Image default
খেলাজীবনী

কিলিয়ান এমবাপে : ফরাসী ফুটবলের নতুন সেনসেশন

কিলিয়ান এমবাপ্পে বিশ্বের এক তরুণ ফুটবলারের নাম । তিনি তার দ্রুত গতির জন্য সেরা । তিনি বল নিয়ে চুটলে তাকে থামানে প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে । এমবাপ্পে১৯৯৮ সালের ২০ ডিসেম্বর ফ্রান্সের বন্দিতে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তার পিতা উইলফ্রিড ক্যামেরুন থেকেই ফ্রান্সে আসেন। তিনি এমবাপের প্রতিনিধি এবং এএস বন্দির কোচ হিসেবেও কর্মরত ছিলেন। তার দত্তক নেওয়া ভাই জাইরে কেম্বো একোকোও একজন পেশাদার ফুটবলার । তার মা ফায়জা আলজেরীয়ান বংশোদ্ভূত এবং তিনি একজন হ্যান্ডবল খেলোয়াড়ও । তার ছোট ভাইয়ের নাম আদেয়েমি এমবাপে।

ফরাসি ফুটবলের মধ্যে অন্যতম উজ্জ্বল নক্ষত্র হচ্ছে কিলিয়ান এমবাপ্পে। অভূতপূর্ব গতি, যে কোনও পজিশনে খেলার ক্ষমতা রাখে, আশ্চর্যজনক পারফরম্যান্স তার এই সমস্ত কিছুই পিএসজি স্ট্রাইকারকে সর্বাধিক জনপ্রিয় ফুটবলার হিসেবে এবং 2018 সালের বিশ্বকাপের আসল সন্ধানের পরিণত করেছিল। একই সময়ে প্রশিক্ষকরা নিশ্চিত যে কিলিয়ানদের সর্বাধিক উচ্চ-প্রোফাইলের প্রাপ্তি এখনও পর্যন্ত আসেনি।

‘ফুটবলার হিসেবেই কিলিয়ানের জন্ম’

মাত্র তিন মাস আগে পর্যন্তও এমবাপের পিতা উইলফ্রিড ছিলেন এএস বন্ডি ক্লাবের পরিচালকদের একজন। এই ক্লাবটিতে খেলে বিভিন্ন বয়সের ছেলেরা। তাদের জন্যে আছে আলাদা আলাদা গ্রুপ- অনূর্ধ ১০, অনূর্ধ ১৭।

এমবাপের পিতা এই ক্লাবের সাথে ২৫ বছরেরও বেশি সময় ধরে জড়িত ছিলেন।

খুব অল্প সময়ের মধ্যেই কিলিয়ান এমবাপের জীবনে অনেক কিছু ঘটে গেল।

বিশ্বকাপের ‘শেষ ১৬’ রাউন্ডের নকআউট পর্বে আর্জেন্টিনাকে ৪-৩ গোলে হারিয়ে ফ্রান্সের কোয়ার্টার ফাইনালে যাওয়ার নায়ক হয়ে গেলেন ১৯ বছর বয়সী এই ফুটবল তারকা।

তার এই উত্থানে খুব বেশি সময় লাগেনি। মাত্র তিন বছর আগে তিনি হাই স্কুলে তার লেখাপড়া শেষ করেছেন।

তারপর দুই বছরেরও কম সময়ের মধ্যে তিনি হয়ে উঠলেন একজন পেশাদার ফুটবলার। ফ্রান্সের জাতীয় দলের খেলোয়াড়।

বর্তমানে তিনি ‘লোনে’ খেলছেন ফরাসী ক্লাব প্যারিস সঁ জার্মেইনের হয়ে। এর মধ্যে তিনি দু’বার ফরাসী লীগ জিতেছেন।

ধারণা করা হচ্ছে, এখন এই প্যারিস সঁ জার্মেইন ক্লাবে স্থায়ীভাবে খেলার ব্যাপারে তার সাথে ১৮ কোটি ইউরোর একটি চুক্তি হতে পারে।

রাজধানী প্যারিসের উত্তর-পূর্ব শহরতলিতে বেড়ে ওঠার সময় ফুটবলে দক্ষতা অর্জন করতে শুরু করেন তিনি। সেসময় তিনি খেলতেন এএস বন্ডি ক্লাবে।

এমবাপে খেলা শুরু করার পর হু হু করে জনপ্রিয়তা বাড়তে থাকে এই ক্লাবের। একই সাথে অল্পবয়সী ছেলেরাও ভিড় করতে শুরু করে এই ক্লাবের হয়ে খেলার জন্যে। তাদের স্বপ্ন যে তারাও একটি এমবাপের মতো ফুটবলার হবেন।

একেবারে শিশু বয়সে এমবাপে যে ক্লাবের হয়ে খেলা শুরু করেছিলেন বিবিসি স্পোর্টসের সাংবাদিকরা সেখানে গিয়েছিলেন। কথা বলেছেন, এমবাপেকে যারা চেনেন তাদের সাথে।

ক্লাব ফুটবল

বন্দির হয়ে তার বাবা উইলফ্রিদের অধীনে এমবাপে তার খেলোয়াড়ি জীবন শুরু করেছেন। পরবর্তীতে তিনি প্রখ্যাত ফেরনঁ সাস্ত্রেতে ভর্তি হয়েছিলেন। তার ক্রীড়া নৈপুণ্যের ফলে স্পেনীয় ক্লাব রিয়াল মাদ্রিদ ও ভালেনসিয়া ছাড়াও বেশ কয়েকটি ফরাসি ক্লাব তার সাথে চুক্তিবদ্ধ হওয়ার চেষ্টা করেছিল। এমবাপে মাত্র ১১ বছর বয়সে চেলসি যুব দলের হয়ে চার্ল্টন অ্যাথলেটিক যুব দলের বিরুদ্ধে একটি ম্যাচ খেলতে ইংল্যান্ডে গিয়েছিলেন। পরবর্তীতে এমবাপে মোনাকোর যুব দলের সাথে চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন।

এমবাপে ফ্রান্স অনূর্ধ্ব-১৭ এবং ফ্রান্স অনূর্ধ্ব-১৯ দলের হয়ে খেলার মাধ্যমে ফ্রান্সের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। ২০১৪ সালের ১০ই সেপ্টেম্বর তারিখে তিনি ফ্রান্স অনূর্ধ্ব-১৭ দলের হয়ে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে অভিষেক করেছেন। ফ্রান্স অনূর্ধ্ব-১৯ দলের হয়ে তিনি ২০১৬ উয়েফা ইউরোপীয় অনূর্ধ্ব-১৯ চ্যাম্পিয়নশিপে অংশগ্রহণ করেছেন, উক্ত প্রতিযোগিতার ফাইনালে তার দল ইতালি অনূর্ধ্ব-১৯ দলকে ৪–০ গোলের ব্যবধানে পরাজিত করে উক্ত প্রতিযোগিতার ইতিহাসে অষ্টমবারের মতো শিরোপা ঘরে তুলতে সক্ষম হয়েছিল। উক্ত আসরে তিনি ৫ ম্যাচে ৫টি গোল করেছিলেন। ফ্রান্সের বয়সভিত্তিক দলের হয়ে তিনি ১৩ ম্যাচে অংশগ্রহণ করে ৭টি গোল এবং ১টি শিরোপা জয়লাভ করেছেন। তিনি ২০১৬ সালের ২৬শে মার্চ তারিখে অনুষ্ঠিত ২০১৬ উয়েফা ইউরোপীয় অনূর্ধ্ব-১৯ চ্যাম্পিয়নশিপ বাছাইপর্বের ম্যাচে ডেনমার্ক অনূর্ধ্ব-১৯ দলের বিরুদ্ধে ফ্রান্সের বয়সভিত্তিক দলের হয়ে প্রথমবারের মতো গোল করেছেন।

২০১৭ সালের ২৫শে মার্চ তারিখে, মাত্র ১৮ বছর ৩ মাস ৫ দিন বয়সে, ডান পায়ে ফুটবল খেলায় পারদর্শী এমবাপে লুক্সেমবুর্গের বিরুদ্ধে অনুষ্ঠিত ২০১৮ ফিফা বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের ম্যাচে অংশগ্রহণ করার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক ফুটবলে ফ্রান্সের হয়ে অভিষেক করেছেন। উক্ত ম্যাচের ৭৮তম মিনিটে আক্রমণভাগের খেলোয়াড় দিমিত্রি পায়েতের বদলি খেলোয়াড় হিসেবে তিনি মাঠে প্রবেশ করেন; ম্যাচে তিনি ১২ নম্বর জার্সি পরিধান করে কেন্দ্রীয় আক্রমণভাগের খেলোয়াড় হিসেবে খেলেছেন। ম্যাচটি ফ্রান্স ৩–১ গোলের ব্যবধানে জয়লাভ করেছিল। জাতীয় দলের হয়ে অভিষেকের ৫ মাস ৬ দিন পর, ফ্রান্সের জার্সি গায়ে প্রথম গোলটি করেন; ৩১শে আগস্ট তারিখে, নেদারল্যান্ডসের বিরুদ্ধে ম্যাচের চতুর্থ গোলটি করার মাধ্যমে তিনি আন্তর্জাতিক ফুটবলে তার প্রথম গোলটি করেন। ফ্রান্সের হয়ে অভিষেকের বছরে এমবাপে সর্বমোট ১০ ম্যাচে ১টি গোল করেছেন।

এমবাপে রাশিয়ায় অনুষ্ঠিত ২০১৮ ফিফা বিশ্বকাপের জন্য দিদিয়ে দেশঁয়ের অধীনে ঘোষিত ফ্রান্স দলে স্থান পাওয়ার মাধ্যমে প্রথমবারের মতো ফিফা বিশ্বকাপে অংশগ্রহণ করার সুযোগ পান। ২০১৮ সালের ১৬ই জুন তারিখে, তিনি অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে গ্রুপ পর্বে নিজেদের প্রথম ম্যাচে অংশগ্রহণ করার মাধ্যমে ফিফা বিশ্বকাপে অভিষেক করেছেন। ৫ দিন পর, পেরুর বিরুদ্ধে ম্যাচের ৩৪তম মিনিটে তিনি ফিফা বিশ্বকাপে তার প্রথম এবং উক্ত ম্যাচের জয়সূচক গোলটি করেছেন। এই আসরের ফাইনালে তার দল ক্রোয়েশিয়াকে ৪–২ গোলের ব্যবধানে পরাজিত করে উক্ত প্রতিযোগিতার ইতিহাসে দ্বিতীয়বারের মতো শিরোপা ঘরে তুলতে সক্ষম হয়েছিল, ম্যাচের ৬৫তম মিনিটে লুকাস এরনঁদেজের অ্যাসিস্ট হতে গোল করেছেন। উক্ত বিশ্বকাপে তিনি ৭ ম্যাচে ৪টি গোল করে তিনি সেরা যুব খেলোয়াড়ের পুরস্কার জয়লাভ করেছেন।

২০০৪–০৫ মৌসুমে, ফরাসি ফুটবল ক্লাব বন্দির যুব পর্যায়ের হয়ে খেলার মাধ্যমে এমবাপে ফুটবল জগতে প্রবেশ করেছেন এবং পরবর্তীকালে মোনাকোর যুব দলের হয়ে খেলার মাধ্যমে তিনি ফুটবল খেলায় বিকশিত হয়েছেন। ২০১৫–১৬ মৌসুমে, ফরাসি ক্লাব মোনাকো যুব এবং মোনাকোর মূল দলের হয়ে খেলার মাধ্যমে তিনি তার জ্যেষ্ঠ পর্যায়ের খেলোয়াড়ি জীবন শুরু করেছেন, যেখানে তিনি ৩ মৌসুম অতিবাহিত করেছেন; মোনাকোর হয়ে তিনি ৪১ ম্যাচে ১৬টি গোল করেছেন। মাঝে তিনি এক মৌসুমের জন্য পারি সাঁ-জেরমাঁর হয়ে ধারে খেলেছেন। ২০১৮–১৯ মৌসুমে, তিনি প্রায় ১৪৫ মিলিয়ন ইউরোর বিনিময়ে মোনাকো হতে ফরাসি ক্লাব পারি সাঁ-জেরমাঁয় যোগদান করেছেন।

২০১৪ সালে, এমবাপে ফ্রান্স অনূর্ধ্ব-১৭ দলের হয়ে ফ্রান্সের বয়সভিত্তিক পর্যায়ে অভিষেক করেছিলেন। প্রায় ২ বছর যাবত ফ্রান্সের বয়সভিত্তিক দলের হয়ে খেলার পর, তিনি ২০১৭ সালে ফ্রান্সের হয়ে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে অভিষেক করেছেন; ফ্রান্সের জার্সি গায়ে তিনি এপর্যন্ত ৪৮ ম্যাচে ১৭টি গোল করেছেন। তিনি ফ্রান্সের হয়ে এপর্যন্ত ২০১৮ ফিফা বিশ্বকাপ এবং উয়েফা ইউরো ২০২০-এ অংশগ্রহণ করেছেন, যার মধ্যে ২০১৮ সালে দিদিয়ে দেশঁয়ের অধীনে ফিফা বিশ্বকাপের শিরোপা জয়লাভ করার পাশাপাশি ফ্রান্সের হয়ে বিশ্বকাপে সর্বকনিষ্ঠ গোলদাতা হিসেবে গোল করেছেন এবং পেলের পর দ্বিতীয় তরুণ খেলোয়াড় হিসেবে বিশ্বকাপের ফাইনালে গোল করেছেন।

ব্যক্তিগতভাবে, এমবাপে বেশ কিছু পুরস্কার জয়লাভ করেছেন, যার মধ্যে ২০১৭ সালে গোল্ডেন বয়, ২০১৮ ফিফা বিশ্বকাপের সেরা যুব খেলোয়াড়ের পুরস্কার, কোপা শিরোপা এবং টানা তিন মৌসুম লীগ ১-এর শীর্ষ গোলদাতার পুরস্কার অন্যতম। দলগতভাবে, এমবাপে এপর্যন্ত ১৩টি শিরোপা জয়লাভ করেছেন, যার মধ্যে ১টি মোনাকোর হয়ে, ১০টি পারি সাঁ-জেরমাঁর হয়ে, ২টি ফ্রান্সের হয়ে জয়লাভ করেছেন।

বাবা একজন খ্রিষ্টান ও মা মুসলিম, তাহলে এমবাপ্পে পালন করেন কোন ধর্ম? এটা সবার মনে প্রশ্ন জাগতে পারে এ চলতি বিশ্বকাপের ২০১৮ সালের ফাইনালে উঠেছিল ফ্রান্স এবং তারা চ্যাম্পিয়ন ও হয়েছিল । দ্বিতীয় শিরোপাটাও তারা জয়ের মাধ্যমে তুলে নিয়েছিল । আর তারা ফাইনালে পৌছতে বা জিততে ফ্রান্সের যে কয়েকজন তারকা সবচেয়ে বেশি অবদান রেখেছেন তাদের মধ্যে একজন হচ্ছে কিলিয়ান এমবাপ্পে।

ফ্রান্সের খেলোয়ার পগবা একজন মুসলিম। তিনি কিছুদিন আগেও ওমরাহ করে এসেছেন। তবে ফ্রান্সের নতুন তারকা কিলিয়ান এমবাপ্পে কি মুসলিম নাকি খ্রিষ্টান?

এমবাপ্পে কিন্তু জন্মসুত্রেই ফ্রান্সের নাগরিক নয়। তার বয়স যখন দুই বছর তখন তার বাবা মা তাকে নিয়ে ফ্রান্সে চলে আসে। তার বাবা ছিল খ্রিষ্টান এবং মা ছিল মুসলিম। বাবা ক্যামেরুনের নাগরিক এবং মা আলজেরিয়ার। তাই এই দম্পত্তির ঘরে জন্ম নেয়া কিলিয়ান এমবাপ্পে কোন ধর্ম পালন করেন সেটাই ভক্তের সবচেয়ে আগ্রহের বিষয়।

তবে বাবা এবং মায়ের ধর্মের বিষয়ে পরিচয় পাওয়া গেলেও এমবাপ্পে কোন ধর্ম পালন করেন সেটা কিন্তু এখনো জানা যায়নি।

Related posts

বাস্তিয়ান শোয়েনস্টেইগার: এক জীবন্ত ফুটবলার গল্প

News Desk

এড ওয়ারডার 26 বছরের অবিশ্বাস্য উন্নয়নের পর ESPN থেকে প্রস্থান করছে

News Desk

ক্যাটলিন ক্লার্কের 2024 অলিম্পিকের প্রত্যাখ্যান ‘তার জন্য একটি ভাল জিনিস’: জেমেল হিল

News Desk

Leave a Comment