রক কিংবদন্তি আইয়ুব বাচ্চুর জন্মদিন আজ। ১৯৬২ সালের ১৬ আগস্ট চট্টগ্রামের পটিয়ায় জন্মগ্রহণ করেন তিনি। পরিবারের অমত থাকলেও ব্যান্ডসংগীতের প্রতি তাঁর ভালোবাসা জন্মায় শৈশব থেকেই। সন্তানের এমন আগ্রহ দেখে ১১ তম জন্মদিনে বাবা একটি গিটার কিনে দেন। সেই থেকেই শুরু, এগারো বছরের কিশোর একদিন হয়ে ওঠেন দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে জনপ্রিয় গিটারিস্ট ও ব্যান্ড তারকা।
কলেজজীবনে ওঠার পরই বন্ধুদের নিয়ে একটি ব্যান্ড গঠন করেন আইয়ুব বাচ্চু। প্রথমে এর নাম ছিল ‘গোল্ডেন বয়েজ’ পরে অবশ্য নাম বদলে ‘আগলি বয়েজ’ রাখেন তারা। এই ব্যান্ডের গায়ক ছিলেন কুমার বিশ্বজিৎ। আর গিটারিস্ট ছিলেন আইয়ুব বাচ্চু। তারা স্থানীয় বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে গান করতেন।
১৯৭৭ সালে ‘ফিলিংস’ ব্যান্ডে গিটারিস্ট হিসেবে যোগ দেন আইয়ুব বাচ্চু। এরপর ১৯৮০ সালে তিনি ‘সোলস’-এ যোগদান করে। এই ব্যান্ডের হয়ে টানা দশ বছর পারফর্ম করেছিলেন তিনি। অতঃপর নিজে কিছু করার ভাবনা থেকে ১৯৯০ সালে গড়ে তোলেন ‘লিটল রিভার ব্যান্ড’। যা পরবর্তীতে ‘লাভ রানস ব্লাইন্ড’ বা ‘এলআরবি’ নামে বিপুল খ্যাতি লাভ করে।
ব্যান্ডের হয়ে আইয়ুব বাচ্চু উপহার দিয়েছেন এলআরবি (১৯৯২), সুখ (১৯৯৩), তবুও (১৯৯৪), ঘুমন্ত শহরে (১৯৯৫), ফেরারি মন (১৯৯৬), স্বপ্ন (১৯৯৬), আমাদের বিস্ময় (১৯৯৮), মন চাইলে মন পাবে (২০০০), অচেনা জীবন (২০০৩), মনে আছে নাকি নেই (২০০৫), স্পর্শ (২০০৮) এবং যুদ্ধ (২০১২) অ্যালবামগুলো।
এ ছাড়া একক শিল্পী হিসেবে আইয়ুব বাচ্চুর অ্যালবামের মধ্যে রয়েছে-রক্তগোলাপ (১৯৮৬), ময়না (১৯৮৮), কষ্ট (১৯৯৫), সময় (১৯৯৮), একা (১৯৯৯), প্রেম তুমি কি! (২০০২), দুটি মন (২০০২), কাফেলা (২০০২), প্রেম প্রেমের মতো (২০০৩), পথের গান (২০০৪), ভাটির টানে মাটির গানে (২০০৬), জীবন (২০০৬), সাউন্ড অব সাইলেন্স (ইন্সট্রুমেন্টাল, ২০০৭), রিমঝিম বৃষ্টি (২০০৮), বলিনি কখনো (২০০৯), জীবনের গল্প (২০১৫)। এর বাইরে তাঁর গাওয়া অসংখ্য মিক্সড অ্যালবাম রয়েছে।
আইয়ুব বাচ্চুর গাওয়া অসংখ্য কালজয়ী গানের মধ্যে রয়েছে ‘সেই তুমি’, ‘কষ্ট পেতে ভালোবাসি’, ‘এখন অনেক রাত’, ‘মেয়ে’, ‘কেউ সুখী নয়’, ‘হাসতে দেখো গাইতে দেখো’, ‘এক আকাশের তারা’, ‘ঘুমন্ত শহরে’, ‘রুপালি গিটার’, ‘উড়াল দেবো আকাশে’, ‘একচালা টিনের ঘর’, ‘তারাভরা রাতে’, ‘বাংলাদেশ’, ‘বেলা শেষে ফিরে এসে’, ‘আমি তো প্রেমে পড়িনি’, ‘আম্মাজান’, ‘ফেরারি মন’ ইত্যাদি।
২০১৮ সালের ১৮ অক্টোবর লাখো ভক্ত, পরিবার পরিজনকে কাঁদিয়ে না ফেরার দেশে চলে যান রক কিংবদন্তি আইয়ুব বাচ্চু। এদিন সকালে নিজ বাসায় আইয়ুব বাচ্চুকে অচেতন অবস্থায় পাওয়া যায়। এরপর তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে। সেখানে চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।