খালেদ মাহমুদ সুজন:-
একজন বাংলাদেশী ক্রিকেটার।খালেদ মাহমুদ সুজন, বাংলাদেশের ক্রিকেটের সাথে যে নামটা ওতোপ্রোতো ভাবেই জড়িত। যাকে বলা হয় বাংলাদেশের ক্রিকেটের ফাইটার। ১৯৭১ সালের ২৬ জুলাই ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেন । তিনি মিডিয়াম-পেস বোলার এবং মিডল-অর্ডারের ব্যাটসম্যান। ১৯৯৮ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত তিনি বাংলাদেশ দলে খেলেছেন এবং ২০০৩ থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ জাতীয় দলের নেতৃত্ব দিয়েছেন। তার ক্রিকেটীয় অলরাউন্ডার দক্ষতার জন্য, তিনি তার সময়ে বাংলাদেশের ক্রিকেট অঙ্গনে যোদ্ধা হিসাবে পরিচিত ছিলেন। ২০১৮ সালে ত্রিদেশীয় সিরিজের আগে তিনি বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের প্রযুক্তি পরিচালক হিসাবে কাজ শুরু করেন।
ব্যক্তিগত তথ্য | |
পূর্ণ নাম | খালেদ মাহমুদ সুজন |
ডাকনাম | সুজন |
জন্ম তারিখ | ২৬ জুলাই ১৯৭১ |
জন্ম স্থান | ঢাকা |
পেশা | ক্রিকেটার |
ভূমিকা | অল-রাউন্ডার |
ব্যাটিংয়ের ধরণ | ডান হাতি |
বোলিংয়ের ধরন | ডান-হাতি মিডিয়াম |
ধর্ম | ইসলাম |
১.
চলমান টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট বিশ্বকাপে বাংলাদেশ পুরুষ জাতীয় দলের ভরাডুবির পর এবার আনকোরা একটি পদ তৈরি করে তাতে খালেদ মাহমুদ সুজনকে নিয়োগ দিয়েছে ক্রিকেট বোর্ড। সাবেক জাতীয় দলের খেলোয়াড় এবং বাংলাদেশের ক্রিকেটের সাথে দীর্ঘদিন ধরে সংশ্লিষ্ট খালেদ মাহমুদ সুজন এরই মধ্যে ‘টিম ডিরেক্টর’ নামের এই নতুন দায়িত্বে কাজও শুরু করে দিয়েছেন বলে জানাচ্ছেন। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) টিম ডিরেক্টর, টিম ম্যানেজার, বোর্ডের স্ট্যান্ডিং কমিটির মেম্বার, খেলোয়াড়দের সংগঠন কোয়াবের সহ-সভাপতি, ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগে হাল আমলে বিতর্কিত দল আবাহনীর কোচ, বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে (বিপিএল) ঢাকা ডাইনামাইটসের কোচ – এক ঝাঁক ক্রিকেট সংগঠকের ডেসিগনেশনের কথা বলছি না, বলছি বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক খালেদ মাহমুদ সুজনের কথা; যিনি স্বীয় ‘যোগ্যতাবলে’ একাই এই পদসমূহে জাঁকিয়ে বসেছিলেন; যিনি আমাদের নিকট গতিদানব নামে পরিচিত। টেস্ট স্ট্যাটাস পাওয়ার পর আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পথচলার শুরুর দিনগুলোতে যিনি ছিলেন বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের একমাত্র স্বীকৃত অলরাউন্ডার।
খেলোয়াড় থাকা অবস্থায় সুজন যতবার সফল হয়েছেন, ব্যর্থ হয়েছেন তার চেয়ে বেশি। তবে সফলতা-ব্যর্থতাকে আড়ালে রেখে তিনি সমালোচিত হয়েছেন সবচাইতে বেশি। খেলোয়াড় থাকাকালীন সময়ে তাঁর ক্যারিয়ার নিয়ে অযাচিতভাবে প্রশ্ন তোলা হয়েছে। ১৯৯৬ সালে ক্যারিয়ার শুরু করা সুজন অবসর নিয়েছেন ২০০৬ সালে। সমালোচনা শেষ হয়ে যেতে পারত সেখানেই। কিন্তু বিধির বিধান এত সহজে লেখা হয়ে গেলে তো জীবনটা বড্ড ম্যাড়মেড়ে হয়ে যায়।
খেলোয়াড়ী জীবনে তিনি যতবার লাইমলাইটে এসেছেন, তারচেয়ে বেশী এসেছেন অবসরের পর। এই পদ-সেই পদ করে করে তিনি বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের বহুমাত্রিক ব্যক্তিত্ব। একই মানুষকে বিসিবির এতগুলো পদে থাকা নিয়ে বারবার প্রশ্ন উঠেছে সংবাদ মাধ্যমে, সহজে মেনে নিতে পারেননি দেশের ক্রিকেটপ্রেমীরাও। এ নিয়ে তাকে অপমান শুনতে হয়েছে, ট্রল শুনতে হয়েছে৷ অবশ্য তিনি এসবকে থোড়াই কেয়ার করেছেন। তার সোজাসাপ্টা জবাব – ‘বোর্ড আমাকে যোগ্য মনে করেছে বলেই বহুমুখী দায়িত্ব দিয়েছে। বোর্ড যদি মনে করে আমি দায়িত্বপালনে ব্যর্থ হয়েছি, আমাকে সরিয়ে দিক।’
২.
২০০৪ সাল। বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের বিদেশ সফর। ২ টি টেস্ট এবং ৫ টা একদিনের ম্যাচ খেলতে জিম্বাবুয়ে গেল বাশারবাহিনী। টেস্ট দলে জায়গা পাননি খালেদ মাহমুদ সুজন। প্রথম টেস্টে মোহাম্মদ আশরাফুলের ৯৮ রানের উপর ভর করে প্রথম ইনিংসে জিম্বাবুয়ের পাহাড়সম রানের জবাবে বাংলাদেশ মোটামুটি জবাব দেয়। তবে দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতায় ১৮৩ রানের বিশাল ব্যবধানে জিতে যায় স্বাগতিকরা। দুই ইনিংসে ব্যাটহাতে দারুণভাবে অবদান রাখায় ম্যাচ সেরা শন আরভিন।
দ্বিতীয় টেস্টের আগে প্রকৃতির বেশ ভয়াবহ আকার ধারণ করে। বৃষ্টির কারণে প্রথম দিনে খেলা হয়নি। সারারাত ভারী বর্ষণে আউটফিল্ড খারাপ হয়ে যাওয়ায় দ্বিতীয় দিনেও একটা বলও মাঠে গড়াতে পারেনি। মাঠের অবস্থার কিছুটা উন্নতি হওয়ায় তৃতীয় দিনে লাঞ্চের আগ দিয়ে খেলা শুরু হয়। হেলদি ওপেনিং স্ট্যান্ডের পরও বাংলাদেশ পঞ্চম দিনে ১৬৮ রানে অলআউট হয়। মাঝখানে চতুর্থ দিনেও পুনরায় বৃষ্টির কারণে খেলা বন্ধ থাকে। জিম্বাবুয়ে ২ উইকেটে ২১০ রান করে দিন শেষ করে। ফলাফল ড্র! ১-০ ব্যবধানে সিরিজ জিতে নেয় জিম্বাবুয়ে।
ব্যাকফুটে থেকে ওয়ান্ডে সিরিজ শুরু করে বাংলাদেশ। ৫ ম্যাচ সিরিজের প্রথম দুইটা ম্যাচ বৃষ্টির কারনে পরিত্যক্ত হয়। ৩য় ওয়ান্ডেতে টসে হেরে ব্যাটিংয়ে নামে সফরকারীরা। দুই ওপেনারের রান দুই অংকের ঘরে পৌছানোর আগেই সাজঘরে ফিরে যান। টু ডাউনে নামা রাজিন সালেহকে নিয়ে প্রাথমিক বিপর্যয় সামাল দিয়ে দলকে নিরাপদ জায়গায় নিয়ে যাওয়ার পথে ৬১(৮০) রানের অধিনায়কসূলভ ইনিংস খেলেন হাবিবুল বাশার।
কিন্তু অপরপ্রান্তে রাজীন সালেহীয় ইনিংস ( ১০৭ বলে ৫৭) খেলার কারনে দলের রান রেট তখন বেশ নিম্নমুখী। এই অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য মারমুখী টেল-এন্ডার মোহাম্মদ রফিককে নামানো হল। তিনিও ব্যর্থ হয়ে ফিরে যাওয়ার পর মাঠে নামেন আশরাফুল। ৩২ বলে পঞ্চাশোর্ধ ইনিংস খেলে দলীয় সংগ্রহটা দুইশ পার করেন। শেষের দিকে ১৬ বলে ২২ রানের ক্যামিও খেলেন খালেদ মাহমুদ সুজন।
ফলে ৫০ ওভার শেষে দলীয় সংগ্রহটা দাঁড়ায় ২৩৮/৭। জবাবে মোহাম্মদ রফিক ও মুশফিকুর রহমানের দারুন নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে ৫০ ওভারে ৯ উইকেট হারিয়ে ২৩০ রানে থামে স্বাগতিকরা। বাংলাদেশ ৮ রানে জয়ী হয়। সময়োপযোগী ইনিংস খেলে ম্যাচসেরা মোহাম্মদ আশরাফুল। ২২ রানের ক্যামিও এবং ইনফর্ম আরভাইনকে আউট করে দলের জয়ে বড় অবদান রাখেন সুজন। সিরিজে ১-০ তে এগিয়ে যায় বাংলাদেশ।
চতুর্থ ম্যাচে টস জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে ৫০ ওভার শেষে ২৪২ রান সংগ্রহ করে জিম্বাবুয়ে। ৪৫ রান খরচায় ৩ উইকেট নিয়ে তাপস বৈশ্য বাংলাদেশের সেরা বোলার, ৫ ওভারে ৩০ রান দিয়ে উইকেট শূন্য থেকে সুজন সবচাইতে খরুচে বোলার। জবাবে টপ অর্ডারের বিপর্যয় এবং মন্থর গতির ব্যাটিংয়ে জয়ের পথ থেকে ক্রমে দূরে সরে যেতে থাকে বাংলাদেশ। মিডল অর্ডারে মোহাম্মদ আশরাফুল ৩১ রানের ইনিংস খেলেন।
তারপর অলরাউন্ডার মুশফিকুর রহমান এবং উইকেটকিপার খালেদ মাসুদের বুদ্ধিদীপ্ত দুইটা ইনিংস খেললেন। সুজন শূন্য রানে আউট হন। টেল-এন্ডার রফিক ও তারেক আজিজের ক্যামিও জয়ের জন্য যথেষ্ট ছিল না। ৪ বল হাতে রেখে ২২৮ রানে অলআউট বাংলাদেশ। জিম্বাবুয়ে ১৪ রানে জয়ী হয় এবং সিরিজে ১-১ সমতায় ফিরে।
সিরিজ নির্ধারনী পঞ্চম ও শেষ ওয়ানডে। এই লেখার নায়ক খালেদ মাহমুদ সুজন হারারে স্পোর্টিং গ্রাউন্ডে তার বোলিং দিয়ে আগুন ঝরিয়েছিলেন যে ম্যাচে। টসে জিতে ব্যাটিংয়ে নামে বাংলাদেশ। এই সিরিজে টেস্ট অভিষেক হওয়া অকালপ্রয়াত অলরাউন্ডার মানজারুল ইসলাম রানা এবং হান্নান সরকার দুজনে মিলে ওপেনিং জুটিটা নিয়ে যান ১০৫ রানে৷ ৯৯ বলে ৫৯ রানের দারুন একটা ইনিংস খেলে হান্নান সরকার আউট হলে ব্যাটিং অর্ডারে পরিবর্তন এনে ক্রিজে আসেন মোহাম্মদ আশরাফুল।
কিন্তু, তিনিও মাত্র এক বলের ব্যবধানে রেমন্ড প্রাইসের বলে শূন্য রানে আউট হয়ে ফিরে যান। এরপর রাজিন সালেহকে নিয়ে ছোট একটা পার্টনারশিপ গড়ে ব্যক্তিগত ৬৩ রানে আউট হন মানজারুল ইসলাম রানা। দলীয় সংগ্রহটা তখন ১৫৩/৩. কিন্তু এরপরই ঘটে ভয়াবহ ব্যাটিং বিপর্যয়। ৩ উইকেটে ১৫৩ করা দলটা ১৮৩ রানে অলআউট হয়ে যায়। অর্থাৎ শেষ ৩০ রান তুলতেই বাদবাকি ৭ উইকেটের পতন ঘটে।
প্রয়াত রানা, হান্নান সরকারের দুটো ইনিংসের পর রাজিন সালেহ ২১ রান করেন। দলের চতুর্থ সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক ছিল ‘এক্সট্রা’। খালেদ মাহমুদ ৩ রান করে আউট হন। শক্তিশালী জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ১৮৩ রান ডিফেন্ড করতে গিয়ে দুই ওপেনিং পেসার তাপস বৈশ্য এবং মুশফিকুর রহমানকে গ্র্যান্ট ফ্লাওয়ার এবং বার্নি রজার্স বেধড়ক মারধর করলেন। ১১২ রানের ওপেনিং জুটি বাংলাদেশকে ম্যাচ থেকে ছিটকে নিয়ে যাচ্ছিল।
ঠিক তখনই রোমান গ্ল্যাডিয়েটর হয়ে একপ্রান্তে দাঁড়িয়ে গেলেন সুজন। শুরুটা করলেন কিংবদন্তি গ্র্যান্ট ফ্লাওয়ারকে আউট করার মধ্য দিয়ে। ২৪ তম ওভারের তৃতীয় বলে ফ্লাওয়ারকে আউট করার পরে পঞ্চম বলে শূন্য রানে ফিরিয়ে দিলেন স্টুয়ার্ট কার্লাইলকে। ওভারে জোড়া আঘাত! ২৬ তম ওভারে আবার বোলিংয়ে আসলেন সুজন। প্রথম বলটা ডট দিলেন। ২য় বলে মাটসিকেনেরিকে শূন্য রানে এলবিডব্লুর ফাঁদে ফেললেন।
ক্রিজে এসে তৃতীয় বলে আরভাইন একটা সিঙ্গেল নিলেন। স্ট্রাইকে তৎকালীন বিশ্বের ইয়ং সেনসেশন টাটেন্ডা টাইবু। ওভারের চতুর্থ বলে উইকেটের পেছনে খালেদ মাসুদ পাইলটকে ক্যাচ দিয়ে টাইবুও শূন্য রানে প্যাভিলিয়নের পথ ধরলেন৷ আবারও ওভারে জোড়া আঘাত! মাঠের মধ্যে উড়তে থাকলেন সুজন। দুর্দান্ত একটা স্পেলে বাংলাদেশকে ম্যাচে ফিরিয়ে আনলেন তিনি। সেদিন সুজন কার্যত ‘আনপ্ল্যেবল’ হয়ে গেছিলেন।
পরের ৩ ওভারে ব্যবধানে তারেক আজিজ স্বাগতিক দলের রজার্স এবং আরভাইনকে ফিরিয়ে দিলে জিম্বাবুয়ের স্কোর ১১২/০ থেকে ১২৪/৬ হয়ে যায়। হাতের মুঠো থেকে বেরিয়ে যাওয়া ম্যাচটা মাত্র ৫ ওভারের মধ্যেই বাংলাদেশের পক্ষে চলে আসে। তবে নাটকের তখনও বাকি। সাত নম্বরে ব্যাট করতে নামা বাংলাদেশের সাবেক বোলিং কোচ হিথ স্ট্রিক ডিওন ইব্রাহিমকে নিয়ে দেখেশুনে খেলতে থাকেন৷
রাজিন সালেহর কল্যাণে ইব্রাহিম রান আউট হলেও স্ট্রিক মাটি কামড়ে পরে থাকেন। টেল এন্ডার ব্রেন্টকে সাথে নিয়ে ম্যাচটা শেষ পর্যন্ত জিতিয়েই মাঠ ছাড়েন তিনি। ৩ উইকেটে জয়ের সুবাদে ২-১ ব্যবধানে সিরিজ জিতে নেয় জিম্বাবুয়ে। কিন্তু হার না মানা মনোভাবের জন্য অগণিত ক্রিকেটপ্রেমী মানুষের হৃদয় জিতে নেয় সুজন।
ম্যাচে তাঁর বোলিং ফিগার ছিল এরকম – ১০-১-১৯-৪! ফলে ম্যাচসেরার পুরষ্কারটাও তার হাতেই উঠে। ম্যাচ শেষে বেঁটে-মোটামত ক্রিকেটারটি ধীরলয়ে একরাশ হতাশা নিয়ে মাঠ ছেড়ে বের হয়ে যাচ্ছেন, দৈনিক পত্রিকার খেলার পাতায় এই দৃশ্যটা আমার কিশোর মনে দারুণভাবে দাগ কেটেছিল।
৩.
সুজন ক্যারিয়ারে দু’বার ম্যান অফ দ্য ম্যাচ হয়েছিলেন। একটার কথা উপরে বললাম। আরেকটা? বিশ্বকাপে বাংলাদেশের সবচাইতে আইকনিক জয় পাওয়া ম্যাচে – ১৯৯৯ বিশ্বকাপে পাকিস্তানের বিপক্ষে। ব্যাটে-বলে সুজন সেদিন হয়ে উঠেছিলেন জেনুইন অলরাউন্ডার, সত্যিকারের বাংলার বাঘ।
বহুপথ পেরিয়ে আজকের বাংলাদেশ দলটা অনেকদূর এগিয়েছে। দলে এখন স্টার পারফর্মারদের ছড়াছড়ি। প্রায় সবাইই বিশ্বমানের খেলোয়াড়। যত দিন যাচ্ছে আমাদের ক্রিকেট নামক মুকুটে রংবেরঙের সাফল্যের পালক যুক্ত হচ্ছে। মাশরাফি-মুস্তাফিজ-সাইফুদ্দিন-রুবেল-শফিউল-আল আমিনদের মত তুলনামূলক ভাল পেসার থাকার পরও আমরা হাহুতাশ করি। একবার ভাবুন তো ওই আমলের বাংলাদেশ দলটার কি কি ছিল? কতটা সামর্থ্য ছিল? কোনগুলো শক্তির জায়গা ছিল?
আজকের দলটা এমনি এমনি গড়ে উঠেনি। সুজনরা যখন খেলা শুরু করেছিলেন তখন এত যশ-খ্যাতি ছিল না, নেহাৎ ভালবাসা থেকেই মাঠে নেমেছেন; অর্থ বা জনপ্রিয়তা পাবার আশায় নয়। নামমাত্র সুযোগ-সুবিধা, দায়সারা ট্রেনিং এবং সামান্য পারিশ্রমিকের বিনিময়ে তাঁরা মাঠে নামতেন শুধুমাত্র ক্রিকেট আর দেশের প্রতি নিজেদের ভালোবাসাকে পুঁজি করে।
ইএসপিএন ক্রিকইনফোতে স্ট্যাটস দেখে তাদের পারফরম্যান্সকে কোনভাবেই মূল্যায়ন করা যাবে না। সুজনের মত সীমিত সামর্থ্যের ক্রিকেটারদের নিদারুণ আত্মত্যাগ, ক্রিকেটের প্রতি ভালবাসা আর লড়াই করার অদম্য স্পৃহাই একটা শক্ত ভিত তৈরি করেছে। যার ফল পাচ্ছে বর্তমান সময়ের ক্রিকেটাররা। মুলতানের মাঠে সুজনরা অঝোরে কেঁদেছিলেন এমনি এমনি না, দেশকে না জেতানোর কষ্টে। উই হ্যাভ টু রেসপেক্ট দ্যাট।
8
ঘরোয়া
এ তালিকাভুক্ত ঘরোয়া ক্রিকেট খেলায় ভাওয়ালপুরের বিপক্ষে ১৪৫ রানে অপরাজিত থেকে তিনি তার একমাত্র শতকটি অর্জন করেন। এটি করার সময় তিনি মিনহাজুল আবেদীন নান্নুর সাথে ৫ম উইকেটে এ তালিকাভুক্ত ক্রিকেট ইতিহাসের সর্বোচ্চ জুটি গড়েন ২৬৭*।
ঘরোয়া দলের তথ্য | |
বছর | দল |
২০০০/০১ | ঢাকা মহানগর |
২০০১/০২, ২০০৫/০৬ | ঢাকা বিভাগ |
৫
আন্তর্জাতিক
ঘরোয়া ক্রিকেটে একজন অলরাউন্ডার হলেও, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তিনি বোলিংয়ে বেশি সাফল্য পান। ১৯৯৯ ক্রিকেট বিশ্বকাপে পাকিস্তানকে হারাতে তিনি বিশেষ ভূমিকা রাখেন। এই খেলায় তিনি ২৭ রান করেন ও ১০ ওভারে ৩১ রানের বিনিময়ে ৩ উইকেট লাভ করেন; এর জন্য তিনি ম্যাচসেরার পুরস্কার পান। ২০০৩-০৪ সালে মুলতানে পাকিস্তানের বিপক্ষে তৃতীয় টেস্টে তিনি ৩৭ রানে ৪ উইকেট এবং ৬৮ রানে ৩ উইকেট নিয়েছিলেন। ২০০৬ সালে তিনি আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর নেন এবং শেষ ম্যাচে সম্মানজনক ৩৬ রান করেন। পরে তিনি বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের সহকারী কোচ হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছেন এবং এখন তিনি দলের পরিচালক হিসেবে আছেন।
আন্তর্জাতিক তথ্য |
|
জাতীয় পার্শ্ব | বাংলাদেশ |
টেস্ট অভিষেক | ৮ নভেম্বর ২০০১ বনাম জিম্বাবুয়ে |
শেষ টেস্ট | ২৯ অক্টোবর ২০০৩ বনাম ইংল্যান্ড |
ওডিআই অভিষেক | ১০ জানুয়ারি ১৯৯৮ বনাম ভারত |
শেষ ওডিআই | ২০ ফেব্রুয়ারি ২০০৬ বনাম শ্রীলঙ্কা |
খেলোয়াড়ী জীবনের পরিসংখ্যান:-
প্রতিযোগিতা | টেস্ট | ওয়ানডে | এফসি | এলএ |
ম্যাচ | ১২ টি | ৭৭ টি | ৪৬ টি | ১২৫ টি |
রানের সংখ্যা | ২৬৬ | ৯৯১ | ১৭৬৭ | ৮৯১ |
ব্যাটিং গড় | ১২.০৯ | ১৪.৩৬ | ২৫.২৪ | ১৯.১০ |
সেঞ্চুরি | ০ | ০ | ১ | ১ |
হাফ সেঞ্চুরি | ০ | ১ | ৯ | ৩ |
সর্বোচ্চ রান | ৪৫ | ৫০ | ১৪১ | ১৪৫ |
বল করেছে | ১৬২০ | ৩৩৮৫ | ৬২৫৮ | ৫৪৫৩ |
উইকেট | ১৩ | ৬৭ | ৯৭ | ১৪৪ |
বোলিং গড় | ৬৪.০০ | ৪২.৭৬ | ৩১.৫৮ | ২৯.৬৩ |
ইনিংসে ৫ উইকেট | ০ | ০ | ২ | ২ |
সেরা বোলিং | ৪/৩৭ | ৪/১৯ | ৫/৩২ | ৫/১৭ |
৬.
শেষ করছি প্রখ্যাত তুর্কি কবি নাজিম হিকমতের অমর কবিতা ‘জেলখানার চিঠি’র দুইটা লাইন দিয়ে–
মৃত্যু —
দড়ির এক প্রান্তে দোদুল্যমান শবদেহ,
আমার কাম্য নয় সেই মৃত্যু।
নিজের কাছে খালেদ মাহমুদ সুজনের বর্তমান অবস্থানটা অনেকটা এরকম। নিজে না চাইলেও ক্রিকেটপ্রেমীরা তাকে শূলে চড়াচ্ছে, ব্যবচ্ছেদ করছে। এর দায় কার? ক্রিকেটপ্রেমীদের? বোর্ডের? নাকি তার নিজের? তিনি কি দায় এড়াতে পারবেন? আলোচনাটা আরেকদিনের জন্যে তোলা রইলো।