Image default
বিনোদন

বৈধ পণ্যের আড়ালে আসছে বিদেশি মদ

আমদানির কোনও কাগজ নেই, পর্যটন করপোরেশন থেকে কিনেছে এমন কোনও নথিও নেই। অন্য কোনও সোর্স থেকে সংগ্রহ করার তথ্যও দিতে পারেনি রাজধানীর উত্তরার ‘লেক ভিউ রেস্টুরেন্ট ও বার’। সর্বশেষ ১৪ মাস আগে একবার তারা বিদেশি মদ কিনেছিল। এরপর আর কেনেনি। প্রশ্ন হলো— তাহলে এতদিন বিদেশি মদ কোথায় পেলো তারা।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের পরিসংখ্যান বলছে, করোনা পরবর্তী সময়ে মদের আমদানি কমেছে। তাহলে এত বিদেশি মদ কোথা থেকে এলো, কিভাবে এলো? গোয়েন্দা সংস্থাগুলো দাবি করেছে, কোনও কোনও চক্র বৈধ পণ্যের ঘোষণা দিয়ে অবৈধ মদ আমদানি করে। এছাড়াও লাগেজ পার্টি ও সীমান্ত পার হয়ে বিদেশি মদ আসছে। এতে কোটি কোটি টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার। মূলত বিদেশি মদ আমদানিতে সর্বোচ্চ ৬০০ শতাংশ ভ্যাট হওয়ায় অবৈধভাবে বেশি মদ আনা হচ্ছে বলেও মনে করা হচ্ছে।

 

গত ৭ অক্টোবর রাত ৯টা থেকে ভোর পর্যন্ত রাজধানীর উত্তরার ১৩ নম্বর সেক্টরের গরিবে নেওয়াজ অ্যাভিনিউয়ের ‘লেক ভিউ রেস্টুরেন্ট ও বার’-এ অভিযান চালায় ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। অবশ্য অভিযানের সময় পুলিশ ওই বারের নাম বলেছে ‘কিংফিশার।’ যদিও কাগজপত্রে দেখা গেছে, সেটি একটি রেস্টুরেন্ট ও বার। যার নাম ‘লেকভিউ রেস্টুরেন্ট ও বার’। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর থেকে ২০১৮ সালে প্রতিষ্ঠানটি বার পরিচালনার লাইসেন্স পায়। ভবনের পঞ্চম ও ষষ্ঠ তলার অনুমোদন নেওয়া আছে। মালিকের নাম মুক্তার হোসেন। একই মালিকের ঢাকা গুলশান ও মিরপুরে আরও তিনটি বার রয়েছে।

অভিযানের পর ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. নাসির উদ্দিন বাদী হয়ে উত্তরা পশ্চিম থানায় মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে একটি মামলা করেন। মামলায় বারের মালিক মুক্তার হোসেন ও জেনারেল ম্যানেজার আনোয়ার হোসেনসহ ৩৬ জনকে আসামি করা হয়। যারা ওই বারের স্টাফ।

অভিযানে ওই বার থেকে ৪৫৩ বোতল বিদেশি মদ ও ছয় হাজার পাঁচ ক্যান বিয়ার জব্দ করে ডিবি। এসব মদের কোনও কাগজপত্র দেখাতে পারেনি বার কর্তৃপক্ষ। বারের দেখভালের দায়িত্বে থাকে মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর। তারা প্রতিমাসে বার পরিদর্শন করে প্রতিবেদন দেওয়ার কথা।

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) অতিরিক্ত কমিশনার হারুন অর রশীদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, লেক ভিউ রেস্টুরেন্ট ও বার হলো ভবনটির পঞ্চম ও ষষ্ঠ তলায়। কিন্তু আমরা মদ উদ্ধার করেছি সপ্তম তলা থেকে। বেশিরভাগ মদ সেখান থেকেই উদ্ধার করা হয়। আমরা রাত ৯টা থেকে ৩টা পর্যন্ত সেখানে অপেক্ষা করি। কিন্তু বার কর্তৃপক্ষ মদ আমদানি বা কেনার বৈধ কাগজপত্র দেখাতে পারেনি। তারা কোথা থেকে এসব মদ পেলো? অবৈধভাবে মজুত করা এসব মদ সংগ্রহ করে তারা কোটি কোটি টাকার রাজস্ব ফাঁকি দিয়েছে।

বিদেশি মদ কিভাবে আসে?

বিদেশি যেকোনও মদ আমদানি করতে হলে মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর থেকে অনুমতি নিতে হয়। ব্র্যান্ড রেজিস্ট্রেশন করতে হয়। এরপর মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর অনুমতি দিলে মদ আমদানি করতে পারে। আরেকটি হলো – বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশন থেকে অনুমোদিত বারগুলো মদ কিনে বিক্রি করে। সে ক্ষেত্রেও তাদের কাছে কেনার ডকুমেন্টস থাকতে হবে।

বাংলাদেশে বিয়ার ও মদ আমদানিতে ৪৫০ শতাংশ কর দিতে হয়। হুইস্কি বা ভদকার মতো পানীয় আমদানিতে শুল্কের হার ৬০০ শতাংশের বেশি।

লাইসেন্স ছাড়া মদ কেনা, বহন বা সংরক্ষণ শাস্তিযোগ্য অপরাধ। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) পরিসংখ্যান বলছে, অ্যালকোহল-জাতীয় পণ্যের আমদানি দিন দিন কমছে। তবে মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর বলছে মদের চাহিদা বেড়েছে। সেই চাহিদা বিভিন্ন অবৈধ উপায়ে মেটানো হচ্ছে।

ডিবি পুলিশ জানিয়েছে, লাগেজ পার্টি ও সীমান্ত চোরাচালানের মাধ্যমে বিদেশি মদ আসে। তারা এসব মদ অবৈধভাবে দেশে প্রবেশ করায়। পরে বারগুলো তা বিক্রি করে।

ডিবি কর্মকর্তা হারুন অর রশীদ বলেন, লেক ভিউ রেস্টুরেন্ট ও বার ১৪ মাস আগে বিদেশে মদ কেনার নথি দেখিয়েছে। এই ১৪ মাস কিভাবে, কোথা থেকে মদ সংগ্রহ করলো— এই জবাব তারা দেয়নি। আমরা এর জবাব খুঁজছি। পর্যটন করপোরেশনে খোঁজ নিয়েছি, সেখান থেকেও তারা কিনেনি। তাহলে পেলো কোথায়?

অন্য পণ্যের আড়ালেও আসে বিদেশি মদ

অন্য পণ্যের আড়ালেও দেশে বিদেশি মদ আমদানি হয়। এই চক্রটি কখনও যন্ত্রাংশ, কখনও গার্মেন্টস পণ্য আবার কখনও খেলনা আমদানি করার নামে মদ আমদানি করে।

গত ২৩ জুলাই গার্মেন্টস পণ্যের আড়ালে অভিনব কায়দায় শুল্ক ফাঁকি দিয়ে প্রায় ৩৭ কোটি টাকা মূল্যের বিদেশি বিভিন্ন ব্র্যান্ডের মদ জব্দ করে র‌্যাব-১১। সিন্ডিকেটের অন্যতম হোতা আবদুল আহাদ।

ওই দিন র‌্যাব-১১ এর নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ থানার টিপর্দি সালাউদ্দিনের পার্কিং স্ট্যান্ডের সামনে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকাগামী মহাসড়কের ওপর চেকপোস্ট বসিয়ে সন্দেহজনক বিভিন্ন মালবাহী ট্রাক এবং কন্টেইনারসহ টেইলার তল্লাশি শুরু করে।  তল্লাশির এক পর্যায়ে সন্দেহজনক দুটি কন্টেইনার টেইলার থেকে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের ৩৬ হাজার ৮১৬ বোতল বিদেশি মদ উদ্ধার করা হয়। যার বাজার মূল্য ৩১ কোটি ৫৮ লাখ ৮০ হাজার টাকা। ভ্যাটসহ মূল্য দাঁড়ায় ৩৬ কোটি ৮৮ লাখ ৮০ হাজার টাকা।

এই অবৈধ চালান আমদানিতে জড়িত একজনের ঢাকার ওয়ারীর বাসায় অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমাণ নগদ দেশি-বিদেশি মুদ্রা জব্দ করা হয়। এসময় মো. নাজমুল মোল্লা, মো. সাইফুল ইসলাম ওরফে সাইফুলকে গ্রেফতার করা হয়। পরে তাদের দেওয়া তথ্যে বিমান বন্দর এলাকা থেকে এই চক্রের অন্যতম হোতা আব্দুল আহাদকে গ্রেফতার করা হয়।

আহাদ ও তার ভাই মিজানুর রহমান আশিক এক বছর ধরে এ অবৈধ কারবারে  জড়িত। তারা সি অ‌্যান্ড এফ’র যোগসাজশের মাধ্যমে অবৈধ মদ আমদানি কার্যক্রম করে থাকে। চক্রটি দেশে টিভি ও গাড়ির পার্টস ব্যবসার আড়ালে অবৈধ মদ বিপণন নেটওয়ার্ক তৈরি করেছে। অবৈধ মাদক বিদেশ থেকে আনার পরে মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগর, রাজধানীর বংশাল ও ওয়ারীতে ওয়্যার হাউসে রাখা হয়। পরবর্তীতে সুবিধাজনক সময় অবৈধ এসব মদ বারে সরবরাহ করা হতো।

বারগুলোকে রাখা হয়েছে নজরদারিতে

বারগুলোতে দেদারসে বিদেশি মদ বিক্রি হলেও সেই অনুযায়ী আমদানি ও সরকারি রাজস্ব আদায় হচ্ছে না। তাই গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর নজরদারি বেড়েছে বারগুলোতে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে ইতোমধ্যে মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরকে পুলিশ এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ জানিয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, বারগুলোতে কী পরিমাণ মদ থাকবে, কারা কিনবে, কিভাবে কিনবে, কী মদ বিক্রি করবে, এসবের একটা নিয়ম রয়েছে। সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হবে।

দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে

লেক ভিউ রেস্টুরেন্ট ও বারে অভিযানের পর মালিক মুক্তার হোসেন পলাতক। তিনি আমেরিকার নাগরিক। ফলে যেকোনও সময় আমেরিকা পালিয়ে যেতে পারেন বলে সন্দেহ করছেন কেউ কেউ। তবে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ জানিয়েছে, তাকে নজরদারিতে রাখা রয়েছে।

অতিরিক্ত কমিশনার হারুন অর রশীদ বলেন, আমরা আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবো। অবৈধ মদ ব্যবসায় জড়িত সবার বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Related posts

জয়-জারা জুটির ‘শেষ কথা’

News Desk

যশের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কের কথা স্বীকার করলেন নুসরাত!

News Desk

আলিয়া-রণবীরের ব্যাচেলর পার্টিতে থাকছেন যে তারকারা

News Desk

Leave a Comment