কলকাতার অভিনেতা ঋত্বিক চক্রবর্তী ঢাকায় এসেছেন। উপলক্ষ্য—নতুন সিনেমার মুক্তি। ২৪ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ ও ভারতে একসঙ্গে মুক্তি পাচ্ছে ইন্দ্রনীল রায়চৌধুরীর নতুন সিনেমা ‘মায়ার জঞ্জাল’। এতে ঋত্বিকের সঙ্গে অভিনয় করেছেন অপি করিম। সিনেমাটি নিয়ে ঋত্বিক চক্রবর্তীর সাক্ষাৎকার নিয়েছেন খায়রুল বাসার নির্ঝর
‘মায়ার জঞ্জাল’ সিনেমায় আপনার যুক্ত হওয়ার গল্পটা কেমন?
এর আগে কবিদার (পরিচালক ইন্দ্রনীল রায়চৌধুরী) দুটো কাজ করেছি— ‘ফড়িং’ ও ‘ভালোবাসার শহর’। ‘মায়ার জঞ্জাল’ তাঁর সঙ্গে তৃতীয় কাজ। কবিদা একদিন আমাকে ফোনে বলেন, এ রকম একটা ছবি করতে চাইছি। তারপর স্ক্রিপ্ট শুনি। আমি সব সময়ই কবিদার সঙ্গে কাজ করতে আগ্রহী, ফলে মায়ার জঞ্জালের জন্য এক পায়ে খাঁড়াই ছিলাম বলা যায়।
এ সিনেমায় আপনার চরিত্রের নাম ‘চাঁদু’। চরিত্রটি নিয়ে যদি কিছু বলেন…
চাঁদু একটা প্লাষ্টিক কারখানায় চাকরি করতো, সেটা বন্ধ হয়ে গেছে। সে এখন একটা এটিএম বুথের গার্ড। রাত্তিরে মদটদ খেয়ে এসিতে ঘুমায়। মানুষের ছোটখাটো আশা আকাঙ্ক্ষা যেমন থাকে, তারও আছে। ছেলে একটা ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে পড়ুক বা টেলিভিশনে যে ধরনের ট্যালেন্ট শো হয় গানের, সে রকম একটা জায়গায় যাক। ফলে চাঁদু তার ছেলেকে গানও শেখায়। সে চায় কোথাও একটু বেড়াতে যাওয়া হোক। এই যে ছোট ছোট চাওয়া, সেগুলো অ্যাচিভ করতে গিয়ে চাঁদু যা যা করে, সেটাই গল্প। আমাদের পাশাপাশি সোহেল মণ্ডলের যে গল্প, সেটাতেও আমরা দেখি, ভালোবাসা, ঘৃণা, ভালো করতে গিয়ে খারাপ করে ফেলা, এসব অদ্ভুতভাবে জড়িয়ে থাকে।
মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের দুটি গল্প থেকে ‘মায়ার জঞ্জাল’ তৈরি হয়েছে (বিষাক্ত প্রেম ও সুবালা)। গল্পগুলো লেখা হয়েছে পঞ্চাশের দশকে। তখন সদ্য দেশ স্বাধীন হয়েছে, মানুষের অর্থনৈতিক সংকট প্রবল হয়ে দেখা দিয়েছে। তো ওই সময়ের জীবনযাপনের যে সংকট, সেটা কি এ সময়ে এসে বদলেছে?
মূল ক্রাইসিসগুলো পাল্টায়নি। ক্রাইসিসের চেহারাগুলো হয়তো এক রকমভাবে বদলে গেছে। সময়, সমাজ, মানুষের আদর্শ—সে সবও অনেকটা বদলেছে। মজার ব্যাপার হচ্ছে, ও রকম পঞ্চাশের দশকের দুটো গল্প, ২০১৯-এ এসে (ঋত্বিক সংশোধন করে নিলেন, ২০১৯ নয়, ২০১৮) ছবিটা যখন তৈরি হয়েছে, তখন একটা ভালো ছবির ক্ষেত্রে যা হয়, যে বহমান সময়ের মধ্য দিয়ে আমরা যাচ্ছি, সময়ের চিহ্ন ছবিতে থেকে যায়। সেটা ভীষণমাত্রায় ‘মায়ার জঞ্জাল’-এ আছে। ছবির প্রতিটা মানুষ, তাদের ক্রাইসিস, সেগুলো আমাদের অচেনা নয়।
মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের গল্পের ক্রাইসিসের চেহারাটা আলাদা ছিল, কিন্তু সেটা যখন মানুষের ওপরে এসে পড়ে, তখন ব্যাপারটা এক। সব দেশের মানুষ, সব ভাষার মানুষ অর্থনৈতিক চাপে পড়ে গেলে, প্রায় এ রকমই বিহ্যাব করে সর্বত্র। এ বিষয়গুলো ছবিটা করার আগে আমাদের মাথায় ছিল। কাজটা শেষ হওয়ার পর দেখে মনে হয়েছে, এই সমস্যা পৃথিবীর সব জায়গায়ই আছে। ফলে বিষয়টা গ্লোবাল হয়ে উঠেছে। এটা রিলেট করার জন্য আলাদা করে বাঙালি হতে হবে, তা নয়।
যখন প্রান্তিক জনগোষ্ঠির গল্প নিয়ে এ ধরনের কোনো সিনেমা তৈরি হয়, সেটা হয়তো অনেকেই দেখেন। কিন্তু যাঁদের নিয়ে বানানো হয়েছে, তাঁদের কাছে অনেক সময়ই কাজটা পৌঁছায় না। এটা নিয়ে আপনার কিছু বলার আছে কিনা?
এটা সত্যি। যাঁদের গল্প বলা হচ্ছে, সব সময় হয়তো তাঁরা দর্শক হয়ে ওঠেন না। কিন্তু এই ছবিটা (মায়ার জঞ্জাল) যাদের গল্প বলছে, ছবিটা তাদের কাছে পৌঁছুবে, কিন্তু তারা দেখতে পারবেন কিনা জানি না। তবে এ সিনেমার যে ভাষা, সেটা খুবই শুদ্ধ সিনেমার ভাষা। এটা সেই অর্থে তথাকথিত কমার্শিয়াল ছবি নয়, ফলে ভীষণ আমোদ হবে, ঠিক সেটা নয়। তবে প্রান্তিক দর্শক দেখবেন না, বা দেখলে বুঝতে পারবেন না—সে কথা বলার জায়গাটা একেবারেই নেই।
অপি করিমের সঙ্গে কাজের অভিজ্ঞতা কেমন ছিল?
দুর্দান্ত এক্সপেরিয়েন্স। অপি খুবই উঁচুমানের একজন অভিনেতা। শুধু নিজের কাজ করেই তো একজন অভিনেতার কাজ শেষ হয়ে যায় না, সহ-অভিনেতার জন্যও কিছু দায়িত্ব থেকে যায়। এ সিনেমায় অপি আমার স্ত্রীর ভূমিকায় অভিনয় করেছেন। তাঁর চরিত্রের নাম সোমা। সহ-অভিনেতা হিসেবে তাঁর কাছ থেকে অনেক হেল্প পেয়েছি। আমি তো মুগ্ধ অপির কাজ দেখে!
জয়া আহসান ও অপি করিম—বাংলাদেশের দুই অভিনেত্রীর সঙ্গেই আপনি কাজ করলেন। তাঁদেরকে নিয়ে যদি কিছু বলেন…
খুব যে কমপেরয়ার করতে পারব, তা নয়। দুজনই ভীষণ গুণী অভিনেত্রী। জয়ার সঙ্গে কাজ একটু বেশি করেছি। ‘মায়ার জঞ্জাল’-এর পরিচালক ছবিতে আমাদেরকে এত ডুবিয়ে রেখেছিলেন যে, আলাদা করে কো-অ্যাক্টর কী করছে, সেটা বিচার করার সুযোগ কম। কবিদা সেটে খুব একটা কথা বলেন না। খুব ইন্সট্রাকশন দিতে থাকেন, তাও নয়। কথাবার্তা যা হওয়ার শুটিংয়ের আগে হয়। রিহার্সেলের মতোন হয়। অপিসহ আমরা কয়েকবার বসেছি। সে আলাপ শুধু যে স্ক্রিপ্টের মধ্য কেন্দ্রীভূত হয়ে থেকেছে, তা নয়। তার বাইরেও চলে গেছে আলোচনা। আলাদাভাবেও স্ক্রিপ্ট পড়েছি, আবার অপির সাথে বসেও স্ক্রিপ্ট পড়েছি। ফলে একটা যে তালমিল, সেটা শুটিংয়ের আগেই হয়ে গিয়েছিল।
বরং জয়ার সাথে যে কাজগুলো আমি আগে করেছি, কবিদার সাথেই করেছিলাম ‘ভালোবাসার শহর’, সেখানে যেহেতু কবিদা এ প্রসেসেই কাজ করেন, ফলে এ প্রসেসের মধ্য দিয়ে গেছি। আবার এমন কাজও করেছি, ‘বিনিসুতোয়’ বলে আমি জয়ার সাথে একটা ছবি করেছি, সেখানে আমরা আগে কখনো রিহার্সেল করিনি। আমরা আলাদাভাবে পরিচালকের সাথে কথা বলেছি। তারপর সেটে এসে মিট করেছি। আমরা যেহেতু ছোট ইন্ডাস্ট্রির অভিনেতা, ফলে সব রকম প্রসেসে কাজ করতে আমরা তৈরি থাকি।
অপিকে কি কলকাতা ঘুরিয়ে দেখানো হয়েছে?
কাজের ব্যস্ততা ছিল। খুব যে অপির সাথে ঘোরা হয়েছিল তা নয়। তবে শুটিংয়ের পর সবাই মিলে মন্দারমনিতে গিয়েছিলাম। সেটা একটা পিকনিকের মতো হয়েছিল। গোটা ইউনিট সবাই একসাথে মজাটজা হয়েছিল।
অপি করিমের কোনো কাজ কি দেখেছেন?
মায়ার জঞ্জালের শুটিংয়ের পরে দেখেছি। ইউটিউবে যেহেতু এখন সবার কাজ অ্যাভেলেবল। দেখেছি।
এর আগেও তো আপনি বাংলাদেশে এসেছিলেন?
প্রথম এসেছিলাম থিয়েটার করতে ১৯৯৭-৯৮ সালের দিকে। তখন সিনেমায় অভিনয় করতাম না। সেই সময় আমি যে দলে থিয়েটার করতাম, তাদের সাথে এসেছিলাম। তারপর ‘মায়ার জঞ্জাল’-এর শুটিং করতে এসেছিলাম, দিন পাঁচ-ছয়েকের মতো ছিলাম।
বাংলাদেশের সিনেমায় অভিনয়ের প্রস্তাব নিশ্চয়ই পেয়েছেন?
বাংলাদেশ থেকে প্রস্তাব পেয়েছি। কিন্তু এখনো নানা কারণে হয়ে ওঠেনি। তবে অবশ্যই কাজ করতে চাই। আজকাল ওটিটির দৌলতে আমরা সব রকম কাজ দেখতে পাচ্ছি। আমি সেই ছোটবেলায় ‘বহুব্রীহি’সহ বাংলাদেশের অনেক নাটক দেখেছি। মাঝখানে একটা বড় গ্যাপ ছিল। এখন আবার রেগুলার কাজ দেখতে পাচ্ছি। আশা করা যায়, শিগগিরই করে ফেলব হয়তো। তবে ফাইনাল হয়নি কিছু।
‘মায়ার জঞ্জাল’ যৌথ প্রযোজনার সিনেমা। যৌথ প্রযোজনার বিষয়টিকে আপনি কীভাবে দেখেন? এটা নিয়ে নানা সময়ে নানা রকম নীতিগত পরিবর্তন হয়েছে, নিষেধাজ্ঞা এসেছে…
নিষেধাজ্ঞা ইত্যাদি হলো রাষ্ট্রের ব্যাপার। তার মধ্যে না ঢুকে আমি বলতে পারি, যৌথ প্রযোজনার অবশ্যই প্রয়োজন আছে। আমরা ভাষাগতভাবে এক তো বটেই, কালচারালিও এক। এ দুই অঞ্চলে প্রচুর গুণী মানুষ ছিলেন ও আছেন, শুধু সিনেমার নয়, পুরো সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রেই। এটার একটা আদান প্রদানের প্রয়োজন আছে। এবং তাতে আমাদের লাভ বৈ ক্ষতি নেই। দর্শকের ক্ষেত্রে বুঝতে পারি, যেমন আমার কথা বলি, আমার কাজ এখানকার মানুষ দেখেন, পছন্দ করেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কারণে আমরা তো বুঝতে পারি, অনেকের সঙ্গে কথাও হয়, সেখান থেকে বুঝতে পারি যে, মানুষ পছন্দ করেন। আমাদের ওখানেও বাংলাদেশের অনেকের কাজ প্রচুর মানুষ দেখছেন। ওটিটির কারণেই বেশি দেখছেন। এটা বাড়লে তো বাংলা ছবিরও ভালো, সব কিছুরই ভালো বলেই মনে হয়।
বলিউডের ছবি নিয়ে কলকাতার ইন্ডাস্ট্রিকে অনেক ভুগতে হয়। বাংলাদেশেও বলিউডের সিনেমা মুক্তির প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। তো আপনার অভিজ্ঞতা থেকে বলুন, বাংলাদেশে বলিউডের সিনেমা এলে কী ধরনের প্রভাব পড়তে পারে?
এটা ঠিক যে, বলিউড একটা বিরাট শক্তিধর ব্যাপার। খুবই জোর তার। সম্প্রতি আমাদের বাংলা ছবিকে হল থেকে চলে যেতে হয়েছে ‘পাঠান’-এর কারণে। কারণ ওদের প্রাথমিক শর্তই ছিল যে, সিঙ্গেল স্ক্রিনের সব শো পাঠানের চাই। স্বাভাবিকভাবেই এক্সিবিউটররা চাইবে পাঠান চালাতে। সেটাও কোনো একভাবে ইন্ডাস্ট্রির জন্য ভালো, কারণ এক্সিবিটররা ইন্ডাস্ট্রির বাইরের কেউ নন। তারা লাভবান হলেও এক ধরনের লাভ হয়। সব ছবি প্রচুর পয়সা দিতে পারে না। পাঠান দেখেই বোঝা যাচ্ছে, ইনিশিয়ালি একটা বিরাট পয়সা দিয়ে দেবে। সেটাকেও উপেক্ষা করা যায় না। পাশাপাশি এটাও ঠিক, আমরা যারা ছোট ইন্ডাস্ট্রি, তাদের নিজেদের সংরক্ষণের কথা নিজেদেরকেই ভাবতে হবে। কারণ জায়গা পুরোপুরি ছেড়ে দিলে দখলও হয়ে যেতে পারে। অতএব নিজেদের জায়গাটা রেখেই যা করার করতে হবে।
গত কয়েক বছর ধরে পশ্চিমবঙ্গে মসলাদার বাণিজ্যিক ঘরানার সিনেমা অনেকটাই কোণঠাসা। তার বদলে দর্শক বরং কিছুটা ভিন্ন ধারার কাজ বেশি দেখছেন। এ বিষয়টি নিয়ে আপনার পর্যবেক্ষণ কী?
হয়তো এখন ওইভাবে কমার্শিয়াল ছবি চলছে না। কিন্তু ইন্ডাস্ট্রির একজন ইনসাইডার হিসেবে আমি মনে করি, কমার্শিয়াল ছবি বাঁচিয়েও রাখে ইন্ডাস্ট্রিকে। আমি নাচগানের ছবি করি না মানে এই নয় যে, আমি সেটা চাই না। বরং আমি চাই, নাচগানের ছবি হোক এবং সেটা মানুষ হুড়মুড় করে দেখুক। কারণ ওটা বেশি সংখ্যক মানুষকে ইনভলভ করে, ইন্ডাস্ট্রির লাভই হয়। তবে মানুষের তো স্বাদ বদলাচ্ছে। দেখাটা তো ভীষণ বেড়ে গেছে। আমরা এত কিছু দেখছি, আমাদের ভিজ্যুয়াল এক্সপেরিয়েন্সটা বদলে গেছে। আমরা অডিও ভিজ্যুয়াল এভাবে দেখতাম না, এখন যেভাবে দেখি। ফলে দেখার ব্যাপারে মানুষ বেছে নিচ্ছেন বেশি। আগে যেমন কিছু পেলেই দেখতেন, এখন সেটা একটু কমে গেছে।
এ বিষয়ে একটা সম্পূরক প্রশ্ন আছে, এই যে আমরা সারাক্ষণ অনেক কিছু দেখছি। ফেসবুক ইন্সটার রিলস থেকে শুরু করে সিরিজ-সিনেমা। এই এত কিছুর ভিড়ে ভালো কনটেন্টের প্রতি মুগ্ধতা কীভাবে বজায় থাকবে?
বজায় খুব একটা থাকছে না। একটু তো অসুবিধে করছেই। কেননা, সত্যিই এটা মানবজাতিরই এক্সপেরিয়েন্সে ছিল না। ফলে এতটা দেখার একটা প্রভাব আছেই। ছোটদের মধ্যে তো ভয়ংকর প্রভাব। যারা বড় হচ্ছে এই সময়টায়, তারা এত বেশি অডিও ভিজ্যুয়াল দেখতে দেখতে বড় হচ্ছে যে, সেটা স্বাভাবিকও নয় খুব একটা। কিন্তু আমার মনে হয় ব্যক্তির কিছু দায়িত্ব আছে। এত ইমেজের ভিড়, তাহলে আমি কি এই ইমেজের ভেতরে সাঁতার কাটব, নাকি বেছে বেছে দেখব?
সেটা বোধহয় ব্যক্তির দায়িত্ব। এখন কেউ যদি আনন্দ পায় অত কিছু দেখতে, সে দেখতেই পারে, কিন্তু আমার মনে হয় এই সমস্যাটার মধ্যে সে পড়বে। নব্বইয়ের দশকে দেখা ছবি ফ্রেম টু ফ্রেম মনে আছে, অথচ এক বছর আগে যে ছবিটা দেখেছি, তার অত মনে নেই। তারপর এত কিছু দেখে নিয়েছি! একটা মিডিয়াম এসেছে, এবং এমনই একটা মিডিয়াম যেটাকে পুরোটা আমরা বুঝেও উঠতে পারিনি। তার শক্তিটা যে কত বড়, তা বুঝে ওঠা যায়নি এখনো। তো আমার মনে হয় ব্যক্তির দায়িত্ব আছে, সে কীভাবে এই পরিস্থিতির সঙ্গে রিয়্যাক্ট করবে।
মঞ্চে বোধহয় অনেকদিন কাজ করেননি…
বহুদিন করিনি।
মঞ্চকে কি পুরোপুরি বিদায়?
আমি হার্ডকোর মঞ্চের মানুষ নইও। মঞ্চ করেছি, কিন্তু খুব সিরিয়াস থিয়েটার সারাজীবন ধরে করে গেছি ও রকম নই। মঞ্চ করতে চাই। এখন কাজের যে রকম ব্যস্ততা, তাতে খুব একটা সম্ভাবনা এই মুহূর্তে নেই।
বেশ আগে আপনার একটা শর্টফিল্ম দেখেছিলাম ‘বিশ্বাস নাও করতে পারেন’ এ নামে। শ্যামল নামের এক যুবক…
সে সেলিম হয়ে যায় সকালে উঠে।
হ্যাঁ, সবাই মিলে তাকে সেলিম বানিয়ে দেয়। এবং সে একটা আত্মপরিচয়ের সংকটে পড়ে। এই ধরনের কাজ, সেগুলো অনেকটা অগোছালো, আয়োজনে ছোট, কিন্তু অনবদ্য নির্মাণ। এমন কাজের প্রস্তাব কি এখন আপনার কাছে আসে?
আমি এ ধরনের কাজ এত করেছি, বহু পরিচালক এখনো ওই ধরনের কাজ করলে আমাকে জানায়। এ রকম একটা কাজ করতে চাইছি, আপনার সময় আছে কিনা! আমিও মানসিকভাবে এই পুরো ব্যাপারটার সঙ্গে থাকতে চাই। থাকতে ভালোবাসি। এবং আমি এটার মধ্য থেকেই হয়ে উঠেছি। এ ধরনের কাজ করতে করতেই মানুষ আমাকে চিনেছে। ফলে অবশ্যই এটা আমার মধ্যে থাকে এবং আমি করতেও চাই। কিন্তু এখন কাজও বেড়েছে, দায়দায়িত্বও বেড়ে গেছে। ফলে সব সময় করে উঠতে পারি না। কিন্তু এই পুরো আইডিয়াটার সঙ্গেই আছি। চাই যে, এ রকম কাজ হোক।
বাংলাদেশে কি আপনার কোনো পূর্বপুরুষ আছে?
তিন জেনারেশন আগেই দাদুদা চাকরির কারণে চলে গিয়েছিলেন কলকাতায়। দেশভাগের আগেই। ফলে আত্মীয়-স্বজন সেভাবে এখানে এখন নেই। কিন্তু আত্মীয়ের আত্মীয়, পরিচিতর আত্মীয়—এমন অনেকেই আছেন বাংলাদেশে।
টালিউডে আপনার সহকর্মীরা অনেকেই সক্রিয়ভাবে রাজনীতি করেন। আপনি কি কখনো রাজনীতিতে…
(তীব্র কাঁধ ঝাঁকিয়ে) না না না।
আপনার রাজনৈতিক দর্শনটা কী?
সাধারণ মানুষের ভালো হওয়া। গরীবের ক্ষতি না হওয়া—খুব সামান্য চাওয়া আমার।
এমন কোনো চরিত্র আছে, যেটা করতে চান অথচ এখনো করা হয়ে ওঠেনি?
সত্যি কথা বলতে কী, এই যে করতে চাওয়াটা, এটা আমার আগে ছিল। যখন অভিনয় করতাম না। অভিনয় যখন করতে শুরু করেছি, চরিত্র সংক্রান্ত কোনো এক্সপেকটেশন আমি নিজের মধ্যে রাখিনি। রাখিনি বলব না, ওটা আমার নেই। যে চরিত্রটা আসবে, সেটা করব। এই চরিত্রটা করলে ভালো, ওই চরিত্রটা করলে ভালো; এমন করতে গেলে প্রডিউস করতে হয়। অভিনেতা হয়ে থাকলে হয় না।