মারাকেশ আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের সর্বোচ্চ পুরস্কার ইতোয়াল দ’র (স্টার অব গোল্ড তথা স্বর্ণতারকা) জিতেছে ইরানের এমাদ আলেব্রাহিম দেহকোর্দি পরিচালিত ‘অ্যা টেল অব শেমরুন’। এর প্রেক্ষাপট সমকালীন তেহরান।
পুরস্কারটি স্বাধীনতার জন্য জীবনের ঝুঁকি নেওয়া ইরানের সব নারী ও তরুণ প্রজন্মকে উৎসর্গ করেছেন ৪৩ বছর বয়সী এমাদ আলেব্রাহিম দেহকোর্দি। ২২ বছর বয়সী মাহসা আমিনির মৃত্যুর পর থেকে দেশটির নারীরা অধিকার ও স্বাধীনতার জন্য আন্দোলন করে চলেছেন।
গত ১৯ নভেম্বর মারাকেশ উৎসবের ১৯তম আসরের সমাপনী অনুষ্ঠানে বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করেন বিচারকরা। ১ ঘণ্টা ৪২ মিনিট ব্যাপ্তির ‘অ্যা টেল অব শেমরুন’ ছবির গল্পে দেখা যায়, মায়ের মৃত্যুর পর বাবার সঙ্গে বসবাস করা দুই ভাই ঈমান ও পেয়ার নানা জটিলতায় ভুগতে থাকে। শহরের বিত্তবান যুবকদের সঙ্গে ওঠাবসার সুযোগে ঈমান সহজে টাকা আয়ের পরিকল্পনা করে। কিন্তু বাস্তবে তার পরিকল্পনার উল্টোটা ঘটে।
১৯তম মারাকেশ চলচ্চিত্র উৎসবের প্রতিযোগিতা বিভাগের বিচারকরা
১৯তম মারাকেশ চলচ্চিত্র উৎসবের প্রতিযোগিতা বিভাগের বিচারকরা
জুরি প্রাইজ যৌথভাবে পেয়েছে পর্তুগালের ক্রিস্তেল আলভিজ মেইরার ‘লিভিং সোল’ ও মরক্কোর মরিয়ম তুজানির ‘দ্য ব্লু কাফতান’।
‘থান্ডার’ ছবির সুবাদে সেরা পরিচালক হয়েছেন সুইজারল্যান্ডের কারমেন জাকি। ঊনিশ শতকের শুরুর দিকের প্রত্যন্ত পাহাড়ি গ্রামের গল্প রয়েছে এতে।
ইন্দোনেশিয়ার মকবুল মুবারকের ‘অটোবায়োগ্রাফি’ ছবিতে দারুণ কাজ করে সেরা অভিনেতার পুরস্কার জিতেছেন ৬৪ বছর বয়সী আর্সওয়েন্ডি বেনিং সোয়ারা।
কানাডার অ্যান্টনি শিমের পরিচালনায় ‘রাইসবয় স্লিপস’ ছবিতে অভিনয়ের সুবাদে সেরা অভিনেত্রী হয়েছেন দক্ষিণ কোরিয়ান তারকা চয় সুঙ-ইয়ুন।
এবার প্রতিযোগিতা বিভাগে ছিল ১৪ দেশের ১৪টি চলচ্চিত্র। ৯ দিন ধরে এগুলো দেখে এবং নিজেদের মধ্যে মতবিনিময়ের পর বিজয়ী তালিকা চূড়ান্ত করেন বিচারকদের প্রধান পাওলো সরেন্তিনো। তার নেতৃত্বে বিচারক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন জার্মান অভিনেত্রী ডিয়ানি ক্রুগার, ব্রিটিশ অভিনেত্রী ভ্যানেসা কার্বি, আমেরিকান অভিনেতা-প্রযোজক অস্কার আইজ্যাক, ফরাসি অভিনেতা তাহার রহিম, অস্ট্রেলিয়ান পরিচালক জাস্টিন কারজেল, লেবানিজ পরিচালক-অভিনেত্রী নাদিন লাবাকি, ডেনিশ পরিচালক সুজানা বেয়া এবং মরক্কোর পরিচালক লেয়লা মারাকশি।
সুইজারল্যান্ডের পরিচালক কারমেন জাকি
সুইজারল্যান্ডের পরিচালক কারমেন জাকি
বিভিন্ন দিক থেকে ১৯তম মারাকেশ আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব ছিল ব্যতিক্রম। করোনা মহামারি কাটিয়ে দুই বছর বিরতির পর আবারও এই আয়োজন দেখা গেছে। বিভিন্ন অংশে জনসাধারণের বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনা ছিল চোখে পড়ার মতো। দেড় লাখের বেশি দর্শক এবারের উৎসবে প্রদর্শিত ১২৪টি চলচ্চিত্র উপভোগ করেছে। এগুলোর প্রদর্শনী হয়েছে মারাকেশ পালে দে কংগ্রেস, সিনেমা ল্যঁ কোলিজে, প্লেস জেমা আল ফানা এবং মিউজে ইভ সাঁ ল্যঁহোতে।
এবারের আসর শুরু হয় গত ১১ নভেম্বর। এবারের উৎসবের উদ্বোধনী চলচ্চিত্র ছিল গালা স্ক্রিনিংয়ে নির্বাচিত মেক্সিকোর গুইয়ের্মো দেল তোরো ও মার্ক গাস্ট্যাফসন পরিচালিত ‘পিনোকিও’।
আয়োজকরা এবার উৎসবে অংশগ্রহণে আগ্রহী প্রায় ২০ হাজার জনকে অ্যাক্রেডিটেশন ও ইলেক্ট্রনিক ব্যাজ দিয়েছেন। ২০১৯ সালে অনুষ্ঠিত ১৮তম আসরে অ্যাক্রেডিটেশন নিয়েছিলেন এর অর্ধেক। ছোটদের জন্য আয়োজিত চলচ্চিত্র প্রদর্শনীতে অংশ নিয়েছে প্রায় পাঁচ হাজার শিশু-কিশোর।
মারাকেশ উৎসবে ইতোয়াল দ’র (স্টার অব গোল্ড) সম্মান পেয়েছেন বলিউড অভিনেতা রণবীর সিং, ৬১ বছর বয়সী ব্রিটিশ অভিনেত্রী টিল্ডা সুইনটন এবং ৭৪ বছর বয়সী মরক্কোর পরিচালক ফরিদা বেনিয়াজিদ।
আলাপে রুবেন অস্টলান্ড
আলাপে রুবেন অস্টলান্ড
উৎসবের অন্যতম আকর্ষণ ছিল দর্শকদের উপস্থিতিতে তারকা আড্ডা। এতে অংশ নেন রণবীর সিং, ব্রিটিশ অভিনেতা জেরেমি আয়রন্স, কান চলচ্চিত্র উৎসবে স্বর্ণপাম জয়ী ফরাসি পরিচালক জুলিয়া দুকুরনো, দু’বার স্বর্ণপাম জয়ী সুইডিশ পরিচালক রুবেন অস্টলান্ড, দু’বারের অস্কারজয়ী ইরানি পরিচালক আসগর ফারহাদি, ফরাসি অভিনেত্রী জুডি ডেলপি, মারিনা ফোয়াস, আমেরিকান পরিচালক-কবি জিম জারমাশ, ফরাসি পরিচালক লিওস কারাক্স এবং অস্কারজয়ী ফরাসি-লেবানিজ সংগীত পরিচালক গ্যাব্রিয়েল ইয়ারেদ।
উৎসবটি যথারীতি বিশ্ব চলচ্চিত্রের বৈচিত্র্য এবং নতুন প্রতিভা তুলে ধরেছে। অ্যাটলাস ওয়ার্কশপস কো-প্রোডাকশন মার্কেটে অনেক প্রযোজক-পরিচালক অংশ নিয়েছেন। তাদের নিয়ে অনুষ্ঠিত হয় ৩৫০টি বৈঠক। অ্যাটলাস ওয়ার্কশপস আটটি শাখায় ১ লাখ ৬ হাজার ইউরো পুরস্কার দিয়েছে।
অ্যাটলাস পোস্ট-প্রোডাকশন অ্যাওয়ার্ডস জিতেছে আমজাদ আল রশীদের ‘ইনশাল্লাহ অ্যা বয়’ (জর্ডান), লাক রাজানাজাওনার ‘ডিস্কো আফ্রিকা’ (মাদাগাস্কার) এবং বুবাকার সানগারে পরিচালিত ‘অ্যা গোল্ডেন লাইফ’ (বুরকিনা ফাসো)। অ্যাটলাস ডেভেলপমেন্ট অ্যাওয়ার্ডস দেওয়া হয়েছে সায়িদ হামিশের ‘দ্য সি ইন দ্য ডিস্ট্যান্স’ (মরক্কো), দানিয়া বেদেইর পরিচালিত ‘পিজিয়ন ওয়ারস’ (লেবানন), মামাদু দিয়ার ‘দেম্বা’ (সেনেগাল) ও কেটি লেনা এনডাই পরিচালিত ‘লেন্ডে’ (সেনেগাল)। আর্তেকিনো ইন্টারন্যাশনাল প্রাইজ পেয়েছে মিসরের সামেহ আলা পরিচালিত ‘হোয়েল বেলি’।