করোনা মহামারির কারণে গত দুই বছর ঈদ উদযাপন করতে বাড়ি আসতে পারেননি বহু পোশাকশ্রমিক। তাই এবার ঈদ করতে দুই শতাধিক দোতলা ও শতাধিক একতলা বিআরটিসি বাস রিজার্ভ করে রংপুরে এলেন কয়েক হাজার পোশাকশ্রমিক। তারা রংপুরের বিভিন্ন উপজেলার বাসিন্দা। সোমবার ও মঙ্গলবার শ্রমিকদের নিয়ে রংপুরে এসেছে বাসগুলো।
রংপুর বিআরটিসি বাস ডিপোর কর্মকর্তা শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘ঈদ করতে দুই শতাধিক দোতলা ও শতাধিক একতলা বিআরটিসি বাস রিজার্ভ করে রংপুরে এসেছেন কয়েক হাজার পোশাকশ্রমিক। এসব বাস ঢাকার বিভিন্ন রুটে চলাচল করে। ঈদের ছুটি শেষে বাসগুলো শ্রমিকদের নিয়ে গন্তব্যে যাবে।’
রংপুর নগরীর আর কে রোডের বিশ মেগাওয়াট, মডার্ন মোড়, ট্রাকস্ট্যান্ড, মাহিগঞ্জ ও তাজহাট এলাকায় সারিবদ্ধভাবে রাস্তার পাশে বাসগুলো দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছে।
বাসের চালক-হেলপারের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পরিবারের সঙ্গে ঈদ উদযাপন করতে সোমবার ও মঙ্গলবার ঢাকা, সাভার, চন্দ্রা ও গাজীপুরসহ বিভিন্ন পোশাক কারখানার কয়েক হাজার শ্রমিক দুই শতাধিক দোতলা, শতাধিক একতলা বিআরটিসি বাস ও বিভিন্ন পরিবহন রিজার্ভ করে রংপুরে এসেছেন। সব বাস পাঁচ-ছয় দিন রংপুরে অবস্থান করবে। ঈদের ছুটি শেষে শুক্রবার থেকে বাসগুলো শ্রমিকদের নিয়ে কর্মস্থলে ফিরতে শুরু করবে।
নগরীর আর কে রোডের বিশ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রের বাবুখা এলাকায় রাখা বিআরটিসি দোতলা বাসের চালক আলম খান বলেন, ‘আমাদের দোতলা বাসটি মিরপুর-গুলিস্তান রুটে চলাচল করে। ঈদ করতে পোশাকশ্রমিকরা পাঁচ দিনের জন্য বাসটি রিজার্ভ করে রংপুরে এসেছেন। অন্তত দুই শতাধিক দোতলা ও শতাধিক একতলা বিআরটিসি বাস রিজার্ভ এসেছে। শ্রমিকরা পাঁচ থেকে সাত দিন বাড়িতে অবস্থান করবেন। ছুটি শেষে আবারও তাদের নিয়ে ঢাকায় ফিরবো আমরা।’
বিআরটিসি দোতলা বাসের হেলপার আব্দুস সালাম বলেন, ‘আমাদের দোতলা বাসে ৭০ জন পোশাকশ্রমিক এসেছেন। জনপ্রতি আড়াই হাজার টাকা করে ভাড়া ঠিক করে এসেছি। পাঁচ দিন থাকার পর ঢাকায় চলে যাবো।’
মডার্ন মোড় এলাকায় দেখা গেছে, ৩০টির বেশি বিআরটিসির দোতলা বাস সারিবদ্ধভাবে রাস্তার পাশে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এসব বাস রিজার্ভ করে পীরগাছা, গঙ্গাচড়া ও কাউনিয়ার কয়েক হাজার পোশাকশ্রমিক ঈদ করতে বাড়ি এসেছেন। ঈদ শেষে একই বাসে ঢাকায় ফিরবেন তারা।
মডার্ন মোড়ে রাখা দোতলা বাসের চালকের সহকারী মোসলেম উদ্দিন বলেন, ‘আমার বাড়ি পীরগাছা উপজেলায়। গত দুই বছর করোনার কারণে বাড়ি আসা সম্ভব হয়নি। এবার বাস রিজার্ভ করে পোশাকশ্রমিকদের নিয়ে এসেছি। ঈদের ছুটি শেষে তাদের সঙ্গে আবারও ঢাকায় ফিরে যাবো।’
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. মোতাহার হোসেন বলেন, ‘রংপুরের আট উপজেলার মধ্যে গঙ্গাচড়া, কাউনিয়া, পীরগাছা, সদর, মিঠাপুকুর, তারাগঞ্জ ও বদরগঞ্জ উপজেলার প্রায় চার লাখ পোশাকশ্রমিক ঢাকা, সাভার, গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন কারখানায় কাজ করেন। ঈদ উদযাপন করতে বাস রিজার্ভ করে রংপুরে এসেছেন তারা। ঈদের ছুটি শেষে কর্মস্থলে ফিরবেন সবাই।’
পীরগাছা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সরেস চন্দ্র বলেন, ‘৬০টির বেশি বিআরটিসির দোতলা বাস ঢাকা থেকে শ্রমিকদের নিয়ে পীরগাছায় এসেছে। ঈদ করতে এসব বাসে পোশাকশ্রমিকরা এসেছেন। আমরা সার্বিক নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিত করেছি।’
ঢাকা থেকে ঈদ করতে আসা পোশাকশ্রমিক নগরীর পশুরাম এলাকার সালেহা আক্তার ও খটখটিয়ার আসমা বেগম বলেন, ‘দুই বছর পর ঈদ উদযাপন করতে বাড়িতে এসেছি। চার-পাঁচ দিন বাড়িতে থাকবো। স্বজনদের সঙ্গে এই কয়েকটি দিন কাটাবো। এজন্য বাস রিজার্ভ নিয়ে এসেছি। অন্যবারের চেয়ে এবার অনেক বেশি শ্রমিক বাস রিজার্ভ নিয়ে এসেছেন। সবাই দু-একদিন আগে-পরে একই বাসে কর্মস্থলে ফিরবেন।’
বিআরটিসি বাস ডিপোর কর্মকর্তা আসলাম বলেন, ‘পোশাকশ্রমিকদের নিয়ে আসা বাসগুলো রংপুরে অবস্থান করছে। ঈদের ছুটি শেষে শ্রমিকদের নিয়ে আবারও কর্মস্থলে ফিরে যাবে। বাস, চালক-হেলপার ও কর্মীদের নিরাপত্তার জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহায়তা চেয়েছি আমরা।’