দক্ষিণে কী আছে, যা বলিউডের নেই
বিনোদন

দক্ষিণে কী আছে, যা বলিউডের নেই

কয়েক বছর আগেও দক্ষিণী সিনেমাকে আঞ্চলিক সিনেমা হিসেবেই দেখতেন দর্শক। এমনকি বলিউডের সিনেমা রিমেক করত বিভিন্ন ‘ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র’ সিনেমা ইন্ডাস্ট্রি। তবে এখন চিত্র ঠিক তার উল্টো। বলিউড তাকিয়ে থাকে তামিল, তেলুগু ও মালয়ালম সিনেমা ইন্ডাস্ট্রির দিকে। সেখানকার সুপারহিট সিনেমাগুলো হরহামেশা রিমেক করতে দেখা যায় বলিউডের নামী পরিচালকদের।

দক্ষিণী সিনেমার এই আকাশচুম্বী জনপ্রিয়তা কিন্তু খুব বেশি দিনের নয়। বছর সাতেক আগে প্রথম সর্বভারতীয় বক্স অফিসে সাড়া ফেলে দক্ষিণের সিনেমা। ২০১৫ সালে নির্মাতা এসএস রাজামৌলির ‘বাহুবলী’ সবাইকে আঞ্চলিক সিনেমার দিকে নজর ফেরাতে বাধ্য করে। পরবর্তীতে রাজামৌলি ‘বাহুবলী টু’ নির্মাণ করেন; যা অধিকতর প্রশংসা এবং বাণিজ্যিক সাফল্য অর্জন করে। এরই ধারাবাহিকতায় ‘পুষ্পা’, ‘আরআরআর’ ও ‘কেজিএফ: চ্যাপটার টু’ ঝড় দেখল সমগ্র ভারতের বক্স অফিস। 

বর্তমানে বলিউড তাকিয়ে থাকে তামিল, তেলুগু ও মালয়ালম সিনেমা ইন্ডাস্ট্রির দিকে। ছবি: টুইটার বাজেট আর স্বকীয় নির্মাণ ধরনের বদৌলতে দক্ষিণী সিনেমার এই তুমুল জনপ্রিয়তা এখন সারা ভারতে। শুধু ভারতেই নয়, বিশ্বের অনেক দেশে এখন দক্ষিণী ছবির জয়রথ। দক্ষিণী সিনেমা ইন্ডাস্ট্রির এমন অর্জন নিয়ে অনেকেরই মনে প্রশ্ন—দক্ষিণে কী আছে, যা বলিউডের নেই! 

কী নেই দক্ষিণী সিনেমায়?  পুলিশের অর্জন কিংবা দুর্নীতি, কৃষকদের দুরবস্থা, চিকিৎসা ব্যবস্থার অসংগতি, সরকারের নির্বাচন ব্যবস্থার অসংগতি,  নারীর ক্ষমতায়ন, রাজনীতিকদের ক্ষমতার অপব্যবহার আরও কত কী! সহজ কথায় দর্শকের কথা মাথায় রেখেই সিনেমা বানাচ্ছে দক্ষিণী ইন্ডাস্ট্রি। 

অনেক চলচ্চিত্রবোদ্ধার মতে, হিরোইজম বা নায়ককেন্দ্রিক সিনেমা এই সাফল্যের মূল। তবে কি দক্ষিণী ইন্ডাস্ট্রি কেবল বাণিজ্যিক সিনেমার ওপর ভর করে এগোচ্ছে? এর উত্তর অবশ্যই ‘না’। বড় উদাহরণ সুরিয়া অভিনীত ‘জয় ভীম’ সিনেমা। কোনো রকম হিরোইজম ছাড়াই ভারতজুড়ে তুমুল ব্যবসাসফল এই সিনেমা। এমনকি প্রশংসা কুড়িয়েছে ভারতের বাইরেও। তালিকায় আরও আছে ‘কালা’, ‘সরকার’, ‘পারিয়েরাম পেরুমল’-এর মতো সিনেমা। এক কথায় বলা যায়, দক্ষিণে বাণিজ্যিক, আর আর্টের ব্যালান্স রয়েছে। সব ধরনের সিনেমার গ্রহণযোগ্যতা আছে সেখানে। মূলত শক্তিশালী গল্প; অর্থাৎ, ‘কনটেন্ট ইজ কিং’ নীতিতে বিশ্বাসী সেখানকার চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্টরা। 

দক্ষিণে বাণিজ্যিক আর আর্টের ব্যালান্স রয়েছে। ছবি: টুইটার এ তো গেল তামিল আর তেলুগু সিনেমার কথা। দক্ষিণী ইন্ডাস্ট্রির আরেক নেতৃত্বে রয়েছে মালয়ালম সিনেমা। ‘প্রেমাম’, ‘দ্য গ্রেট ইন্ডিয়ান কিচেন’, ‘কুম্বালাঙ্গি নাইটস’, ‘জাল্লিকাট্টু’, ‘উস্তাদ হোটেল’ কিংবা ‘চার্লি’-এর মতো সিনেমা রীতিমতো বলিউডকে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে কীভাবে গল্প বলতে হয়। 

সবশেষ খেল দেখাল কন্নড় ইন্ডাস্ট্রির সিনেমা ‘কেজিএফ: চ্যাপটার টু’। একের পর এক রেকর্ড ভাঙে সিনেমাটি। ভারতের চলচ্চিত্র ইতিহাসে চতুর্থ সিনেমা হিসেবে ১ হাজার কোটি রুপির ক্লাবে প্রবেশ করে সুপারস্টার যশের এই সিনেমা। মাত্র দুই সপ্তাহে বিশ্বব্যাপী ১ হাজার কোটি রুপি আয় করতে সক্ষম হয় ‘কেজিএফ: চ্যাপটার টু’। 

প্রতাপশালী বলিউডকে রীতিমতো টেক্কা দিচ্ছে দক্ষিণী সিনেমা ইন্ডাস্ট্রি। বলিউডের বিগ বাজেট,  আর সুপারস্টার খান-কাপুরদের চোখ রাঙাচ্ছে তামিল, তেলুগু, কন্নড়,  মালয়ালম ইন্ডাস্ট্রি। তিন খান শাহরুখ, সালমান, আমির ও অক্ষয় কুমার, শহীদ কাপুরদের সিনেমা মুক্তি দিতে তাকাতে হচ্ছে প্রভাষ, আল্লু অর্জুন, রমচরণ, জুনিয়র এনটিআর, যশদের দিকে। এরই মধ্যে একাধিকবার সিনেমা মুক্তির তারিখ পেছানোর ঘটনাও ঘটেছে। 

মাত্র দুই সপ্তাহে বিশ্বব্যাপী ১ হাজার কোটি রুপি আয় করে ‘কেজিএফ: চ্যাপটার টু’। ছবি: টুইটার আক্ষেপ করে অনেক চলচ্চিত্রবোদ্ধা বলেন, ‘বলিউড ভুলে গেছে কীভাবে সিনেমা বানাতে হয়।’ কেউ কেউ বলছেন, গত কয়েক বছরে হাতে গোনা দু-তিনটি ভালো সিনেমা বানিয়েছে বলিউড। তাঁরা মনে করেন, বলিউডের সিনেমা সংশ্লিষ্টদের সত্যিই আত্মদর্শন প্রয়োজন। এখনই নড়েচড়ে না বসলে অদূর ভবিষ্যতে বলিউডকে খুব বেহাল অবস্থার মধ্যে পড়তে হবে বলেও মনে করেন অনেক চলচ্চিত্রবোদ্ধা। 

তথ্যসূত্র: ইন্ডিয়া টুডে, বলিউড হাঙ্গামা, পিঙ্কভিলা, ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস

Source link

Related posts

যুক্তরাষ্ট্রে শাকিবের ‘গলুই’ সিনেমার প্রিমিয়ার

News Desk

বাংলা একাডেমির নজরুল পুরস্কার পাচ্ছেন শাহীন সামাদ

News Desk

এনএসইউতে ‘রক্তকরবী’ মঞ্চস্থ

News Desk

Leave a Comment