টাইটানিক চলচ্চিত্র ইতিহাসের অন্যতম সেরা ব্যবসাসফল সিনেমা। ১৯১২ সালে আটলান্টিক মহাসাগরে ডুবে যাওয়া জাহাজ টাইটানিক নিয়ে এক দারুন প্রেমের গল্পের সিনেমা ছিলো এটি। তবে শুরুতে এই মুভির নাম টাইটানিক ছিলো না। এর নাম ছিলো, প্লানেট আইস। পরে নাম পরিবর্তন করা হয়। ইতিহাসে অন্যতম সেরা এই চলচিত্রের কিছু অজানা গল্পই আমরা আজকে শুনবো।
টাইটানিক চলচিত্রের পরিচালকের নাম আমরা সবাই জানি। তিনি জেমস ক্যামেরন। সাবেক ট্রাক ড্রাইভার কিন্তু কেবল পরিচালকই নন, একই সাথে
মুভিটির প্রডিউসার, রাইটার, এডিটর ও ডিরেক্টর ছিলেন। শুধু তাই না এই সিনেমায় তার আরও একটি ভূমিকা ছিলো। সিনেমার প্রধান চরিত্র জ্যাক ডওসন একজন চিত্রশিল্পী ছিলেন। মুভিতে জ্যাকের আঁকা সব ছবি গুলি, আসলে ডিরেক্টর জেমস ক্যামেরুন একেছিলেন। এমন কি জ্যাক যখন রোজের এর ছবি আঁকছিল; তখন জ্যাকের হাতের দৃশ্যগুলোতে যে হাত গুলো দেখানো হয়, সেই গুলো ছিল জেমস ক্যামেরুন এর হাত। ছবিতে জ্যাক চরিত্রে অভিনয় করেন লিওনার্দো ডি ক্যাপ্রিও। সে সময় রোমিও এন্ড জুলিয়েট সিনেমায় অভিনয় করে কেবল স্টারডমে পা রেখেছেন তিনি। তাই হয়তো শুরুতে তাকে জ্যাক চরিত্রের জন্য বিবেচনা করা হয়নি। প্রথমে টম ক্রুজ, পরে ব্রাড পিটকে এই চরিত্রের বিবেচনা করা হলেও ভাগ্যে শিকে ছিড়ে শেষ পর্যন্ত লিওনার্দোর। একই ঘটনা ঘটে রোজ চরিত্রে অভিনয় করা কেট উইন্সলেটের ক্ষেত্রেও। এই ব্রিটিশ অভিনেত্রী হলিউডে তেমন বিখ্যাত ছিলেন না। তাই শুরুতে তিনিও নিশ্চিত ছিলেন না। প্রথমে বিখ্যাত গায়িকা ম্যাডোনাকে এই চরিত্রের জন্য ভাবা হয়েছিলো। পরে কেট উইন্সলেট এই চরিত্রের জন্য নির্বচিত হন। কেট মুভিতে তার জানপ্রান ঢেলে দেন। আটলান্টিকের ঠান্ডা পানিতে অভিনয়ের সময় বাস্তবসম্মত অভিনয়ের জন্য সময় কেইট উইন্সলেট ওয়েটস্যুট পড়েননি। যার ফলে তিনি অনেক দিন ধরে নিউমোনিয়ায় ভোগেন। সিনেমাটিতে ২ টি অংশ রয়েছে। এক অংশে রোজ এর বৃদ্ধ অবস্থা, যখন রোজ তার অতীতের কাহিনীটি বর্ণণা করে। মুভি থেকে রোজের বৃদ্ধ বয়সের ওই অংশটুকু কেটে শুধু অতীতের সময় রাখা হলে তা ২ ঘন্টা ৪০ মিনিট হয়। আশ্চর্যজনকভাবে টাইটানিক জাহাজটি ডুবতেও সময় লেগেছিলো ২ ঘন্টা ৪০ মিনিট।
টাইটানিক চলচিত্র নিয়ে কথা হবে আর এর বিখ্যাত গান মাই হার্ট উইল গো অন নিয়ে কথা হবে না তা তো হয় না। মজার ব্যাপার হচ্ছে, পরিচালক ক্যামেরন কিন্তু সিনেমায় গান রাখার পক্ষপাতি ছিলেন না। তবে ছবির মিউজিক কম্পোজার জেমস হর্নার সঙ্গিতশিল্পী সেলিন ডিওনকে একটি গান তৈরি করার জন্য বলেন। পরে সেলিন ডিওন একটি ডেমো গান তৈরী করেন এবং তা জেমস ক্যামেরুনকে শুনান। আর তিনি গানটি শুনার পর ছবির শেষে গানটি রাখার সিদ্ধান্ত নেন। এই সিনেমার ব্যাপারে আরেকটি মজার তথ্য হচ্ছে, টাইটানিক জাহাজ টি তৈরি করতে যত খরচ হয়েছিল, তার থেকেও বেশি খরচ লেগেছিল টাইটানিক মুভিটি বানাতে।
টাইটানিক মুভিটি করতে খরচ লাগে প্রায় ২০০ মিলিয়ন ডলার। আর ছবিটি থেকে আয় হয় ২.১৮৭ বিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ নির্মাণ ব্যয়ের প্রায় দশগুণ লাভ করেছিলো ছবিটি।
টাইটানিক এমন একটি চলচ্চিত্র যা সাধারণ মানুষ থেকে সমালোচক সবার মন জয় করেছিলো। তাই ১৯৯৭ সালে মুক্তি পেলেও আজও তা মানুষের মনে স্মরণীয়। প্রতিদিন এমন মজার গল্প জানতে সাবস্ক্রাইব করুন বাংলা ডায়েরি।