‘স্বামী মারা যাওয়ার পর ঢাকা থেকে ময়মনসিংহে গ্রামের বাড়ি চইলা আইছি। ঢাকায় মানুষের বাসায় কাম করার সময় মোহাম্মদপুরের ঠিকানায় ভোটার আইডি কার্ড করছিলাম। এখন গ্রামের বাড়িতে আইসা এনআইডি কার্ডের ঠিকানা সংশোধনে নির্বাচন অফিসে আট মাস ধইরা ঘুরছি। কিন্তু কোনও কাম হইতাছে না।’
গত ২০ ফেব্রুয়ারি দুপুরে ময়মনসিংহ জেলা নির্বাচন কার্যালয়ে জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) সংশোধন করতে আসা মৃত গিয়াস উদ্দিনের স্ত্রী রোকেয়া খাতুন এসব কথা বলছিলেন। তার বাড়ি ময়মনসিংহ সদরের বয়রা গ্রামে। এনআইডি কার্ডের ঠিকানা সংশোধন করতে আট মাস ধরে নির্বাচন কার্যালয়ের কর্মকর্তাদের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন। প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দেওয়ার পরও কাঙ্ক্ষিত সেবা না পাওয়ার অভিযোগ তার।
তিনি বলেন, ‘নির্বাচন অফিসের স্যারেরা খালি ঘুরাইতাছে। আইডি কার্ডের ঠিকানা সংশোধন করতে না পারায় মেম্বার-চেয়ারম্যানরা বিধবা ভাতার কার্ড দিচ্ছে না। বয়স হয়ে গেছে বাসাবাড়িতে কাম কাজ করতে পারি না। খুব কষ্টে দিন পার করতাছি।’
শুধু রোকেয়া বেগম না, জেলা নির্বাচন কার্যালয় সেবা প্রত্যাশী শত শত মানুষকে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে। আইডি কার্ডের নাম, বয়স ও ঠিকানা সংশোধন করতে আসা অধিকাংশ মানুষেরই অভিযোগ, জেলা নির্বাচন কার্যালয়ে সময়মতো কোনও সেবা পাচ্ছেন না তারা।
ময়মনসিংহ সিটি এলাকার মহারাজা এলাকার সুমন মিয়া জানান, তার মা রেহানা আক্তারের জাতীয় পরিচয়পত্রে নাম ভুল আছে। সংশোধনের জন্য জেলা নির্বাচন কার্যালয়ে করে সকল কাগজপত্র জমা দিয়ে গত দুই বছর ধরে ঘুরছেন। কিন্তু কোনও সমাধান হয়নি।
তিনি আরও জানান, জেলা নির্বাচন কর্মকর্তার সঙ্গে নির্বাচন কার্যালয়ের দ্বিতীয় তলার কক্ষে যোগাযোগ করেন। সেখানে তার সঙ্গে দুর্ব্যবহারের করেন নির্বাচন কর্মকর্তা। কার্যালয়ের কর্মচারীদের অনৈতিকভাবে টাকা দিয়ে খুশি করতে পারলে দ্রুত সেবা পাওয়া যায়।
পোশাককর্মী মোকসেদ আলী জানান, জাতীয় পরিচয়পত্রে তার নাম সংশোধন করতে গত এক বছর ধরে জেলা নির্বাচন কার্যালয়ে আসছেন। কিন্তু কোনও কাজ হচ্ছে না। জাতীয় পরিচয়পত্রের নাম সংশোধন করতে না পারায় ইতোমধ্যে তার চাকরি চলে গেছে। এখন বেকার জীবনযাপন করছেন। নির্বাচন কার্যালয়ে মাঝে মাঝে এসে কর্মকর্তাদের সঙ্গে এসে দেখা করছেন। নাম সংশোধন দ্রুত না হওয়ায় বিপাকে পড়েছেন তিনি।
অভিযোগ অস্বীকার করে জেলা সিনিয়র নির্বাচন কর্মকর্তা দেওয়ান মোহাম্মদ সারওয়ার জাহান জানান, জনবল সংকট থাকায় সেবা প্রত্যাশীদের চাহিদার সেবা দিতে পারছেন না। তবে দিনরাত সেবা দিতে অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কাজ করে যাচ্ছেন।
তবে সেবা প্রত্যাশীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহারের বিষয়টি স্বীকার করেন তিনি জানান, অতিরিক্ত মানুষের ভিড় থাকায় মন-মেজাজ ভালো না থাকায়। তাই মাঝে মাঝে মনের অজান্তেই খারাপ আচরণ করে ফেলেন।