বরেণ্য গীতিকার, সুরকার, চলচ্চিত্র পরিচালক ও প্রযোজক গাজী মাজহারুল আনোয়ারের প্রতি শেষ শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক সংগঠনসহ সর্বস্তরের মানুষ।
আজ সোমবার সকাল ১১টায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় ঢাকা জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে পুলিশের একটি দল গার্ড অব অনার প্রদান করে। গার্ড অব অনার শেষে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের উদ্যোগে সর্বস্তরের শ্রদ্ধা নিবেদন জন্য মরদেহ শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে রাখা হয়।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি), সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়, জাসাস, শিল্পকলা একাডেমি, কবিতা পরিষদ, গান বাংলা, বিটিভি, ছাত্র ফেডারেশন, যুব মৈত্রী আন্দোলন, গণসংহতি আন্দোলন, বাংলাদেশ আবৃত্তি সমন্বয় পরিষদ, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক পরিষদ, বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোটসহ বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক সংগঠন শ্রদ্ধা জানায়।
ব্যক্তি পর্যায়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন কণ্ঠশিল্পী কুমার বিশ্বজিৎ, সাবিনা ইয়াসমিন, মনির খান, নকীব খান, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুস, চলচ্চিত্র নির্মাতা নাসির উদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু, তারিক সুজাত, জিএম মোরশেদ, ডাক্তার শাহাদাত হোসেন নিপুন প্রমুখ।
নাট্যব্যক্তিত্ব নাসির উদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু বলেন, ‘গাজী মাজহারুল আনোয়ার এমন এক সৃষ্টিশীল ব্যক্তি, যার সৃষ্টিতে আমরা বিদ্রোহী হয়েছি আবার প্রেমিক হয়েছি। এই মহান ব্যক্তি সারা জীবন তাঁর গান সৃষ্টিতে নিজেকে নিয়োজিত রেখেছেন। আমি যদি ভুল না করি তিনি বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ গান রচনাকারী।’
গাজী মাজহারুল আনোয়ারের বড় মেয়ে বলেন, ‘মানুষের উপস্থিতি আমার বাবার সফলতার প্রমাণ। আমাদের পুরো পরিবার আপনাদের সকলের তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য কৃতজ্ঞ। যদি বাবা কখনো কারও মনে কষ্ট দিয়ে থাকে তাঁকে ক্ষমা করে দেবেন।’ এ সময় তিনি পরিবারের পক্ষ থেকে গার্ড অব অনার প্রদানের জন্য প্রধানমন্ত্রী প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুস বলেন, ‘গাজী মাজহারুল আনোয়ারের মতো ব্যক্তিরা দৈহিকভাবে মৃত্যু বরণ করেন। কিন্তু আত্মিকভাবে তাঁরা সব সময় মানুষের মাঝে বেঁচে থাকেন। তাঁর জয় বাংলা, বাংলার জয় বাংলার মানুষকে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়তে উজ্জীবিত করেছে। এখন যে গান হয় তার বেশির ভাগ গানই বাণিজ্যিক গান। কিন্তু গাজী মাজহারুল আনোয়ারের গানে আমরা প্রেরণা পেয়েছি।’
কণ্ঠশিল্পী কুমার বিশ্বজিৎ বলেন, ‘বিগত দশ বছর ধরে বাংলা গান অভিভাবক শূন্য হয়ে যাচ্ছে। বাংলা গানের কালপুরুষ ছিলেন গাজী মাজহারুল ইসলাম। জন্ম যখন নিয়েছি সবাইকে মরতে হবে। তবুও কিছু মৃত্যু মেনে নেওয়া কষ্টের।’
সংগীত শিল্পী নকীব খান বলেন, গাজী মাজহারুল আনোয়ার ছিলেন সংগীতের জন্য নিবেদিত প্রাণ। একটি প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছিলেন। পৃথিবীর কোনো দেশে ২০ হাজার গান লিখেছেন এ রকম পাওয়া বিরল। তাঁর প্রত্যেকটি সৃষ্টি অসাধারণ। তিনি যা রেখে গেছেন তার তুলনা হবে না।
শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে তাঁর মরদেহ শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য এফডিসিতে নিয়ে যাওয়া হয়। বিকেলে গুলশানের আজাদ মসজিদে নামাজে জানাজা শেষে বনানী কবরস্থানে তাঁকে সমাহিত করা হবে।