আগামী মার্চে মুক্তি পেতে পারে তানিম রহমান অংশু পরিচালিত ওয়েব সিরিজ ‘বুকের মধ্যে আগুন’। সিরিজটির প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেছেন ছোট পর্দার জনপ্রিয় অভিনেতা জিয়াউল ফারুক অপূর্ব। কয়েক দিন আগেই মুক্তি পেয়েছে এর টিজার। টিজার দেখেই গল্পের প্রেক্ষাপটের সঙ্গে বাংলাদেশের প্রয়াত নায়ক সালমান শাহের মৃত্যুর ঘটনার মিল খুঁজে পেয়েছেন অনেকেই।
এবার এই ওয়েব সিরিজে আপত্তি তুলেছেন বাংলাদেশের প্রয়াত নায়ক সালমান শাহের মা নিলুফার চৌধুরী ও মামা আলমগীর কুমকুম। সালমানের মামা আলমগীর কুমকুম রোববার (৫ ফেব্রুয়ারি) সিলেট জজ কোর্টের আইনজীবী মোহাম্মদ মইনুল ইসলামের মাধ্যমে এ বিষয়ে একটি লিগ্যাল নোটিশ পাঠান। এ ছাড়া সোমবার (৬ ফেব্রুয়ারি) সিলেট মহানগর পুলিশের কোতোয়ালি থানায় সাধারণ ডায়েরিও (জিডি) করেছেন তিনি।
বাংলাদেশের এক স্টাইলিশ সুপারস্টার, রঙিন দুনিয়ায় তাঁর জনপ্রিয়তা যখন তুঙ্গে, তখন হঠাৎ একদিন গলায় ফাঁস দিয়ে তাঁর মৃত্যুর খবরে উত্তাল গোটা দেশ। সবার মনে প্রশ্ন, দেশের আনাচে-কানাচে যার লাখ লাখ ভক্ত, সেই নায়ক এত তারকাখ্যাতির মধ্যেও কেন আত্মহত্যা করবেন। একি সত্যিই কি আত্মহত্যা নাকি হত্যা। ‘বুকের মধ্যে আগুন’ ওয়েব সিরিজের গল্প এ রকমই।
গত শতকের নব্বইয়ের দশকের আগে পরে চলচ্চিত্র যারা দেখেছেন বা খোঁজখবর রাখেন, তাঁদের কাছে এই গল্পের প্রেক্ষাপট খুবই পরিচিত মনে হবে। এখনকার অনেক তরুণের কাছে এটা একটা সাধারণ কাল্পনিক গল্পের প্লট মনে হতে পারে। কিন্তু না, এই ওয়েব সিরিজের মৃত্যুর ঘটনার সঙ্গে ঢালিউডের সুপারস্টার সালমান শাহের মৃত্যুর ঘটনার মিল আছে। যদিও জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত নির্মাতা তানিম রহমান অংশু জানিয়েছিলেন সালমানের মৃত্যুর ঘটনাকে উপজীব্য করে তৈরি করা না হলেও কল্পনাধর্মী এই সিরিজের সঙ্গে তার মিল পাওয়া যেতে পারে।
এমন স্পর্শকাতর বিষয়ে বানানো সিরিজে আপত্তি সালমানের পরিবারের। দু’দিন আগেই তাঁর মা নিলুফার চৌধুরী গণমাধ্যমকে জানান, সিরিজটি বন্ধের দাবিতে আইনজীবী ফারুক আহমেদের মাধ্যমে হাইকোর্টে একটি রিট করেছেন। যার মাধ্যমে তিনি সালমান শাহের নামে গান, নাটক, সিনেমা বা ওয়েব সিরিজ নির্মাণ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করার আবেদন জানিয়েছেন।
এ ছাড়া, ‘বুকের মধ্যে আগুন’ নামে ওয়েব সিরিজ নির্মাতা, কলাকুশলী ও অভিনয়শিল্পীদের বিরুদ্ধে অচিরেই ফরমান জারির কথাও জানান নীলা চৌধুরী। সেই ফরমান প্রকাশের আগেই সালমানের মামা আলমগীর কুমকুম গতকাল লিগ্যাল নোটিশটি পাঠান।
আইনি নোটিশে বলা হয়েছে, সালমান শাহের মৃত্যুকে একটি মহল আত্মহত্যা বলে প্রচার করে আসছে। এ নিয়ে আদালতে মামলা চলছে। তাঁর মৃত্যু রহস্য নিয়ে সম্প্রতি ওয়েব সিরিজ নির্মাণের পাঁয়তারা চলছে। বিচারাধীন বিষয় নিয়ে ওয়েব সিরিজ নির্মাণে সংশ্লিষ্টদের বিরত থাকতে বলা হয়েছে। অন্যথায় এতে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়।
এ বিষয়ে সালমান শাহের মামা আলমগীর কুমকুম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘সালমান শাহ ১৯৯৬ সালে ৬ সেপ্টেম্বর মারা যান। তাঁর মৃত্যু নিয়ে রহস্য রয়েছে। এ নিয়ে মামলা বিচারাধীন। বিষয়টি এখনো সুরাহা হয়নি। এই অবস্থায় পরিবারের কাউকে ক্রিপ্ট না দেখিয়ে ওয়েব সিরিজ নির্মাণ করা ঠিক হয়নি। এতে বিষয়টি ভুলভাবে উপস্থাপন হতে পারে। এ জন্য আমরা সংশ্লিষ্টদের ওয়েব সিরিজ তৈরি থেকে বিরত থাকতে বলেছি। প্রয়োজনে মামলাও করব।’
কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ আলী মাহমুদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আলমগীর কুমকুম সালমান শাহকে নিয়ে একটি ওয়েব সিরিজ নির্মাণের বিষয়ে শঙ্কা প্রকাশ করে জিডি করেছেন।’
সালমান শাহ মাত্র চার বছরের ক্যারিয়ারে ২৭টি সিনেমায় অভিনয় করে দর্শক হৃদয়ে দীর্ঘস্থায়ী জায়গা করে নিয়েছেন। মাত্র ২৪ বছর বয়সে অস্বাভাবিক মৃত্যুতে থেমে যায় তাঁর পথচলা। ২৭ বছর পেরিয়ে গেলেও তাঁর মৃত্যু রহস্যের জট খোলেনি। সেটি কি হত্যা, নাকি আত্মহত্যা এখন পর্যন্ত মৃত্যু রহস্যের সমাধান হচ্ছে না। আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো বলছে আত্মহত্যা। তবে এটা আত্মহত্যা তা মেনে নিতে পারেননি তাঁর পরিবার ও ভক্তরা।
গত ২৩ জানুয়ারি এর টিজার প্রকাশ করা হয়। প্রকাশিত এর টিজারে দেখা যায়, রহস্য মোড়া এই মৃত্যুর জট খুলতে নেমেছেন এএসপি গোলাম মাইন চরিত্রে অপূর্ব। তাঁর উপস্থাপন নজর কেড়েছে দর্শকদের।
‘বুকের মধ্যে আগুন’ ওয়েব সিরিজে আরও অভিনয় করছেন–তারিক আরাম খান, গাজি রামায়েত, তাকিয়া আহমেদ, তৌকীর আহমেদ, ইয়াশ রোহান, তমা মির্জা, শাহনাজ সুমি, তানভীর প্রমুখ। ‘বুকের মধ্যে আগুন’ ওয়েব সিরিজটি আগামী ১৭ ফেব্রুয়ারি ওটিটি প্ল্যাটফর্ম হইচই বাংলাদেশে মুক্তি পাওয়ার কথা রয়েছে।