টানা ১৮ বছর রাজধানী শাসন করে এবার স্টার সিনেপ্লেক্স পতাকা ওড়ালো বন্দরনগরীতে। বাংলাদেশের সিনেমা হলের অন্ধকার দূর করে আলো ছড়ানো এই অভিজাত মাল্টিপ্লেক্সটি প্রথমবার ঢাকার বাইরে নিজেদের শাখা চালু করলো।
চট্টগ্রাম শহরের চকবাজার এলাকায় (নবাব সিরাজ উদ্দিন রোড) বালি আর্কেড শপিং কমপ্লেক্সে অবস্থিত সুপরিসর এই মাল্টিপ্লেক্সের রয়েছে তিনটি হল। যার আসন সংখ্যা যথাক্রমে ৮৬ (হল-১), ১৯৬ (হল-২) এবং ১২৫ (হল-৩)টি। ৩ ডিসেম্বর থেকে চট্টগ্রামের দর্শকরা এই মাল্টিপ্লেক্সে সিনেমা উপভোগ করতে পারবেন।
তার আগে ২ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় হয়ে গেল জমকালো উদ্বোধন। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। বিশেষ অতিথি হিসেবে ঢাকা থেকে উড়ে এলেন তারকা দম্পতি রাজ-পরী। চকবাজারের অত্যাধুনিক এই মাল্টিপ্লেক্সে এসে মুগ্ধতা প্রকাশ করেছে এই দম্পতি।
পরী বলেন, ‘স্টার সিনেপ্লেক্সে যে আরাম পাই, সেটা অন্য কোথাও পাই না। মানুষ এখন আরাম-আয়েশে বিনোদন নিতে চায়। তো সেই ব্যাপারটা সিনেপ্লেক্সেই পাওয়া যায়। চট্টগ্রামের দর্শকরা এখন সেই আরামটি পাবেন। আরাম করে আমাদের সিনেমাগুলো দেখবেন। সেটাই স্বস্তির বিষয়।’
পরী বললেন ‘আরাম’, রাজের দাবি ‘ব্রাহ্মণবাড়িয়া’!
সঙ্গে চট্টগ্রাম যাওয়ার প্রসঙ্গও টানেন এই চনমনে নায়িকা। বলেন, ‘একদিন আগে এসে লাভ হয়নি, কোথাও ঘুরতে যেতে পারিনি। তবে প্রোগ্রাম শেষে চট্টগ্রামে একটু ঘোরাফেরার প্ল্যান আছে আমাদের।’
পরী চট্টগ্রাম ঘোরার জন্য অস্থির হয়ে থাকলেও রাজ সিরিয়াস তার এলাকা নিয়ে! অনেকটা জনপ্রতিনিধির কণ্ঠেই ‘পরাণ’খ্যাত নায়ক বলেন, ‘আমি চাই আমাদের ব্রাহ্মণবাড়িয়াসহ সারা দেশের প্রতিটি জেলায় সিনেপ্লেক্স হোক।’
যুক্ত করেন, ‘‘স্টার সিনেপ্লেক্স প্রযোজিত ‘ন ডরাই’ ছবির সময় থেকেই রুহেল (স্টার সিনেপ্লেক্সের কর্তা) ভাইয়ের সঙ্গে আমার কথা হতো সিনেপ্লেক্সের নতুন শাখা নিয়ে। তখন বার বার বলতাম সিলেট, চট্টগ্রাম এসব জায়গায় কবে চালু করবেন। আজ সেই প্রশ্নের একটির সাক্ষী হলাম সরাসরি এসে। আশা করছি দ্রুতই দেশের সবগুলো জেলা শহরে রুহেল ভাই পৌঁছে যাবেন। আমরা তার সঙ্গে আছি।’’
বরাবরের মত নান্দনিক পরিবেশ, সর্বাধুনিক প্রযুক্তি সম্বলিত সাউন্ড সিস্টেম, জায়ান্ট স্ক্রিনসহ বিশ্বমানের সিনেমা হলের যাবতীয় সুযোগ-সুবিধা নিয়ে হলগুলো নির্মিত হয়েছে বলে জানান স্টার সিনেপ্লেক্সের চেয়ারম্যান মাহবুব রহমান রুহেল। তিনি বলেন, ‘দেশব্যাপী অনেকগুলো সিনেমা হল নির্মাণের পরিকল্পনার কথা আগেই জানিয়েছিলাম আমরা। ধারাবাহিকভাবে সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের কাজ এগিয়ে চলছে। চট্টগ্রামে প্রচুর সিনেমাপ্রেমী দর্শক রয়েছেন যারা স্টার সিনেপ্লেক্সের মতো একটি মাল্টিপ্লেক্স প্রত্যাশা করেন। আমি নিজে চট্টগ্রামের মানুষ। অনেকেই আমাকে তাদের চাওয়ার কথা বলেছেন। বলা চলে, চট্টগ্রামবাসীর দীর্ঘদিনের দাবি ছিলো এটি। এই দাবি পূরণের কাজটি আরও আগেই করতে চেয়েছিলাম। নানা কারণে হয়ে ওঠেনি। এবার কাজটি করতে পেরে আমি আনন্দিত।’
পরী বললেন ‘আরাম’, রাজের দাবি ‘ব্রাহ্মণবাড়িয়া’!
দেশে যখন একের পর এক সিনেমা হল বন্ধের খবরে হতাশা তৈরি হচ্ছে তার বিপরীতে স্টার সিনেপ্লেক্সের নতুন নতুন মাল্টিপ্লেক্স নির্মাণের খবর সিনেমা সংশ্লিষ্টদের মাঝে আশার সঞ্চার করছে। এ প্রসঙ্গে মাহবুব রহমান রুহেল বলেন, ‘দেশের সিনেমা ইন্ডাস্ট্রির প্রসারে আমাদের এই উদ্যোগ অব্যাহত থাকবে। আমরা বিশ্বাস করি বাংলা সিনেমার সুদিন আবার ফিরে আসবে। পরিবার-পরিজন নিয়ে হলে গিয়ে সিনেমা দেখার সংস্কৃতি আবার চালু হবে। এর জন্য যে পরিবেশ প্রয়োজন সেটা তৈরির চেষ্টা করছি আমরা।’
উল্লেখ্য, ২০০৪ সালের ৮ অক্টোবর রাজধানীর বসুন্ধরা সিটি শপিং মলে যাত্রা করে দেশের প্রথম মাল্টিপ্লেক্স সিনেমা হল ‘স্টার সিনেপ্লেক্স’। বর্তমানে ঢাকায় ৫টি শাখা রয়েছে এর। ধানমন্ডির সীমান্ত সম্ভার (সাবেক রাইফেলস স্কয়ার), মহাখালীর এসকেএস (সেনা কল্যাণ সংস্থা) টাওয়ার, মিরপুরের সনি স্কয়ার এবং বিজয় স্মরণি সামরিক জাদুঘরে শাখাগুলো অবস্থিত। এ ছাড়া বগুড়া ও রাজশাহীতে নতুন শাখার নির্মাণ কাজ চলছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।