বিশ্বের সবচেয়ে নামকরা লাক্সারি ব্র্যান্ডগুলোর একটি শ্যানেল। নতুন কালেকশন নিয়ে বছরের শুরুতেই একটা ফ্যাশন শো করেছে শ্যানেল। তবে নতুন কালেকশনের জন্য নয়, সম্পূর্ণ ভিন্ন এক কারণে আলোচনায় উঠে এসেছে সেই শো। শোতে হলভর্তি মানুষের সামনে ঘোড়ায় চড়ে ছুটে আসেন শ্যানেলের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর, মডেল, লেখক, সাংবাদিক ও সমাজকর্মী শার্লট কাসুরাগে। তাঁর মাথায় ছিল কালো হেলমেট। কালো চকমকে পোশাকটিও জ্বলজ্বল করে আলো ছড়িয়েছে নিজস্ব ঢংয়ে।
ঘোড়ায় চড়ে মডেলের র্যাম্পে আগমন অবশ্য নতুন কোনো আইডিয়া নয়। শ্যানেলেরই উদ্ভাবন! তবে সেই ঘটনাটা বোঝার জন্য অবশ্য শ্যানেলের নতুন করে ফিরে আসার গল্পটা জানতে হবে। মৃত্যুর পর কোকো শ্যানেলের সম্পত্তির উত্তরাধিকার হন তাঁর একমাত্র ভাইপো প্যালাসি। আর শ্যানেলের মালিকানা চলে যায় পিয়ের ওয়ারটাইমারের উত্তরাধিকারদের কাছে। শ্যানেলের প্রতিপত্তি দিন দিন কমতে থাকে। নানা হাতে পড়েও এই সাম্রাজ্যের ভাগ্য বদল হচ্ছিল না।
এই পরিস্থিতির পরিবর্তন আসে ১৯৮৩ সালে। শ্যানেলের চেয়ারম্যান তখন এই ব্র্যান্ডের দায়িত্ব নিতে সময়ের অন্যতম সেরা ডিজাইনার কার্ল লেগারফেল্ডকে আমন্ত্রণ জানান। শ্যানেলের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য প্রয়োজনীয় সব সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতাও তাকে দেন।
অনেকেই তখন কার্লকে নিষেধ করেছিলেন। বলেছিলেন, ‘ওটা (শ্যানেল) মৃত, ছুঁয়ো না।’ কিন্তু চ্যালেঞ্জটা তিনি নিয়েছিলেন। আর তাঁরই জাদু স্পর্শে নতুন করে প্রাণ ফিরে পায় শ্যানেল। বাকিটা ইতিহাস। শ্যানেল তাঁর শত বছরের ইতিহাসের সেরা সময়ে পা রাখে। কার্ল লেগারফেল্ডের সিদ্ধান্তেই প্রথমবার ঘোড়া নিয়ে শ্যানেলের পোশাক গায়ে চাপিয়ে র্যাম্পে হাঁটেন মডেলরা। এর মাধ্যমে তিনি কোকো শ্যানেলের ঘোড়াপ্রীতিকে সম্মান জানাতে চেয়েছিলেন। পরে সেটা দারুণ আলোচনার সৃষ্টি করে। অন্যরাও এই আইডিয়া দ্বারা প্রভাবিত হয়।
শার্লট কাসুরাগের শরীরে বইছে পশ্চিম ইউরোপের দেশ মনাকোর রাজপরিবারের রক্ত। তিনি গ্রেস কেলির নাতনি ও প্রিন্সেস ক্যারোলিনের কন্যা। রাজপরিবারের সদস্য হয়েও তিনি ক্যারিয়ার হিসেবে বেছে নিয়েছেন মডেলিংকেই। অবশ্য এটা তাঁর পরিবারের জন্য নতুন নয়। তাঁর মা আর নানিও শ্যানেরের পণ্যদূতের দায়িত্ব পালন করেছেন। ঘোড়া চালানোতে পারদর্শী শার্লট। তাই তাঁকে আরোহী হিসেবে ভরা মজলিসে হাজির করার ঝুঁকিটা নিয়েছে শ্যানেল।
এই কালেকশনে যে কালো, সাদা, গোলাপি জ্যাকেট আর কোট আনা হয়েছে—সেগুলো সবই ১৯৯০–এর দশকের ফ্যাশন থেকে অনুপ্রাণিত। অনুষঙ্গ আর মেকআপেও ছিল ‘প্রাচীন’ লুক। তাই সেই সময়ের লুক এই সময়ে আনার জন্য সে রকম একটি ঘোড়ায় চড়ে এসেছে ‘শো স্টপার’। পুরোনো ফ্যাশনই যে একটু এদিক–সেদিক হয়ে আবার নতুন করে ফিরে ফিরে আসছে, সে কথারই জানান দিল শ্যানেলের এই শো।