সিনেমায় কখনো মিষ্টি হাসির নায়িকা, কখনো মা, কখনো বা বড় বোন, ভাবী, অধিকারের জন্য লড়াই করে যাওয়া বিধবা, কিংবা কোনো বাদশাহ’র মহলের নির্বাসিত বেগমের চরিত্রে দেখা মিলেছে। বৈচিত্রময় সব চরিত্রে অভিনয় করে সবার মন জয় করে নেয়া অভিনেত্রী তিনি৷
বাংলাদেশের চলচ্চিত্রজগতে প্রথম নারী পরিচালক হয়ে নারীদের এ পথে আসার বাধা ভেঙে ফেলেন। তিনি রোজী আফসারী। অনেকে রোজী সামাদ নামেও চেনেন-ডাকতে ভালোবাসেন৷ কেউ কেউ নায়িকা রোজী বলে তৃপ্তি পান৷ যে নামেই ডাকা হোক সবাই তাকে ঢাকাই সিনেমার কিংবদন্তি বলে সম্মানিত করেন। আজ এ অভিনেত্রীর জন্মদিন৷ বেঁচে থাকলে রোজী এবার ৭৫ বছরে পা রাখতেন।
তার প্রকৃত নাম শামীমা আক্তার রোজী। ১৯৪৬ সালের ২৩ এপ্রিল লক্ষ্মীপুর জেলায় জন্মগ্রহণ করেন তিনি। অভিনয়জীবন শুরু করেন ১৯৬২ সালে রোজী সামাদ নামে। পরবর্তী সময়ে দ্বিতীয় স্বামী মালেক আফসারীর নামের শেষাংশ ব্যবহার করেন নিজের নামের শেষে। সেই থেকে রোজী আফসারী হয়ে ওঠেন তিনি।
বাংলা চলচ্চিত্রের সোনালি যুগের অভিনেত্রী রোজী ১৯৬২ সালে আব্দুল জব্বার খান পরিচালিত ‘জোয়ার এলো’ ছবির মাধ্যমে অভিনয় জীবন শুরু করেন। ১৯৬৪ সালে জহির রায়হানের ‘সঙ্গম’ ছবিতে প্রথম দেখা যায় তাকে। এটিই ছিল তৎকালীন সমগ্র পাকিস্তানের প্রথম রঙিন ছবি। এখানে অভিনেতা খলিলের বিপরীতে নায়িকা হন রোজী৷
তবে তিনি জনপ্রিয়তা পান নারায়ণ ঘোষ মিতা পরিচালিত ১৯৭৪ সালে মুক্তি পাওয়া মুক্তিযুদ্ধের সিনেমা ‘আলোর মিছিল’- এ অভিনয় করে।
রোজী আফসারী অভিনয়জীবনে ৪ দশক ধরে ৩৫০টি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন। এর মধ্যে পাকিস্তানের ‘জাগো হুয়া সাবেরা’, ‘পুনম কি রাত’সহ ২৫টি উর্দু ছবিতে অভিনয় করেছেন। তার সেরা চলচ্চিত্রগুলোর মধ্যে রয়েছে ‘সূর্য গ্রহণ’, ‘সূর্য সংগ্রাম’, ‘জীবন থেকে নেয়া’। ভারতের প্রখ্যাত পরিচালক ঋত্বিক ঘটকের ‘তিতাস একটি নদীর নাম’ সিনেমাতেও অভিনয় করেছেন রোজী।
এছাড়া অন্যান্য জনপ্রিয় চলচ্চিত্রের মধ্যে রয়েছে ‘ওরা ১১ জন’, ‘লাঠিয়াল’, ‘এতটুকু আশা’, ‘নীল আকাশের নীচে’, ‘অশিক্ষিত’, ‘প্রতিকার’ ইত্যাদি। তার সর্বশেষ অভিনীত ছবি ‘পরম প্রিয়’ ২০০৫ সালে মুক্তি পায়।
১৯৭৫ সালে ‘লাঠিয়াল’ ছবিতে অভিনয়ের জন্য সেরা পার্শ্ব অভিনেত্রী হিসেবে জাতীয় পুরস্কার লাভ করেন রোজী আফসারী। রোজী ফিল্মস নামে প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান থেকে অনেক সিনেমাও নির্মাণ করেছেন তিনি। ২০০৭ সালের ৯ মার্চ কিডনিজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে মাত্র ৫৭ বছর বয়সে পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করেন রোজী আফসারী। তিনি ছিলেন এক মেয়ে ও এক ছেলের জননী