ময়মনসিংহের গৌরীপুরের স্টেশন রোডের এক সময়ের জনপ্রিয় সিনেমা হল ‘প্রিয়া’। কালের পরিক্রমায় সেই জৌলুস হারিয়ে গেছে। বন্ধ হতে চলেছে সিনেমা হলটি। একসময় এই হলের প্রবেশমুখে যেখানে ঝুলতো রঙ-বেরঙয়ের পোস্টার সিনেমার-ব্যানার। এখন সেখানে ঝুলছে ‘ব্যাংক/গোডাউনের জন্য ভাড়া দেওয়া হবে’ শিরোনামের বিজ্ঞাপন।
সিনেমা হলটির মালিক নবী হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘লসের ব্যবসা আর কত দিন। লস দিতে দিতে আমি নিঃস্ব হয়ে গেছি। বিদ্যুৎ বিলের টাকাই ওঠে না, স্টাফ বেতন অন্যান্য খরচ আর কত দিন পকেট থেকে দেব। অনেক দিনতো অপেক্ষা করলাম ভালো দিন আসবে, কিন্তু এবার আর টিকতে পারছি না। তাই ভাড়া দিয়ে দেব, মাস শেষে টাকা আসবে।
তিনি জানান, এক সময় ভালো ব্যবসা করেছিল তাঁর সিনেমা হলে। ফেরদৌস-মৌসুমী জুটির অন্যতম জনপ্রিয় চলচ্চিত্র ‘খাইরুন সুন্দরী’ দেখিয়ে ব্যাপক ব্যবসা করেছেন তিনি।
শরিফুল রাজ, বিদ্যা সিনহা মিম ও ইয়াশ রোহান ত্রয়ীর ত্রিভুজ প্রেমের গল্প নিয়ে নির্মিত ‘পরাণ’ চলচ্চিত্র সর্বশেষ দেখানো হয়েছিল তাঁর হলে।
সিনেমার সোনালি অতীত স্মরণ করে আবেগাপ্লুত কণ্ঠে নবী হোসেন বলেন, ‘যখন থেকে বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেই, তখন থেকেই বুকের ভেতর একটা চাপা কষ্ট অনুভব করি। অনেক দিনের ব্যবসা তো। অনেক চেষ্টা করেছি। এবার আর উপায় নেই।’
নব্বই দশকে দেশে প্রায় সাড়ে ১২শ সিনেমা হল ছিল। সেই সংখ্যা কমে দাঁড়িয়েছে দেড়শতে। এর মধ্যে প্রায় ৭০টি সিনেমা হল পুরোদমে সচল। একের পর এক সিনেমা হল বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। সেই তালিকায় যুক্ত হতে যাচ্ছে ময়মনসিংহের গৌরীপুরের ‘প্রিয়া’ সিনেমা হল।
এ বিষয়ে ঢালিউডের জনপ্রিয় অভিনেতা ফেরদৌস আহমেদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আসলে সিঙ্গেল স্ক্রিন একের পর এক বন্ধ হওয়া আমাদের কষ্ট দেয়। কিন্তু বাস্তবতাও মানতে হবে। সিঙ্গেল স্ক্রিনের জায়গায় যদি তারা একটি শপিংমল করে সেখানে ছোট পরিসরে সিনেপ্লেক্স করে, তাহলে তারাও যেমন ব্যবসায়িকভাবে টিকে যাবে আবার দর্শকও বিনোদনের ভালো একটা পরিবেশ পাবে। যুগের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে মানুষের রুচির পরিবর্তন হচ্ছে।’
বাংলাদেশ চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির সভাপতি সোহানোর রহমান সোহান বলেন ‘বিশ্বায়নের যুগে মানুষের রুচির পরিবর্তন হয়েছে। এখন ভালো পরিবেশ, সাউন্ড, মানসম্পন্ন প্রজেকশন ব্যবস্থার দিকে না হাঁটলে সিঙ্গেল স্ক্রিন আসতে আসতে সব বন্ধ হবে। মানুষের রুচির পরিবর্তন হয়েছে, এর সঙ্গে সঙ্গে সিঙ্গেল স্ক্রিনের মানগত পরিবর্তন অবশ্যই জরুরি।’
(এই প্রতিবেদন তৈরিতে সহায়তা করেছেন ময়মনসিংহের গৌরিপুর প্রতিনিধি আরিফ আহমেদ)