৩ মাসেই উল্টে গেছে ৩৩ লাখ টাকার সেতু
বাংলাদেশ

৩ মাসেই উল্টে গেছে ৩৩ লাখ টাকার সেতু

‘মেলা দাবি-দাওয়ার পর হামরা একটা ব্রিজ পাইছলং, মনে করছি কপাল বোধহয় ঘুরিল। কিন্তু ব্রিজ বানার (নির্মাণের) তিন মাস না যাইতে উল্টি পড়ছে। ব্রিজ নোয়ায়, হামার কপালে উল্টি গেইছে (ভাগ্য আবার আগের মতো খারাপ হয়েছে)। যে ভোগান্তি সেই ভোগান্তিয়ে আছে।’ 

এভাবেই যোগাযোগ ব্যবস্থার দুর্ভোগের বর্ণনা দিয়েছেন কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার বড়ভিটা ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের পূর্ব ধনীরাম গ্রামের বাসিন্দা মঈনুল ও আশরাফ আলী। দীর্ঘদিন অপেক্ষার পর গ্রামবাসী একটি সেতু পেলেও নির্মাণের তিন মাসের মধ্যেই তা উল্টে ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে পড়ে আছে। এ অবস্থায় ড্রামের ভেলায় খাল পারাপার হচ্ছেন তারা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০১৭-২০১৮ অর্থবছরে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদফতরের অধীন উপজেলার বড়ভিটা ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের পূর্ব ধনীরাম আবাসনগামী রাস্তার খালের ওপর ৩০ লাখ ৭৭ হাজার ৬৫৬ টাকা ব্যয়ে ৪০ ফুট দৈর্ঘ্যের একটি সেতু নির্মাণ করা হয়। উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা কাজটির তদারকি করেন। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এটিএম দেলোয়ার হোসেন টিটু সেতুটি নির্মাণ করেন। 

কিন্তু নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার তিন মাসের মধ্যে সেতুটি দেবে উল্টে যায়। পরে বন্যার পানির চাপে সেতুর সংযোগ সড়কও বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। মূলত নিম্নমানের সামগ্রী আর নির্মাণ ত্রুটির কারণে সেতুটি ভেঙে যায় বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।

স্থানীয়রা বলছেন, সেতুটি উল্টে যাওয়ার প্রায় পাঁচ বছর হলেও বিকল্প যোগাযোগ ব্যবস্থার উদ্যোগ নেয়নি কর্তৃপক্ষ। ফলে ভোগান্তির অবসান হয়নি। খালের মাঝে সেতুটি এখনও উল্টে আছে।

স্থানীয় বাসিন্দা মইনুল হক ও মমেনা বেগম জানান, চরাঞ্চলের মানুষ এমনিতেই অবহেলিত। পূর্ব ধনীরাম আবাসনের ৯০ পরিবারসহ বাঘ খাওয়ার চরের কয়েকশ পরিবারকে উপজেলা শহরসহ বাজার ঘাট করতে ওই খালের ওপর দিয়ে চলাচল করতে হয়। বছরের আট মাস খালে পানি থাকায় ড্রামের ওপর চাটাই দিয়ে ভেলা বানিয়ে দীর্ঘদিন ধরে এলাকাবাসী চলাফেরা করছেন। কয়েক দশকের দাবির পর একটি সেতু পেলেও কোনও সুবিধা পাননি তারা। ঝুঁকি নিয়ে স্কুলগামী ছাত্রছাত্রীসহ অসুস্থ রোগীদের ভেলায় করে পারাপার হতে হয়। 

এছাড়া চরাঞ্চলে উৎপাদিত কৃষিপণ্য বাজারজাতসহ উপজেলা শহরে যাতায়াত করতে স্থানীয়দের চরম বিপাকে পড়তে হয়। এ অবস্থার অবসানে ওই খালের ওপর একটি টেকসই সেতু নির্মাণের দাবি জানান এলাকাবাসী।

ড্রামের ভেলায় খাল পারাপার স্থানীয়রা

৩ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য গোলাম মোস্তফা বলেন, ‌‘ওই এলাকার লোকজন চলাচলে অনেক দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। কর্তৃপক্ষ বিষয়টি জানার পরও সমাধানের উদ্যোগ নেয়নি। ব্রিজটি নির্মাণের পর ভেঙে গেলে দুর্নীতির অভিযোগে কয়েক দফা তদন্ত হয়েছিল। কিন্তু কোনও সুরাহা হয়নি।’

বড়ভিটা ইউপি চেয়ারম্যান আতাউর রহমান মিন্টু বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে ওই এলাকার মানুষ দুর্ভোগ নিয়ে ড্রামের ভেলাতে খাল পারাপার হচ্ছেন। এলাকাবাসীর দুর্ভোগ লাঘবে ওই স্থানে নতুন ব্রিজ নির্মাণের দাবি জানাই।’

সেতু নির্মাণের সময় দায়িত্বে ছিলেন ফুলবাড়ী উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) সবুজ কুমার গুপ্ত। তিনি বলেন, ‘ওই সেতু নির্মাণে কোনও ত্রুটি ছিল না।’

সেতু নির্মাণে অনিয়মের তদন্ত হয়েছিল স্বীকার করে পিআইও বলেন, ‘বিষয়টি এখনও তদন্তাধীন। তদন্তে কী ফল হয়েছে তা আমার জানা নেই।’

ওই খালের ওপর বিকল্প সেতু নির্মাণের বিষয়ে জানতে চাইলে পিআইও বলেন, ‘এখন ওই খালের ওপর যে দৈর্ঘ্যের সেতু নির্মাণ করতে হবে তা আমাদের আওতায় পড়ে না। অন্য কোনও সংস্থাকে সেতু করতে হবে। উপজেলা প্রশাসনের সবাই বিষয়টি জানেন।’

Source link

Related posts

১৯ বছর পর বরিশাল মহানগর ছাত্রদলের পূর্ণাঙ্গ কমিটি

News Desk

সাবেক মন্ত্রীর পিএসের গোডাউনে কোটি টাকার ত্রাণের মালামাল

News Desk

কুড়িগ্রামের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত, বাড়িঘরে ঢুকছে পানি

News Desk

Leave a Comment