আমি যুক্তরাজ্য থেকে আইনে স্নাতক করেছি। এরপর আবার ব্যবসায় ব্যবস্থাপনার ওপর পড়াশোনা করেছি। পড়াশোনা শেষ করে কোনো চাকরি করিনি, সংসারে মন দিতে হয়েছে। আমি তিন সন্তানের মা। তাদের বড় করার একটা দায়িত্ব তো আমার আছেই।
ফ্যাশন ডিজাইনিংয়ে এলেন কী করে?
ছোটবেলা থেকেই আমার ফ্যাশন ডিজাইনিং নিয়ে পড়ার সুপ্ত ইচ্ছা ছিল। কিন্তু নানা কারণে সেটা আর হয়নি। বাবা চেয়েছিলেন আইন বিষয়ে পড়ি। সেটাই করেছি। তবে আমি বড় হয়েছি কাপড়ের সঙ্গে। আমাদের কাপড়ের পারিবারিক ব্যবসা ছিল। পরে শ্বশুরবাড়িতেও এসে দেখি সেই একই চিত্র। সেখানেও সবাই টেক্সটাইলের সঙ্গে জড়িত। একটু বড় হওয়ার পর নিজের কাপড় নিজেই ডিজাইন করে বানিয়ে নিতাম। আত্মীয়-স্বজনদের গায়েহলুদের জন্য সবার কাপড় আমি করে দিতাম। ঈদেও সেটা হতো। কোন অনুষ্ঠানে কে কী পরবে, কীভাবে পরবে, এসবও আমি ঠিক করে দিতাম। এভাবে নিজে নিজেই তৈরি হওয়া।
ফ্যাশন ডিজাইনিংয়ে আপনার অনুপ্রেরণা কে?
একজন ডিজাইনার নানাভাবে অনুপ্রাণিত হয়ে থাকেন। আমিও হই। তবে আমার রোল মডেল আমার বাবা। তাঁর মতো সুদর্শন আর ফ্যাশনেবল মানুষ আমি কম দেখেছি। তিনিই আমার প্রেরণা।
ফ্যাশন ডিজাইনিংয়ের সঙ্গে তো ব্যবসার সম্পর্ক আছে। দুটিকে কীভাবে মেলান?
আসলে ডিজাইনিং তো সৃষ্টিশীলতা। আমি সেটা করি। ভাবনা–চিন্তা করেই। অবশ্য একই সঙ্গে সঠিক মূল্য নির্ধারণও গুরুত্বপূর্ণ। ফলে আমি ডিজাইনিং আর ম্যাটেরিয়ালের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে তৈরি করা পোশাকের মূল্য নির্ধারণ করার চেষ্টা করি। এই ভারসাম্য রাখতেই হয়। কারণ, আমি আমার ক্লায়েন্টদের কথা ভাবি। তাদের কাছে যথাযথ মূল্যে পোশাক সরবরাহ করতে চাই। এ জন্য অবশ্যই ব্যবসায়িক জ্ঞান প্রয়োজন হয়। আমার একাডেমিক শিক্ষা এক্ষেত্রে সহায়ক হয়েছে। তবে সৃজনশীলতা–সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত আমি মন থেকেই নিই। সেখানে আমার ক্লায়েন্টদের রুচি আর প্রত্যাশাই সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য পায়।
করোনার কিছুদিন আগে আপনি ডিজাইনার হিসেবে যাত্রা শুরু করলেন। এই প্রতিকূল সময়ে কীভাবে টিকে থাকলেন?
সত্যি বলতে কী, আমার সমস্যা হয়নি। কারণ, আমি অনলাইনে বিক্রি করেছি। আমার ক্রেতারা যথেষ্ট সাড়া দিয়েছেন। তা ছাড়া আমি খুবই এক্সক্লুসিভ কাজ করি। আমার নির্দিষ্টসংখ্যক ক্লায়েন্টের জন্য। এতে করে আমি প্রতিটি পোশাক তাঁদের মনমতো নকশা অনুযায়ী তৈরিতে পূর্ণ মনোযোগ দিতে পারি। আর একবার যে আমার পোশাক নেন, তিনি বার বার নেন। অন্যদেরও নিতে বলেন।
আপনার ক্রেতা কারা?
আমার ক্রেতারা সবাই মূলত নারী। তাঁরা ২৫ বছরের বেশি বয়সী। আমি একটু উচ্চবিত্তের জন্যই পোশাক তৈরি করে থাকি। বিশেষ কিছু পুরুষ ক্রেতার জন্য মাঝেমধে৵ পাঞ্জাবি করি। তবে সেটা খুবই কম। বর্তমানে ১৬ বছরের বেশি বয়সীদের জন্য একটা লাইন করেছি। আর আগামী ঈদে বাচ্চাদের জন্য সোনিয়া মুসার পোশাক পাওয়া যাবে।
সোনিয়া মুসার পোশাকের বিশেষত্ব কী? ভারত বা পাকিস্তানি পণ্যের সঙ্গে পার্থক্য কোথায়?
আমার বিশেষত্বই হলো গুণগত মান। আর অবশ্যই বিক্রয়–পরবর্তী সেবা। মানের সঙ্গে আমি আপস করি না। কাপড় এবং কাজ নিয়ে আমি ভীষণ খুঁতখুঁতে। তা ছাড়া ভারত এবং পাকিস্তানি ডিজাইনারদের পোশাক তাঁদের মতো। আমি আমার মতো করে তৈরি করি। আমার কারিগরেরা সবাই বাংলাদেশি। আমার কাজ ভারত বা পাকিস্তানের চেয়ে আলাদা হয় বলেই অনেক ভারতীয় নিয়মিত আমার পোশাক কিনে থাকেন।
ডিজাইনে আপনি কোনটাকে বেশি প্রাধান্য দেন? কাপড় না নকশা?
আমার কাছে দুটিই গুরুত্বপূর্ণ। তবে কাপড়কে মাথায় রেখেই আমি আমার ভাবনাকে সাজাই। তারপর বাস্তবায়ন করি।
‘টেকসই ফ্যাশন’ বিষয়টি এখন খুব শোনা যাচ্ছে। আপনার কাজে এর প্রভাব কতটা?
আমি দ্রুত ফ্যাশন বা ফাস্ট ফ্যাশনের উপযোগী পোশাক করি না। বরং আমার পোশাক টেকসই আর দীর্ঘস্থায়ী। এ ছাড়া এমন কিছু পোশাক, বিশেষত বিয়ের পোশাক, আমি তৈরি করি যা এক প্রজন্ম নয়, পরবর্তী প্রজন্মও অনায়াসে পরতে পারবে। আমি মনে করি, এভাবেই আমি টেকসই ফ্যাশনকেই প্রাধান্য দিচ্ছি।
কোনো অনুষ্ঠানে আপনার পোশাকে অন্যদের দেখলে কেমন লাগে?
ভালো তো অবশ্যই লাগে। কিংবা কেউ আমার কাজ পছন্দ করলে, প্রশংসা করলে একই অনুভূতি হয়। সৃষ্টিশীলতার স্বীকৃতি আমাকে নতুন কাজে উৎসাহিত করে।