কিংবদন্তি সান্তুরবাদক শিবকুমার শর্মা মারা গেছেন। আজ মঙ্গলবার মুম্বাইয়ে নিজ বাড়িতেই হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৪ বছর। শিবকুমার রেখে গেছেন স্ত্রী মনোরমা ও পুত্র রাহুল শর্মাকে।
এই বিখ্যাত শিল্পীর প্রয়াণে সাংস্কৃতি মহলে শোকের ছায়া। টুইট করে শোকপ্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শোক জানিয়ে নরেন্দ্র মোদি লিখেছেন, ‘আমাদের সাংস্কৃতিক জগৎ রিক্ত হলো পণ্ডিত শিবকুমার শর্মার প্রয়াণে। ‘‘সন্তুর’’ যন্ত্রটিকে তিনি বিশ্বের দরবারে বিশেষ মর্যাদায় প্রতিষ্ঠা করেছেন।’ উস্তাদ আমজাদ আলি লেখেন, ‘পণ্ডিত শিবকুমার শর্মার প্রয়াণ একটি যুগের অবসান। তিনি সান্তুর যন্ত্রটির অগ্রণী শিল্পী। আমার কাছে এটা ব্যক্তিগত শোকের মুহূর্ত। ওর আত্মার শান্তি কামনা করছি।’
কিডনির সমস্যায় ভুগছিলেন পণ্ডিত শিবকুমার শর্মা। পরিবার সূত্রে ভারতীয় সংবাদ মাধ্যম জানিয়েছে, পণ্ডিত শিবকুমার শর্মা গত ৬ মাস ধরে কিডনি সংক্রান্ত সমস্যায় ভুগছিলেন। তাঁর ডায়ালিসিস চলছিল। আজ সকালে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে তিনি মারা হন।
সন্তুরকে জনপ্রিয় করে তোলেন পণ্ডিত শিবকুমার শর্মা
কাশ্মীরের বাদ্যযন্ত্র সন্তুর উপত্যকার বাইরে খুব একটা পরিচিত ছিল না। এই বাদ্যযন্ত্রটিকে ভারতবর্ষে জনপ্রিয় করে তোলার ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা ছিল পণ্ডিত শিবকুমার শর্মার। সেতার, সরোদের মতোই জনপ্রিয় হয়ে ওঠে সন্তুর। অনেকেই এই বাদ্যযন্ত্রটির প্রতি আকৃষ্ট হয়ে ওঠেন। শিবকুমারের পুত্র রাহুল বাবার পদাঙ্ক অনুসরণ করেছেন। সান্তুরবাদক হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেয়েছেন তিনিও।
সঙ্গীত পরিচালক পণ্ডিত শিবকুমার শর্মাৎ
সন্তুর বাজানোর পাশাপাশি পণ্ডিত হরিপ্রসাদ চৌরাসিয়ার সঙ্গে মিলে ‘শিব-হরি’ নামে বিভিন্ন সিনেমার সঙ্গীত পরিচালনাও করেন পণ্ডিত শিবকুমার শর্মা। উল্লেখযোগ্য সিনেমাগুলোর মধ্যে রয়েছে ‘সিলসিলা’, ‘লামহে’, ‘চাঁদনি’।
বাবার কাছ থেকে প্রশিক্ষণ নেন পণ্ডিত শিবকুমার শর্মা
পণ্ডিত শিবকুমার শর্মা ১৯৩৮ সালের ১৩ জানুয়ারি জম্মুর একটি সম্ভ্রান্ত সঙ্গীতজ্ঞ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবা উমা দত্ত শর্মা ছিলেন একজন প্রথিতযশা সংগীতশিল্পী। পাঁচ বছর বয়স থেকেই পণ্ডিত শিবকুমার শর্মা তাঁর বাবার কাছ থেকে সংগীত ও তবলার প্রশিক্ষণ নেওয়া শুরু করেন। উমা দত্ত শর্মা সন্তুর নিয়ে অনেক গবেষণা করেন এবং সিদ্ধান্ত নেন যে তাঁর ছেলেকে তিনি ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের সন্তুর বাদক হিসেবে গড়ে তুলবেন। এই ভাবনা থেকেই পণ্ডিত শিবকুমার শর্মাকে ১৩ বছর বয়স থেকেই সন্তুরের প্রশিক্ষণ দেওয়া শুরু করেন তাঁর বাবা। ১৯৫৫ সালে তৎকালীন বম্বেতে পণ্ডিত শিবকুমার শর্মা জীবনে প্রথমবারের মতো জনসম্মুখে সন্তুর বাজান। এরপর আর তাঁকে পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। দেশের গণ্ডি ছাড়িয়ে বিদেশেও ছড়িয়ে পড়ে তাঁর খ্যাতি।
সম্মাননা
ভারতের সংগীত একাডেমিসহ জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বহু পুরস্কার পেয়েছেন শিবকুমার। ২০০১ সালে পান পদ্মবিভূষণ। এ ছাড়া আমেরিকার সম্মাননীয় নাগরিকত্ব প্রদান করা হয় তাঁকে।