‘প্লেব্যাক সম্রাট’ এন্ড্রু কিশোরকে হারানোর ৩ বছর
বিনোদন

‘প্লেব্যাক সম্রাট’ এন্ড্রু কিশোরকে হারানোর ৩ বছর

দীর্ঘ ১০ মাস ক্যানসারের সঙ্গে যুদ্ধ করে ২০২০ সালের আজকের এই দিনে (৬ জুলাই) মারা যান দেশের কিংবদন্তি সংগীতশিল্পী ও প্লেব্যাক সম্রাট এন্ড্রু কিশোর। চার দশকেরও বেশি সময় ধরে সুরের জাদুতে সংগীতপ্রেমীদের মাতিয়ে রাখেন এই কিংবদন্তি। 

শারীরিক অসুস্থতার জন্য ২০১৯ সালের ৯ সেপ্টেম্বর তাঁকে নেওয়া হয় সিঙ্গাপুরে। সেখানে যাওয়ার পর ১৮ সেপ্টেম্বর এন্ড্রু কিশোরের শরীরে ক্যানসার ধরা পড়ে। চিকিৎসকেরা হাল ছেড়ে দেওয়ায় শরীরে ক্যানসার নিয়েই ৯ মাস পর গত বছরের ১১ জুন দেশে ফেরেন এন্ড্রু কিশোর। ২০ জুন তাঁকে নেওয়া হয় রাজশাহী নগরীর মহিষবাথানে বোন ডা. শিখা বিশ্বাসের বাসায়। পরে ২০২০ বছরের ৬ জুলাই না ফেরার দেশে চলে যান তিনি। ১৫ জুলাই রাজশাহী সার্কিট হাউসসংলগ্ন এলাকায় খ্রিষ্টানদের কবরস্থানে সমাহিত করা হয় এই শিল্পীকে। 

বাংলা গানের এই ‘প্লেব্যাক সম্রাট’ আধুনিক ও চলচ্চিত্রজগতের কালজয়ী অনেক গান তাঁর কণ্ঠে সমৃদ্ধ করেছেন। সুখ-দুঃখ, হাসি-আনন্দ, প্রেম-বিরহ অনুভূতি—সব ধরনের গানই তিনি গেয়েছেন। দীর্ঘদিন পুরোদস্তুর পেশাদার কণ্ঠশিল্পী হিসেবে দুই বাংলায় গান করেছেন এন্ড্রু কিশোর। 

সংগীত ক্যারিয়ারে শ্রেষ্ঠ গায়ক বিভাগে আটটি ‘জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার’ জিতেছেন প্রয়াত এই গায়ক। এ ছাড়া দুটি ‘মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কার’ ও তিনটি ‘বাচসাস’ পুরস্কার’সহ এন্ড্রু কিশোরের ঝুলিতে আছে অসংখ্য সম্মাননা। তাঁর মৃত্যু বাংলা সংগীতের জন্য এক অপূরণীয় ক্ষতি। 

এন্ড্রু কিশোর চলচ্চিত্রে প্লেব্যাক শুরু করেন ১৯৭৭ সালে আলম খান সুরারোপিত ‘মেইল ট্রেন’ চলচ্চিত্রের ‘অচিনপুরের রাজকুমারী নেই যে তার কেউ’ গানের মধ্য দিয়ে। তার রেকর্ডকৃত দ্বিতীয় গান বাদল রহমান পরিচালিত ‘এমিলের গোয়েন্দা বাহিনী’ চলচ্চিত্রের ‘ধুম ধাড়াক্কা’। তবে এ জে মিন্টু পরিচালিত ১৯৭৯ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘প্রতিজ্ঞা’ চলচ্চিত্রের ‘এক চোর যায় চলে’ গানটি গেয়ে শ্রোতাপ্রিয়তা লাভ করেন। 

‘বড় ভালো লোক ছিল’ (১৯৮২) চলচ্চিত্রে প্লেব্যাক করে প্রথম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন এন্ড্রু কিশোর। মহিউদ্দিন পরিচালিত এই চলচ্চিত্রে সৈয়দ শামসুল হকের লেখা ‘হায়রে মানুষ রঙিন ফানুস’ গানটিতে কণ্ঠ দেন তিনি। এ গানের জন্য শ্রেষ্ঠ পুরুষ কণ্ঠশিল্পী বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান তিনি। ১৯৮৪ সালে আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুলের কথা ও সুরে ‘নয়নের আলো’ চলচ্চিত্রের তিনটি গানে কণ্ঠ দেন। 

গানগুলো হলো ‘আমার সারা দেহ খেয়ো গো মাটি’, ‘আমার বাবার মুখে প্রথম যেদিন’ ও ‘আমার বুকের মধ্যেখানে’। এমন অসংখ্য চলচ্চিত্রের গানে কণ্ঠ দিয়েছেন এই শিল্পী, যা এখনো মানুষের মুখে মুখে ফেরে। 

স্বাধীনতা যুদ্ধের পর কিশোর নজরুল, রবীন্দ্রনাথ, আধুনিক, লোক ও দেশাত্মবোধকসহ প্রায় সব ধারার গানে রাজশাহী বেতারে তালিকাভুক্ত হন। 

তাঁর জনপ্রিয় গানের মধ্যে আরও রয়েছে, পৃথিবীর যত সুখ আমি তোমারি ছোঁয়াতে খুঁজে পেয়েছি, সবাইতো ভালোবাসা চায়, বেদের মেয়ে জোসনা আমায় কথা দিয়েছে, তুমি আমার জীবন আমি তোমার জীবন, ভালো আছি ভালো থেকো, তুমি মোর জীবনের ভাবনা, চোখ যে মনের কথা বলে’ ইত্যাদি। 

ব্যক্তিগত জীবনে লিপিকা এন্ড্রু ইতির সঙ্গে বিয়েবন্ধনে আবদ্ধ হন এন্ড্রু কিশোর। এই দম্পতির দুটি সন্তান রয়েছে। প্রথম সন্তানের নাম সংজ্ঞা আর দ্বিতীয়জনের নাম সপ্তক।

Source link

Related posts

আলিয়ার ব্যক্তিগত মুহূর্ত ক্যামেরাবন্দী, পাপারাজ্জিদের ওপর চটলেন অভিনেত্রী

News Desk

আজ থেকে পাঠশালায় দুই দিনব্যাপী মৃণাল উৎসব

News Desk

৮৭ বছরে পা রাখলেন সৈয়দ হাসান ইমাম

News Desk

Leave a Comment