Image default
বাংলাদেশ

৬ শতাধিক এলএসডি সেবনকারী ডিবির নজরে

মরণনেশা এলএসডি (লাইসার্জিক অ্যাসিড ডাইথ্যালামাইড) সেবনকারী ৬৫০ জনকে চিহ্নিত করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। তাদের ওপর চলছে নজরদারি। পুলিশ বলছে- এলএসডি সেবকদের অধিকাংশই বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী। তাদের ওপর চলছে গোয়েন্দা নজরদারি। এ ছাড়া সম্প্রতি গ্রেপ্তার হওয়া তিন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীর চক্রটি ছাড়াও এলএসডি কারবারের আরও দুটি চক্রের সন্ধান পাওয়া গেছে। ডিবি পুলিশের তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

ভয়াবহতার বিচারে এলএসডির আরেক নাম ‘লাস্ট স্টেজ অব ড্রাগ’। এ মাদক সেবন বাংলাদেশে নতুন নয়। ২০১৯ সালে এলএসডিসহ দুই তরুণকে গ্রেপ্তার করেছিল মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর। তবে সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হাফিজুর রহমানের আত্মঘাতীর ঘটনা তদন্ত করতে গিয়ে ফের এলএসডির নাম উঠে এসেছে। ডিবি পুলিশের ভাষ্যমতে- এলএসডির ভয়াল নেশায় মায়াজালগ্রস্ত হাফিজুর নিজের গলায় ধারালো দা চালিয়ে দিয়েছিলেন। এলএসডির নাম উঠে আসার পর নড়েচড়ে বসে প্রশাসন।

হাফিজুর রহমানের মৃত্যুর ঘটনায় তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তারা হলেন- হাফিজুরের বন্ধু নর্থসাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবিএ শিক্ষার্থী সাদমান সাকিব ওরফে রূপল (২৫) ও আসহাব ওয়াদুদ ওরফে তূর্জ এবং ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটির ছাত্র আদিব আশরাফ (২৩)। গত বুধবার রাতে ৬ লাখ টাকা মূল্যের ২০০ ব্লট এলএসডি মাদক জব্দ করে ডিবি। তাদের জিজ্ঞাসাবাদে বেরিয়ে আসে এলএসডির চাঞ্চল্যকর তথ্য।

ডিবির সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবিএর বহিষ্কৃত ছাত্র সাদমান সাকিব টেলিগ্রাম অ্যাপের মাধ্যমে নেদারল্যান্ডসের টিম নামে এক নাগরিকের সঙ্গে যোগাযোগ গড়ে তোলেন। টিম নেদারল্যান্ডস থেকে এ চক্রের কাছে গত চার বছরে সাতটি এলএসডির চালান আসে। এ ক্ষেত্রে মিথ্যা ঘোষণা দিয়ে কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে বইয়ের ভেতরে করেও দেশে এসেছে এলএসডির চালান।

চিন্তার বিষয় হচ্ছে- গ্রেপ্তারকৃত সাদমানের সঙ্গে টিমের এ লেনদেন বাংলাদেশে এলএসডি পাচারের প্রথম কথা নয়। তদন্তে নেমে গোয়েন্দা কর্মকর্তারা আরও দুটি চক্রের সন্ধান পেয়েছেন দেশে এলএসডি কারবারের জাল বিস্তারে। ওই চক্র দুটির একজনের সঙ্গে টিমের প্রথম যোগাযোগ গড়ে ওঠে। এর পর তাদের একজনের মাধ্যমে সাদমান নাগাল পান টিমের। ওই চক্র দুটিকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা করছে ডিবি।

সূত্র জানায়, ফেসবুকে ক্লোজ গ্রুপের মাধ্যমে এলএসডি বিক্রি করত গ্রেপ্তারকৃত চক্রটি। এর মধ্যে ‘আপনার আব্বা’ নামে একটি ফেসবুক গ্রুপ ছিল। এই গ্রুপের সদস্য সংখ্যা এক হাজারের মতো। এই গ্রুপের মাধ্যমে এলএসডি ক্যাশ অন ডেলিভারি করা হতো। এই গ্রুপ ছাড়া অন্যান্য সূত্রের মাধ্যমে ডিবি পুলিশ ৬৫০ এলএসডিসেবীকে চিহ্নিত করেছে।

এসব সেবীর অধিকাংশই সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। তাদের প্রত্যেকের সঙ্গেই কথা বলতে চায় ডিবি। ক্ষেত্রবিশেষে তথ্যপ্রমাণ সাপেক্ষে তাদের গ্রেপ্তারও করা হতে পারে। সেবনকারীদের মধ্যে পাচারকারী কারা আর কারাইবা বিক্রির সঙ্গে জড়িত, তদন্তের মাধ্যমে তাদের বের করতে জোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে গোয়েন্দা পুলিশ। এ ছাড়া বিমানবন্দর থেকে কীভাবে এলএসডির চালান খালাস হয়, এর সঙ্গে বিমানের সংশ্লিষ্ট কেউ জড়িত কিনা তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ। বিশেষ করে কুরিয়ার সার্ভিস পরিচালনার সঙ্গে কেউ জড়িত কিনা তা অনুসন্ধান করে দেখছে গোয়েন্দা পুলিশ।

এ বিষয়ে ডিবির রমনা জোনাল টিমের অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি)মিশু বিশ্বাস গণমাধ্যমকে বলেন, প্রাথমিক তদন্তে তাদের কাছ থেকে গুরুত্বপূর্ণ অনেক তথ্য পাওয়া গেছে। আমরা সেসব তথ্য যাচাই-বাছাই করে দেখছি।

জানা গেছে, এলএসডি সেবনে মনের ভেতর এক অলীক মায়াজাল সৃষ্টি হয় বলে পশ্চিমা বিশ্বের মাদকসেবীদের কাছে পরিচিত ‘হ্যালুসিনোজেনিক ড্রাগ’ হিসেবে। এলএসডি সেবনকারীর সাধারণ লক্ষণগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য লক্ষণ হলো- উদ্বেগ বা প্যারানাইয়া, উদ্ভট মন্তব্য, আবেগ, বিশৃঙ্খলা, ফ্লাশড স্কিন, হ্যালুসিনেশন, শরীরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি, প্যারাফেরনালিয়া (ট্যাবলেট, ব্লটার পেপার, চিনির কিউব বা জেলটিন), ক্ষুধা ও অসংলগ্ন বক্তব্য। এলএসডি ওভার ডোজের লক্ষণগুলোর মধ্যে আতঙ্কের আক্রমণ, সাইকোসিস, খিঁচুনি এবং বিভ্রান্তি।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ইয়াবা, কোকেন, আইস, এনপিএস এর মতো মাদকের পর মরণনেশা এলএসডি নতুন করে ভাবাচ্ছে কর্মকর্তাদের। তবে এলএসডির বিস্তার রোধে সর্বোচ্চ ব্যবস্থা গ্রহণের উদ্যোগের কথা জানিয়েছেন ডিবি ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ বিভাগের কর্মকর্তারা।

এলএসডি বাংলাদেশে প্রথম ধরা পড়ে ২০১৯ সালের জুলাই মাসে। জড়িত দুই তরুণকে গ্রেপ্তারও করে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর (ডিএনসি)। তখন এক প্রবাসী বাংলাদেশির মাধ্যমে দেশে এলএসডি বেচাকেনার বিষয়টি জানতে পারে অধিদপ্তরের গোয়েন্দা বিভাগ। প্রাথমিকভাবে তারা জানতে পারে, গুলশান, উত্তরা ও কাফরুল এলাকায় এলএসডি ব্যবহার হচ্ছে। এর গ্রাহক উচ্চবিত্ত পরিবারের মাদকাসক্ত সন্তানরা। একটি ক্লোজ গ্রুপের মাধ্যমে ওই মাদক কেনাবেচা হয়।

২০১৯ সালের ১৪ জুলাই রাতে কাফরুল এলাকার একটি বাসায় অভিযান চালিয়ে পাঁচ মিলিগ্রাম তরল এলএসডি জব্দ করে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের ঢাকা গোয়েন্দা বিভাগ। ৪৬টি এলএসডি স্ট্রিপও জব্দ করা হয়। গ্রেপ্তার করা হয় দুই তরুণ ইয়াসের রিদওয়ান আনান ও সৈয়দ আহনাদ আতিফ মাহমুদকে। তখন তাদের বয়স ২০ বছর। তাদের বিরুদ্ধে ১৫ জুলাই কাফরুল থানায় মামলা হয়।

Related posts

শীতে জবুথবু রাজশাহীর জীবনযাত্রা, ভোগান্তিতে ছিন্নমূল মানুষ

News Desk

ইটভাটার ধোঁয়ায় নষ্ট বোরো ধান, লোকসানে চাষিরা

News Desk

সময় বাড়ল ব্যাংক লেনদেনের

News Desk

Leave a Comment