়ন্ত্রণে এলেও ১৪ ডিসেম্বর থেকে রফতানি বন্ধ করে দেয় ভারত। এরপর আবারও বাজার অস্থির হয়ে ওঠে। চলতি বছরের শুরুতে বাজারে নতুন আলু উঠতে শুরু করলে দাম কমতে থাকে। বর্তমানে দেশে আলুর মৌসুম। গত সপ্তাহেও ৪৫-৫০ টাকা বিক্রি হয়েছিল। কিন্তু চলতি সপ্তাহে অনেক স্থানে আলু তোলায় এবং বাজারে সরবরাহ বাড়ায় দাম কমে গেছে।’
স্থানীয় আলু ব্যবসায়ী আরিফুল ইসলাম বলেন, ‘দেশের প্রায় সব অঞ্চলের কৃষক আলু তুলতে শুরু করেছন। এজন্য বাজারে দেশি আলুর সরবরাহ বেড়েছে। মোকামগুলোতেও দাম কমতে শুরু করেছে। আমরা কম দামে কিনতে পারায় কমে বিক্রি করছি। যতদিন সরবরাহ স্বাভাবিক থাকবে, দাম ২৫-৩০ টাকার মধ্যেই থাকবে। কাঁচামালের দাম মূলত সরবরাহের ওপর নির্ভর করে। যখন সরবরাহ বাড়বে তখন দাম কমবে। যখন সরবরাহ কমবে তখন দাম বেড়ে যাওয়া স্বাভাবিক।’
বন্দরের আমদানি-রফতানিকারক গ্রুপের সভাপতি হারুন উর রশীদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘চলতি মৌসুমে বাজারে সরবরাহ কমে যাওয়ায় আলুর দাম বেড়ে গিয়েছিল। আমদানি বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর থেকে বেশি দামেই বিক্রি হয়েছিল। এখন দেশি নতুন আলু বাজারে আসায় দাম মানুষের নাগালের মধ্যে এসেছে।’
বন্দরের জনসংযোগ কর্মকর্তা সোহরাব হোসেন বলেন, ‘হিলি দিয়ে ভারত থেকে আলু আমদানি বন্ধ রয়েছে। দেশের কৃষকদের কথা চিন্তা করে আমদানি বন্ধ রাখা হয়েছে। আগামী কয়েক মাস বাজার স্বাভাবিক থাকবে।’
তবে রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে আলু ও পেঁয়াজের দাম এখনও বেশি। শনিবার কাওরানবাজার ও মালিবাগে পাইকারিতে ৪০-৪৫ টাকা কেজি দরে আলু এবং ৮০ টাকায় পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে। খুচরা বাজারে আরও দুই-তিন টাকা বেশি দরে বিক্রি হয়েছে।
দাম না কমার বিষয়ে কাওরানবাজারের আলু ব্যবসায়ী আমির হোসেন বলেন, ‘এখনও আড়তে দাম কমেনি। এজন্য আমরা কমাতে পারিনি। আড়তে দাম কমলে আমরাও কমাতে পারবো।’
শ্যামবাজারের পাইকারি আলু ব্যবসায়ী আব্দুল মালেক বলেন, ‘দেশি আলু-পেঁয়াজ বাজারে উঠলেও তা চাহিদার তুলনায় অনেক কম। এজন্য দাম কমেনি। বাজারে সরবরাহ বাড়লে দাম কমে যাবে।’
মাঠপর্যায়ে দাম কমলেও আড়তদার ও মজুতদাররা দাম কমায় না বলে জানিয়েছেন মালিবাগ রেললাইন এলাকার বাসিন্দা জাকির হোসেন। তিনি বলেন, ‘আজও ৪৫ টাকা কেজি দরে আলু কিনেছি।’
প্রসঙ্গত, দেশে আলুর বাজার অস্থিতিশীল হয়ে উঠলে গত ৩০ অক্টোবর আমদানির অনুমতি দেয় সরকার। ২ নভেম্বর থেকে হিলিসহ দেশের বিভিন্ন স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে আলু আমদানি শুরু হয়। আমদানির অনুমতি ছিল ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত। পরবর্তীতে ব্যবসায়ীদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ও বাজার নিয়ন্ত্রণে আমদানির মেয়াদ ১৫ দিন বাড়িয়ে ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত নির্ধারণ করা হয়। এরপর মেয়াদ না বাড়ায় আমদানি বন্ধ হয়ে যায়। তখন থেকে আলুর দাম ৬০-৭০ টাকায় উঠে গিয়েছিল।